আহা, ডার্বির কী মহিমা! মোহনবাগানে তাঁর সেকেন্ড ইনিংসে এখনও সাফল্যের আলো ঢোকেনি। তবু করিম বেঞ্চারিফা বলছেন, “এই ম্যাচটা জিততে পারলেই মুছে যাবে আগের সব ব্যর্থতা।”
আহা, ডার্বির কী মহিমা! ফেডারেশন কাপের পরে আই লিগ জয়ের স্বপ্নও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। টান পড়ছে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসেও। তবু রহিম নবি বলছেন, “রবিবারের ম্যাচে কোনও টিমের সাম্প্রতিক ফর্ম নয়। ডার্বির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান কথা বলবে।”
মোহনবাগানের আর হারানোর কিছু নেই। শুক্রবার সাতসকালে তাই যুবভারতীতে গিয়ে দেখা গেল, ডার্বি, শুধু একটা ডার্বি জেতার জন্য কী পরিশ্রম করছেন ওডাফারা! মূলত ট্রেভর মর্গ্যানের দলের পাসিং ফুটবলই চিন্তা করিমের। যা ঠেকাতে অনুশীলনে জোর দেওয়া হল বল ছাড়া ফুটবলারদের জায়গা নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে। মোহনবাগানের জন্য সুখবর, চোট সারিয়ে দলে ফিরছেন নবি। এ দিনের অনুশীলন দেখে মনে হল রক্ষণে ইচে না থাকায় অগত্যা মেহরাজউদ্দিনকে দিয়েই কাজ চালানোর কথা ভাবছেন মরক্কোন কোচ।
ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর দৃশ্যপট অবশ্য সামান্য আলাদা। অনুশীলন সেরে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে লাল-হলুদ সমর্থকরা ঘিরে ধরছেন মর্গ্যানকে। গলায় আকুতি, “গত মরসুমে মোহনবাগানকে এক বারও হারাতে পারিনি আমরা। রবিবারের ডার্বি কিন্তু জিততেই হবে।” সমর্থকদের আবদার শুনছেন কিন্তু লাল-হলুদ কোচের মন যে তখন ইডেনের ক্রিজে। স্বমহিমায় তাণ্ডব চালাচ্ছেন অ্যালিস্টার কুক। আর তা জেনে ক্লাব তাঁবুতে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন লাল-হলুদের সাহেব কোচ। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টকে ঘিরে তাঁর মন্তব্য, “তার মানে আমরা ইডেন টেস্টটাও জিততে চলেছি।” |
নিঃশব্দে মর্গ্যানের পিছন দিয়ে মেহতাব হোসেন ক্লাবের স্নানঘরে ঢুকছেন। সেই দেখে লাল-হলুদ কোচও ড্রেসিংরুমের দরজার পেছনে লুকিয়ে পড়লেন। মেহতাব বেরোতেই লুকোচুরি খেলার ঢঙে চমকে দিলেন তাঁকে। চিডিদের ডেকে মজাও করছিলেন মেহতাবকে নিয়ে। পরে জানা গেল মেহতাব চুপি চুপি কোচদের স্নানঘরে ঢুকে পড়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ঢুকলেই ৫০০ টাকা জরিমানা। পুরোটাই মজা।
ওপরের দু’টো ঘটনাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে, ডার্বির আগে কতটা হালকা মেজাজে লাল-হলুদ ব্রিগেড। আসলে ডার্বির আগে ফুটবলারদের চাপমুক্ত রাখতেই মর্গ্যানের এই অভিনব টোটকা। যদিও অনুশীলনে একেবারে অন্য রূপে তিনি। কোনও ঢিলেমি নেই। শুক্রবার যেমন ছোট মাঠ করে তিনটি দলের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ খেলালেন অন্য দিনের মতোই। তবে রক্ষণে বাড়তি গুরুত্ব দিলেন মর্গ্যান। মুখে যাই বলুন না কেন, ডার্বিতে ওডাফাই যে বিপক্ষের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, সেটা বেশ ভাল ভাবেই জানেন সাহেব কোচ। ওডাফাকে আটকাতে ডাবল কভারিং রাখার কথা ঘুরছে মর্গ্যানের মাথায়।
রক্ষণ তো বটেই, স্কোরলাইন সচল রাখতে ফরোয়ার্ড লাইনকেও অন্য মোড়কে উপস্থিত করতে চাইছেন মর্গ্যান। চেনা চিডিকে আটকে দিয়ে যদি বাজিমাত করতে চান করিম, তা হলে ম্যর্গানের তুরুপের তাস হবেন মননদীপ সিংহ। পঞ্জাবি স্ট্রাইকারের এটাই প্রথম ডার্বি। তিন বছর আগে ডার্বির উন্মাদনাটা কলকাতায় বসে দেখেছিলেন। রবিবার তাঁর কাঁধেই গুরু দায়িত্ব। মননদীপ অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, “ডার্বিতে গোল করতে পারলে সেটা হবে অন্য রকম আনন্দ।” ডার্বি ম্যাচের কি মহিমা সেটা মননদীপকে বোঝাতে গিয়ে মেহতাব বললেন, “মনন তুই বলতেই পারিস রবিবারের খেলাটা রিয়াল বনাম বার্সার মতো।” মননদীপ ছাড়াও এবারের ডার্বিতে অভিষেক হচ্ছে অর্ণব মণ্ডলের।
যুবভারতীর এক কোণে ফিটনেস ট্রেনিং করতে করতে টোলগে ওজবে দুঃখ করছিলেন ডার্বিতে খেলতে পারবেন না বলে। ওডাফা-টোলগে যুগলবন্দি অবশ্য মরসুমের প্রথম ডার্বিতে হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সেটা যেমন ইস্টবেঙ্গলকে সুবিধা দেবে, অন্য দিকে তেমনই চাপে রাখবে মোহনবাগানকে। |