দূরবিনে পিচ দর্শন বোর্ড প্রেসিডেন্টের
‘ঘরের মাঠের সুবিধেটা আর কোথায় পেলাম’
খনও উত্তেজিত, কখনও বিতর্কিত কিউরেটরকে নিয়ে সতর্কতা জারি। কখনও আবার প্রবল কুসংস্কারে আছন্ন। শুক্রবার সাড়ে চার ঘণ্টার ইডেন সফরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন যা যা করে গেলেন...

সকাল ৯.১৫। ক্লাবহাউস...
ঝাঁ-চকচকে রুপোলি মার্সিডিজটা এসে দাঁড়াল একটু দূরে। দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন তিনি এন শ্রীনিবাসন। গন্তব্য, তিন তলার প্রেসিডেন্টস বক্স। অ্যালিস্টার কুক তখন দেড়শোর দিকে।

৯.৩০। সিএবি প্রেসিডেন্টস বক্স...
পকেট থেকে বেরিয়ে আসছে বাইনোকুলার। বক্সে বসা সিএবি কর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ। প্রেসিডেন্ট সাহেব করছেন কী? কী আবার, পিচ দেখছেন! মিনিট দু’য়েকের পর্যবেক্ষণ এবং অস্ফুটে বলে ফেলা, “এ তো দেখছি একেবারে পাটা পিচ। স্পিনাররা কী করবে এখানে?”

বেলা ১০.০০। প্রেসিডেন্টস বক্স...
সবে এক সিএবি কর্তা ঢুকে কথা বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই বোর্ড প্রেসিডেন্টের দাঁত খিঁচুনি, “আরে, এটা যা হয়েছে, সে তো একটা গুড ওয়ান ডে পিচ। মোটেই টেস্ট উইকেট নয়।” সিএবি কর্তা কোনও মতে বলতে গেলেন, “আপনার জন্য তো কপোর্রেট বক্স আছে। সেখানে চলুন না।” কে জানত, বোর্ড প্রেসিডেন্টের কুসংস্কারের বাতিক ইডেনেও চলবে। অনুরোধ শুনে দিব্য উত্তর, “না, না। কোথাও যাচ্ছি না আমি। এখানেই বসে দেখি ক’টা উইকেট ফেলতে পারি। যা পিচ বানিয়েছেন তাতে হোম অ্যাডভান্টেজ বলে কিছু নেই।
তুকতাকে কিছু হয় কি না দেখি!”

১০.১৫। ক্লোজড ডোর মিটিং...
নির্বাচক প্রধান সন্দীপ পাটিল ও দক্ষিণাঞ্চল নির্বাচক রজার বিনি গুটিগুটি ঢুকতেই নির্দেশ এখানে নয়, কোণার বক্সে চলো। ক্যাপ্টেন- কোচের সঙ্গে একদফা কথা হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে ডিনার টেবিলে। এ বার নির্বাচকদের সঙ্গে একান্তে একদফা। বোর্ড প্রেসিডেন্ট বিরক্ত দু’টো ব্যাপারে। এক, ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরনে। বিশেষ করে বিরাট কোহলি। দুই, পরের পর ইনিংসে বড় স্কোর তুলতে ব্যর্থ হওয়া। প্রশ্ন ইডেনের মতো ব্যাটিং ট্র্যাকেও কেন উঠবে মাত্র ৩১৬? ততক্ষণে ইশান্ত ফেলে দিয়েছেন কুকের লোপ্পা ক্যাচ।
কুক রান আউট ১৯০। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
১১.৪৫। ভিভিআইপি লাঞ্চ রুম...
টিম ইন্ডিয়া আবার মাঠে। ক্লাবহাউসের তেতলায় খাবারের প্লেট হাতে তখন শ্রীনিবাসন। সঙ্গে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। এবং শ্রীনিবাসনের ছোটখাটো বিস্ফোরণ, “আপনার কিউরেটরকে সামলান। উনি তো বোর্ডকেই অপমান করছেন। ওঁর অহেতুক কথাবার্তায় আমাদের অপদস্থ হতে হচ্ছে ব্রিটিশ মিডিয়ার কাছে।”

দুপুর ১.০০। প্রসঙ্গ-প্রবীর...
হাতের কাছে পাওয়া গেল ইডেন কিউরেটরকে এবং শ্রীনিবাসনের অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ক্ষিপ্ত প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের হাতেগরম ‘কোট’, “আমি কথা বলব কি বলব না, সেটা কি শ্রীনিবাসন ঠিক করে দেবেন? ভারতবর্ষে বাস করি ভাই। ওঁর পিচ নিয়ে সমস্যা থাকলে আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন না। সরিয়ে দিলে, দেবে।”

১.৪৫। ক্লাবহাউসের সিঁড়ি...
ঝড়ের গতিতে নেমে আসছেন তিনি। বিকেল চারটেয় ফ্লাইট। প্রবীরের পালটা কানে যায়নি। কিন্তু সাংবাদিকদের ঝাঁক থেকে প্রশ্ন এল, আপনি নাকি ইডেন পিচকে দেখে বলেছেন ভাল ওয়ান ডে উইকেট? শুনে একগাল হাসি, শেষে শ্রীনিবাসনের উত্তর, “পিচ নিয়ে আমি কখনও কিছু বলি না। আজও বলিনি। আমি তো টেকনিক্যাল লোকই নই।”
সমবেত মিডিয়াকুল ‘বোল্ড’। শ্রীনিবাসনের মার্সিডিজ সটান এয়ারপোর্টের দিকে।

ক্যাপ্টেন কুকের ‘জাহাজ ডুবি’
অ্যালিস্টার কুকের ১৯০ রানের ইনিংস শুক্রবার ইডেনে এক অভিনব রান আউটে শেষ হয়। যে আউট নিয়ে বাংলার আন্তর্জাতিক আম্পায়ার অলোক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুকের সতীর্থ জোনাথন ট্রটের মন্তব্য নিয়ে তথ্য সংকলন করলেন সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়।

সেই মুহূর্ত
জাহির খানের বল অন সাইডে পুশ করেছিলেন পিটারসেন। কুক রান নেওয়ার জন্য নন স্ট্রাইকিং এন্ড থেকে বেরিয়েছিলেন। স্কোয়ার লেগ থেকে ছুটে বিরাট কোহলি একই অ্যাকশনে বল তুলে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের উইকেট লক্ষ্য করে ছোড়েন। বল তাঁর শরীরে আসছে দেখে আঘাত এড়াতে কুক ক্রিজের সামনে থেকেও ব্যাট না নামিয়ে সামান্য লাফিয়ে ওঠেন। ততক্ষণে বিরাটের সরাসরি থ্রো উইকেট ভেঙে দিয়েছে।

আইন বলছে
পরিষ্কার আউট। কুক যদি ব্যাট ‘ক্রিজ’ করে তার পরে বলের আঘাত থেকে বাঁচতে ক্রিজের বাইরেও থাকতেন, তা হলে রান আউট হতেন না। কারণ সেটা হত, বলের আঘাত থেকে শরীর বাঁচাতে ন্যায্য সরে যাওয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, ব্যাট ক্রিজ না করায় কুকের ‘রি-অ্যাকশন’ আম্পায়ারিং আইন অনুসারে ন্যায্য নয়।

ড্রেসিংরুমে ফিরে অধিনায়কের মুড
খুবই বিমর্ষ ছিলেন কুক। বারবার বলতে থাকেন “স্ট্রেঞ্জ আউট।” তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও রকম বিরক্তি প্রকাশ করেননি। মাঠের মতোই ড্রেসিংরুমে ফিরেও। কুকের আরও হতাশা বৃদ্ধির কারণ, মাত্র ১০ রানের জন্য ইডেনের আশি বছরের টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় বিদেশি ক্রিকেটার (প্রথম জন আটান্নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোহন কানহাই-এর ২৫৬) হিসেবে তিনি ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেন।

কুককে কি ফেরত আনা যেত
মাঠের আম্পায়ারদ্বয় থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে নির্দেশ পাঠান। টিভি রিপ্লে দেখে আউট দেওয়া হয় কুককে। ধোনি ইচ্ছে করলে কুককে ডেকে আনতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে ক্রিকেটের কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি তিনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.