|
|
|
|
|
|
বেআইনের শহরে |
হাত বাড়ালেই পার্কিং |
দেবাশিস দাশ ও সুপ্রিয় তরফদার |
বলা হয় কলকাতার যমজ শহর। তৈরি হয়েছে কমিশনারেট। যান চলাচলের নিয়ম কড়া হয়েছে। কিন্তু আজও হাওড়া শহরের কোথাও সরকারি ভাবে ঘোষিত পার্কিং জোন নেই। ফলে গোটা শহরটাই কার্যত পার্কিং জোনে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ, এখানে যত্রতত্র বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্ক করা থাকে। অসুবিধায় পড়েন বাসিন্দা ও পথচারীরা।
তাঁদের অভিযোগ, শহরের ব্যস্ত রাস্তার ধারে, দোকানের সামনে, ফুটপাথের উপরে গাড়ি পার্ক করা থাকছে। সবই চলছে পুলিশের চোখের সামনে। যেমন, মহাত্মা গাঁধী রোড দিয়ে হাওড়া পুরসভার দিকে আসার পথে পুরসভার গেটের উল্টো দিকে দু’চাকা ও চার চাকার গাড়ি লাইন গিয়ে পার্ক করা থাকে। সোম থেকে শুক্রবার লাইন বেশি দীর্ঘ হয়। ওই সব দিনে বাসস্টপের সামনেও গাড়ি পার্ক করা থাকে। ফলে বাসে উঠতে-নামতে খুব অসুবিধা হয়। |
|
প্রায় একই অবস্থা শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান চত্বরেরও। এমনিতেই মেট্রো রেলের কাজ চলায় নিত্য যানজট হয়। এর উপরে বঙ্কিম সেতু ও জিটি রোডে বাস, ম্যাটাডর, ছোট ট্রাক পার্ক করায় তীব্র যানজট হয়। রামরাজাতলার বাসিন্দা সুশীল দত্ত বলেন, “প্রতি দিন এই জায়গায় পার্কিংয়ের জন্য বাসে উঠতে সমস্যা হয়। পুলিশের চোখেও পড়ে না!” একই অভিজ্ঞতা হাওড়া বিজয়কৃষ্ণ গালর্স কলেজের ছাত্রী সায়নী দত্তের। তাঁর কথায়: “বঙ্কিম সেতুর নীচে পার্কিংয়ের জন্য কলেজ থেকে বেরিয়ে হাঁটাই দায়। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।”
হাওড়া ময়দান ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সুরজিৎ সাহার অভিযোগ, “হাওড়ায় কোনও পার্কিং জোন ঠিক না করেই কিছু কিছু জায়গায় ‘নো-পার্কিং’ করা হয়েছে। ফলে ক্রেতারা ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন। অনেকে রাস্তার উপরেই গাড়ি রাখছেন।” ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের খালের পাশে মালবাহী গাড়ি পার্ক করা থাকে। অভিযোগ, এখানেও পার্কিং বেআইনি। তা ছাড়া ইছাপুর, শিয়ালডাহা এলাকার রাস্তার পাশে পার্কিং নিয়েও দীর্ঘ দিন অভিযোগ রয়েছে। বাসিন্দারা জানান, সব থেকে খারাপ অবস্থা হাওড়ার ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোডের। অভিযোগ, উত্তর ও দক্ষিণ হাওড়ার সংযোগকারী এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্ক করা থাকে। এমনকী, শিবপুর ট্রামডিপো, সালকিয়া, সত্যবালা হাসপাতালের সামনে জিটি রোডের এক পাশ দখল করে বাস দাঁড়িয়ে থাকে। |
|
পার্কিং জোন চিহ্নিত করা হচ্ছে না কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, প্রায় এক বছর আগে হাওড়া পুরসভার কাছে পার্কিংয়ের জন্য ১৩টি রাস্তার বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে কয়েকটি মার্কেট কমপ্লেক্সের নীচে ভূগভর্স্থ পার্কিং জোন করার জন্য প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট উদ্যোগী হননি। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় মুকুন্দ রানাডে বলেন, “আমরা পুরসভার কাছে ১৩টি রাস্তার বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত পাঠিয়েছিলাম। এতে যানজট কমত। পার্কিংয়ের সমস্যাও মিটত। কিন্তু পুরসভা আজ পর্যন্ত কিছু করেনি।”
পুলিশ কমিশনারের অভিযোগ, “কিছু লোক বেআইনি ভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে অর্থ আদায় করছে।” হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “আমরা কিছু ব্যবস্থা নিইনি, এ কথা ঠিক নয়। ১৩টি রাস্তা থেকে পার্কিং ফি আদায়ের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। কাজ চলছে। বেআইনি ভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাইনি। তবে এখনই ভূগর্ভস্থ পার্কিং জোন তৈরি করা সম্ভব নয়। পুরসভার সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।” |
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
|
|
|
|
|