|
|
|
|
রায় পটনা হাইকোর্টের |
উপাচার্য নিয়োগ খারিজ, কোণঠাসা রাজ্যপাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা |
এ বার হাইকোর্টের রায়েও কোণঠাসা হলেন বিহারের রাজ্যপাল দেবানন্দ কোঁয়ার। রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে তাঁর আচার্যের পদ ব্যবহার করে রাজ্যপাল উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন। হাইকোর্ট সেই নিয়োগ খারিজ করে দিয়েছে। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় উপাচার্য ও চার সহ-উপাচার্যের নিয়োগকে বাতিল করে দিয়ে পটনা হাইকোর্ট তাদের রায়ে জানিয়েছে, রাজ্যপাল এই পদগুলিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও
|
নীতীশ কুমার |
|
দেবানন্দ কোঁয়ার |
আলোচনা না করেই নিয়োগ করেছেন। যা বিহার বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিরোধী। হাইকোর্টের রায়ে রাজ্যপালকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ৩০ দিনের মধ্যে ওই পদে নতুন করে নিয়োগ করতে হবে।
বিহারের দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিন পর থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে নীতীশ সরকারের টানাপোড়েন শুরু হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার-রাজ্যপাল মতানৈক্য চলতে থাকলেও তা চরমে পৌঁছয় উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে। রাজ্যপাল উপাচার্য পদে সরকারের সুপারিশকে অগ্রাহ্য করে নিয়োগ করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী প্রশান্ত কুমার শাহি প্রকাশ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। সরাসরি জানান, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজ্যপালের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। নীতীশ এই ব্যাপারে মুখ না খুললেও রাজ্যপালের সূত্রে দাবি করা হয়, বিতর্ক মিটে গিয়েছে। বিতর্ক যে মেটেনি তা প্রমাণ হয় হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের হওয়ার পর। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারের পক্ষে হলফনামা পেশ করা হয়। সেই মামলার রায়েই আজ প্রায় স্পষ্ট করে দেওয়া হল, রাজ্যপাল আচার্য হলেও অধিকারের সীমা তিনি লঙ্ঘন করেছেন।
আজ দিল্লি থেকে পটনায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, “রাজ্য সরকার আগেই তাদের বক্তব্য হাইকোর্টকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল। এই নিয়ে এখন আর আমি কিছু বলতে চাই না।” বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা ভালো রাখতে উপাচার্যদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ভালো বোঝাপড়ার যে প্রয়োজন তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুই তরফে মত পার্থক্য থাকলে সমস্যার সমাধান হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে গেলে পরস্পরের সহযোগিতার প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ীই সকলের চলা উচিত। রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন-সহ সব ব্যাপারে উন্নয়ন চায়। রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে সচেষ্ট।” শিক্ষামন্ত্রী শাহি বলেন, “রাজ্য সরকার আদালতের রায়কে সম্মান জানাবে। আদালতের রায় মেনে যা করার তা করা হবে।”
গত জুনে অ্যাকাউনট্যান্ট জেনারেল (এজি)-র রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই পদগুলিতে বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগের সময় রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। যদিও সেই সময় রাজ্যপালের অফিস থেকে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্যপাল এই নিয়োগ করেছেন। রাজ্য সরকার রাজ্যপালের এই বিবৃতিকে তখন সমর্থন করেনি। রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যপালের অফিস থেকে জারি করা ওই বক্তব্যকে অস্বীকার করে বলা হয় রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না মেনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই সব পদে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিহার রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৬ সালের আইনে বলা আছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।
হাইকোর্টের আজকের রায়ে পটনা বিশ্ববিদ্যালয়, বি আর আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়, জয় প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়, বি এন মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়, কামেশ্বর সিংহ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৌলানা মজরুল হক আরবি ও ফারসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় উপাচার্যের নিয়োগকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিএন মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়, পটনা বিশ্ববিদ্যালয়, বীর কুঁয়ার সিংহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৌলানা মজরুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার সহ-উপাচার্যের নিয়োগও এই রায়ে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজ্যপালের নাম এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছে। মাস কয়েক আগে এজি তাদের অডিট রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া রাজ্যপাল দেশের নানা জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। এর জন্য ১ কোটি ৪৮ লক্ষ্য টাকা রাজ্যপালকে ফেরত দেওয়ার জন্য এজি সুপারিশ করে। এ ছাড়াও তাঁর দফতরে কর্মী নিয়োগ নিয়েও অডিট রিপোর্টে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা হয়েছিল।
|
|
|
|
|
|