মাস ছয়েকের শিশুটি ভুগছে শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনিতে। কিন্তু সে অভিভাবকহীন। তাই তাকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
শিশুটি বেশ কিছু দিন ধরে আরামবাগ হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেখান থেকেই গত ৩০ নভেম্বর তাকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ আরামবাগ হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার এবং উপাধ্যক্ষ অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “অভিভাবক ছাড়া ৫-৬ মাসের শিশুকে ভর্তি করা যাবে না। এটাই নিয়ম। সেই নিয়ম অনুযায়ীই আমাদের চলতে হয়েছে।” কিন্তু ঘটনাটিকে বাঞ্ছনীয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। |
গত ১০ নভেম্বর ওই শিশুটিকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিজেকে লক্ষ্মণ সোরেন পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালে শিশুটির নাম লেখানো হয় সোনালি সোরেন। কিন্তু তার পরে বেপাত্তা হয়ে যান লক্ষ্মণ। হাসপাতালের নথিতে তিনি বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন বাঁকুড়ার কোতুলপুর। কিন্তু সেখানে তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। তখন থেকে শিশুটি আরামবাগ হাসপাতালের পরিচর্যাতেই রয়েছে। ভর্তির সময়ে শিশুটির শ্বাসকষ্ট এবং মৃগীর উপসর্গ ছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর সকালে খিঁচুনি শুরু হওয়ায় আরামবাগ হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। অ্যাম্বুল্যান্সে করে কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী শিশুটিকে সেখানে নিয়ে গিয়েও ভর্তি করাতে পারেননি।
নির্মাল্যবাবু বলেন, “আমাদের হাসপাতালের চেয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে আরও ভাল চিকিৎসা হত। তাই শিশুটি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্মতি পেয়েই পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু শিশুটিকে ভর্তি করা হল না। অভিভাবক ছাড়া ভর্তি করানো যাবে না জানিয়ে তৎক্ষণাৎ ফেরত পাঠানো হল। সমস্ত বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।”
বর্ধমান মেডিক্যালের কর্তাদের বক্তব্য, তাঁরা শুধু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চলেছেন। কিন্তু যে শিশু অনাথ তার চিকিৎসার কী হবে? কোনও উত্তর মেলেনি অসিতবরণবাবুর কাছে। তিনি বলেন, “জানি না।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ ভাবে ৫-৬ মাসের শিশুর সঙ্গে অভিভাবককে থাকতে হয়। কিন্তু কোনও শিশু অনাথ হলে তো কিছু করার নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে তা বাঞ্ছনীয় নয়। ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসও বলেন, “বর্ধমান মেডিক্যাল এ ভাবে অনাথ শিশুকে ফিরিয়ে দিয়ে ঠিক করেনি।” |