বছর পেরোতে চলল আমরি-কাণ্ডের। আর এতদিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র আশ্বাস দিলেন, “এ বার আমরা অভিযানে নামব।”
আমরি-কাণ্ডের পরে দীর্ঘদিনের চাপা পড়া হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নাড়া খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ওই পর্যন্তই। এখনও জেলার প্রায় নব্বই শতাংশ নার্সিংহোমই দমকলের কাছ থেকে ছাড়পত্র (এনওসি) নেয়নি। প্রশাসনও যে হাত গুটিয়েই বসে রয়েছে, সিএমওএইচের কথাতেই তা স্পষ্ট।
আমরির ঘটনার পরেই সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছিল, প্রতিটি নার্সিংহোমে প্রশস্ত সিঁড়ি, নীচের তলা এবং ছাদে জলাধার থাকতে হবে। এ ছাড়াও জলের পাইপ লাইনের ব্যবস্থা, শয্যা অনুপাতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা-সহ ১৬-২০টি নির্দেশ ছিল। বাস্তবে অবশ্য এই সব নির্দেশের ধার ধারে না নার্সিংহোমগুলি। ছাড়পত্র ছাড়াই দিব্যি চলছে তারা। নতুন নার্সিংহোম যেমন হচ্ছে, তেমনই দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে লাইসেন্সের নবীকরণ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “দমকলের কাছ থেকে এনওসি না পেলে লাইসেন্স নবীকরণ করার কথা নয়। লাইসেন্স দেন স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের আধিকারিকরা। যদি দমকলের এনওসি ছাড়াই লাইসেন্স নবীকরণ হয়ে থাকে তার দায় স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরই। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।”
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্রের কথার সঙ্গে সঙ্গতি নেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্যের। |
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “কিছু কিছু নার্সিংহোম দমকলের কাছে আবেদন করেছে। এখন এনওসি ছাড়াই নবীকরণ করা হচ্ছে। তবে তাঁদের কাছে লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁরা দমকলের সব নিয়ম মেনে চলবেন।” কিন্তু সরকারি ভাবে নির্দেশ জারি হলেও এনওসি ছাড়া কেনই বা দেওয়া হচ্ছে নার্সিংহোম চালানোর ছাড়পত্র? সবিতেন্দ্রবাবু বলেন, “সবাইকে দ্রুত এনওসি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ বার অভিযানেও নামব। নিয়ম না মানা হলে নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া হবে।” কিন্তু এনওসি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না কেন? তিনি বলেন, “কড়াকড়ি করলে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। জেলায় বেশিরভাগ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই এখনও এনওসি নেয়নি। তাই কিছু দিন সময় দিয়েছি। সময়সীমার মধ্যে না হলে বন্ধ করে দেব।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় বেসরকারি নার্সিংহোমের সংখ্যা খাতায়-কলমে ১২৩। মেদিনীপুর শহর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটালে রীতিমতো রমরমা এদের। তবে অভিযোগ, জেলা শহর ও রেল শহর বাদ দিলে বাকি নার্সিংহোমগুলি ১০-২০ শয্যার। অথচ প্রতিটি নার্সিংহোমেই অনেক বেশি রোগী ভর্তি নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় কিছু নার্সিংহোম প্রাথমিক কিছু শর্ত মেনে আবেদন করেছেন। একাধিক নার্সিংহোম অস্থায়ী লাইলেন্সও পেয়েছেন। তবে তা নেহাতই অল্প বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
নার্সিংহোমের মালিকেরা আবার অন্য কথা বলছেন। শহরের এক নার্সিংহোমের ম্যানেজার দীপক দুবের অভিযোগ, “আবেদন করলেও এখনও দমকলের কাছ থেকে কোনও এনওসি পাইনি।” ডেবরার এক নার্সিংহোমের মালিক তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কালীপদ জানা বলেন, “চেষ্টা করছি যাতে সব সদস্যই সরকারি নিয়ম মেনে চলে। একাধিকবার বৈঠকও হয়েছে। কিছু সদস্য আবেদন করে অস্থায়ী লাইসেন্সও পেয়েছেন। তবে বেশিরভাগই হয়নি।” ঘাটালের এক নার্সিংহোমের মালিক তথা ঘাটাল মহকুমা নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা সরকারি নিয়ম মেনে চলব তবে গ্রামাঞ্চলের ছোট নার্সিংহোমগুলির ক্ষেত্রে সরকারি শর্ত লঘু করা হোক।” মেদিনীপুর শহরের এক নার্সিংহোমের মালিক দেবল দত্ত বলেন, “এখনও একশো শতাংশ নিয়ম মেনে চলতে পারিনি। তবে আবেদন করায় কিছু শর্তসাপেক্ষে দমকল অস্থায়ী ছাড়পত্র দিয়েছে।” |