|
|
|
|
সরকারি প্রতিনিধি ছাড়াই চলছে পরিচালন বোর্ড |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
এক টাকায় জমি দিয়েও অগ্নিকাণ্ডের পরে আমরি হাসপাতালের দিকে আর চেয়ে দেখছে না রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
আমরির পরিচালন বোর্ডে স্বাস্থ্য দফতরের দুই প্রতিনিধি অবসর নেন অগ্নিকাণ্ডের ছ’মাসের মধ্যেই। এর পরে আর কাউকে ওই পদে পাঠায়নি রাজ্য। যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল চলবে, এই শর্তে আমরিকে মাত্র এক টাকায় জমি দেওয়া হলেও এখন পরিচালন বোর্ডে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি নেই। রাজ্যের নজরদারি ছাড়াই চলছে আমরি।
শুধু তা-ই নয়, আমরির অগ্নিকাণ্ডের পরে স্বাস্থ্য দফতরের তৎকালীন উপ-স্বাস্থ্য অধিকর্তার (প্রশাসন) নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করে আমরির ঘটনায় আলাদা তদন্ত শুরু করার কথা ছিল। এক বছর পরেও তা শুরু হয়নি। আমরি যৌথ হাসপাতাল বলেই স্বাস্থ্য দফতর উৎসাহ হারিয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। স্বাস্থ্য দফতরের এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের মন্তব্য, “রাজ্য সরকারের তদন্তে স্বাস্থ্য-বিধি সংক্রান্ত ত্রুটি ধরা পড়লে স্বাস্থ্য দফতর তা এড়াতে পারত না। কারণ, হাসপাতালটি ছিল যৌথ উদ্যোগের।”
কেন স্বাস্থ্য দফতর তদন্ত শুরু করে বন্ধ করে দিল? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আর কী হবে? পুলিশ যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রচুর মামলা, ধরপাকড় হয়েছে। এর পরে স্বাস্থ্য দফতরের আর কিছু করণীয় নেই। স্বাস্থ্য দফতর ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে আমরির লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছিল, সেটাই ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যস, আর কিছু নয়।”
আমরির পরিচালন বোর্ডে নিজেদের প্রতিনিধি না পাঠানোয় অন্য একটি প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, ওই হাসপাতাল তৈরির সময়ে রাজ্য সরকার আমরি-কর্তৃপক্ষকে ১ টাকায় জমি দিয়েছিল। জমি দেওয়ার শর্ত হিসেবে ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলেন রাজ্য সরকারের একাধিক প্রতিনিধি। স্বাস্থ্য দফতরের এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার বলেন, “তখনই ঠিক হয়, যৌথ মালিকানাধীন সংস্থা তৈরি হবে। পরিচালন বোর্ডে সরকারের একাধিক প্রতিনিধি থাকবেন। সংস্থায় সেলামির টাকা সরকারের শেয়ার হিসেবে দেখানো হবে। আমরিকে শুধু খাজনা দিতে হবে এবং ১০ শতাংশ শয্যায় গরিব রোগীর নিখরচায় চিকিৎসা করতে হবে।”
প্রথমে প্রাপ্ত সেলামি হিসেবে আমরির অংশিদারিত্ব ছিল ২৬ শতাংশ। তার পরে আমরি কর্তৃপক্ষ ক্রমশ তাঁদের মূলধন বাড়িয়ে গেলেও স্বাস্থ্য দফতর তাদের মূলধন আর বাড়ায়নি। ফলে তাদের অংশীদারিত্ব কমে দাঁড়ায় ১.৯ শতাংশ। যখন অগ্নিকাণ্ড ঘটে, সেই সময়ে বোর্ডে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তৎকালীন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্পেশাল সেক্রেটারি সুকুমার ভট্টাচার্য ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের দায় চাপিয়ে বোর্ডের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা ছাড় পেয়ে যান।
এর পরে দু’জনেই চাকরি থেকে অবসর নেন। কিন্তু তাঁদের বদলে আমরির বোর্ডে আর কোনও সদস্য দেয়নি স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, কোর্টকাছারির ঝামেলায় পড়ার ভয়ে এখনকার স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বা কোনও সচিব আর বোর্ডে থাকতে চাইছেন না। বর্তমান স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তবাবুর কথায়, “মাস দু’য়েক আগেও ওরা বোর্ডের নতুন কিছু রেজোলিউশন-এর প্রতিলিপি পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমরা আগ্রহ দেখাইনি। আগে আমরি মুচলেকা দিক যে, বোর্ডে থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু ঘটলে তার দায় আমাদের থাকবে না, তবে ভেবে দেখব।”
কিন্তু বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি না-থাকলে সরকারের প্রাপ্য অংশীদারিত্বের কী হবে? ওই জমির উপরে স্বাস্থ্য দফতরের অধিকারেরও বা কী হবে? আমরির পক্ষে শ্রবণ তোদি বলেন, “আগের সরকারি প্রতিনিধিরা অবসর নেওয়ার পরেই ওঁদের নতুন নাম জানানোর কথা। ওঁরা তার পর থেকে আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। ওঁরা কী চাইছেন, সেটা ব্যাখ্যাও করেননি।” স্বাস্থ্য দফতরের তরফে স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী সকলের একই বক্তব্য, “আমরা কিছু জানি না। যা হওয়ার মহাকরণ থেকে হবে।” |
|
|
|
|
|