নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
আইএমএ-র ভোটে জলপাইগুড়ি ও জঙ্গিপুর দু’জায়গায় বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকেরা ভাল ফল করেছেন। দুটি জেলায় আইএমএ-এর ভোট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন যে দু’জন, ফল প্রকাশের কিছু দিন পরে তাঁদের বদলি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্ত ও জঙ্গিপুর হাসপাতালের চিকিৎসক রমেশ চক্রবর্তীকে দ্রুত অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পান্থবাবুকে বাঙ্গুর হাসপাতালের আইটিইউতে এবং রমেশবাবুকে দ্রুত নদিয়ার জেলা হাসপাতালে তলে যাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠনের তরফে এ দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “এর থেকে বড় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে? আমরা এর প্রতিবাদে আন্দোলন করব।” ওই সংগঠনের অভিযোগ, বদলার রাজনীতির জন্য পরিবর্ত চিকিৎসক না দিয়ে দু’জনকে সরানো হয়েছে। সাধারণত কোনও হাসপাতালে চিকিৎসকের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলেও তড়িঘড়ি অন্য জায়গা থেকে চিকিৎসক পাঠানো হয়। কিন্তু জলপাইগুড়ি এবং জঙ্গিপুর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেখান থেকে দু’জন চিকিৎসককে তুলে নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে বলে অভিযোগ করছে বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাদের বদলি না করে জরুরি ভিত্তিতে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, পান্থবাবু এবং রমেশবাবু দুজনেই বাম প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন আসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরের রাজ্য স্তরের নেতা। পান্থবাবু সংগঠনের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি এবং রমেশবাবু যুগ্ম সম্পাদক। গত ১৯ নভেম্বর আইএমএর রাজ্য কমিটির নির্বাচনে জলপাইগুড়ি শাখার ভোট নেওয়া হয়। বামপন্থী সংগঠনের প্রার্থীরা সেই ভোটে জিতেছেন। একই ভাবে ২০ নভেম্বর আইএমর জঙ্গিপুর শাখা কমিটির ভোটে বামপন্থীরা ভাল ফল করে। সম্পাদক পদে গতবার তৃণমূল প্রার্থী জিতলেও এ বার টাই হয়। এর পরে ২২ নভেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের আইটিইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক পান্থবাবু ও জঙ্গিপুর হাসপাতালের চিকিৎসক রমেশবাবুকে বদলি করা হয়।
তবে ওই বদলির নির্দেশের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এগুলি সবই প্রশাসনিক স্তরের সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয় নেই। মানুষকে পরিষেবা দিতে এবং সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন চালাতে প্রশাসনিক ভাবে যে পদক্ষেপ প্রয়োজন তাই করা হয়েছে।” কিন্তু, ওই দুই শিক্ষকের জায়গায় কাউকে পাঠানো হয়নি কেন? জবাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায়ও ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “পান্থ দাশগুপ্ত এক সময়ে সদর হাসপাতালের আইটিইউ তৈরিতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। সেটা ভাল ভাবে চালাচ্ছেন। এটা সকলেই জানেন। জলপাইগুড়িতে পান্থবাবুর থেকেও দীর্ঘ দিন আছেন এমন, অনেক চিকিৎসক আছেন। তাঁদের বদলি করা যেত। যাই হোক আমি এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় স্বাস্থ্য দফতরে অনুরোধ করব।” |