নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জেলা-সফর সেরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তাঁর দলনেত্রী ফিরে আসার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও ডাক পাননি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বরং, কর্মী সংগঠনে তাঁর গুরুত্ব কমানোর ইঙ্গিত ফুটে উঠতে শুরু করেছে। ঘটনার জল যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে তৃণমূলের অন্দরে এই বর্ষীয়ান শ্রমিক-নেতার অনুগামীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের অনুগামী সংগঠনেরই এক দল সদস্যের হাতে শোভনদেববাবু নিগৃহীত হয়েছিলেন। অপমানিত ও ক্ষুব্ধ সরকারি মুখ্য সচেতকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া সফরের পরে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ডাকেননি। তাঁর অনুগামীদের একাংশের অনুমান, তৃণমূল নেত্রী আর শোভনদেববাবুকে ডাকতে চান না। দলনেত্রী চাইছেন, শোভনদেববাবুই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে দেখা করুন। কিন্তু তিনি যে তা করবেন না, তা অনুগামীদের জানিয়ে রেখেছেন শোভনদেববাবু।
এক দিকে যখন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে উপেক্ষা চলছে, পাশাপাশিই নিগ্রহ-কাণ্ডের অকুস্থল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মী সংগঠনের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে শোভনদেববাবুর অনুগামীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী ভবনে এক অনুষ্ঠানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং দলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতি। এই সংগঠনের নেতার হাতেই শোভনদেববাবু নিগৃহীত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এখন রাতারাতি ওই সংগঠনের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি।’ সংগঠনের নামের আগে তৃণমূলের নাম বসানোর মধ্যে দিয়েই শোভনদেববাবুর নেতৃত্বাধীন সংগঠনের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, এর ফলে প্রকারান্তরে ওই সংগঠনটিকেই প্রকৃত তৃণমূলের অনুগামী হিসাবে দেখানো হচ্ছে বলে শোভনদেব-শিবিরের ধারণা।
শোভনদেববাবুর অনুগামীদের নেতৃত্বাধীন ‘অল বেঙ্গল ইউনির্ভাসিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “শিক্ষাবন্ধু সমিতির নামের সঙ্গে তৃণমূল শব্দ যে জোড়া হল, সেটা সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট অনুসারে কতটা আইনসিদ্ধ?” বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপ বন্ধ রাখার জন্য দল থেকে নির্দেশ সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ওই সংগঠনের ব্যানার, পোস্টার কী ভাবে লাগানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও সমীরবাবুর অভিযোগ, “গণসংগঠনে পার্টির নাম অন্তর্ভুক্ত করতে দলীয় নেতৃত্বই নিষেধ করেছিলেন। তার পরেও কী ভাবে এই নামকরণ হয়? শিক্ষাবন্ধুর প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনের। এটাও কী ভাবে হয়?”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টিকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেন না। প্রশ্নের জবাবে মুকুলবাবু এ দিন স্পষ্টই বলেন, “সংগঠনের নামের সঙ্গে তৃণমূল শব্দটি লেখায় কী সমস্যা হয়েছে! আমাদের দলের নাম তো তৃণমূল কংগ্রেস। সেটা তো লেখা হয়নি!
আর তৃণমূল ভবনে ‘গ্রাসরুট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন’-সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন আছে। ফলে, শিক্ষাবন্ধু সমিতি যদি তাঁদের কার্যালায়ের ঠিকানা তৃণমূল ভবন দেন, তাতে আপত্তির তো কিছু নেই।” প্রশ্ন করায় দোলা অবশ্য পরিষ্কার বলেছেন, “শিক্ষাবন্ধু সমিতির সঙ্গে আমি যুক্ত নই। ফলে, এই বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।”
মুকুলবাবুর সুরেই ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক মন্মথরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস। আর আমরা তৃণমূল কথাটি সংগঠনের নামের সঙ্গে যুক্ত করেছি। দু’টির মানে তো আর এক নয়! কাজেই এতে কোনও রাজনৈতিক দলের নামের প্রতিফলন ঘটছে না।” ব্যানারে ওই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় হিসেবে তৃণমূল ভবনের নাম ও ঠিকানা লেখা নিয়ে মন্মথবাবুর জবাব, “এতে কিছু যায়-আসে না।” তিনি জানান, নথিভুক্তির সময় তাঁদের সংগঠনের নামের মধ্যে ‘তৃণমূল’ শব্দটি ছিল না। এ বছর অক্টোবরে সংগঠনের নাম সংশোধন করে ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’ করা হয়েছে। এ জন্য আর নতুন করে সংগঠনের নথিভুক্তিকরণের দরকার নেই বলে দাবি মন্মথবাবুর।
প্রসঙ্গত, শোভনদেববাবুকে নিগ্রহের ব্যাপারে প্রধান অভিযুক্ত এই মন্মথবাবুই। তাঁর নেতৃত্বাধীন সংগঠনের হয়েই এ দিন মুকুলবাবু সওয়াল করেছেন বলে শোভনদেববাবুর অনুগামীরা মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রকারান্তরে মন্মথবাবুদের পাশেই রয়েছেন মুকুলবাবুরা। |