নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পরোক্ষে সাম্প্রদায়িকতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলে আসছিল সিপিএম। এ বার ইমাম-ভাতার প্রসঙ্গ টেনে এবং জঙ্গিপুরের লোকসভা উপনির্বাচনের ফল উল্লেখ করে সেই অভিযোগকে আরও তীব্রতর করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বস্তুত, ইমাম-ভাতা চালু হওয়ার পরে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রকাশ্যে ওই ব্যাপারে এর আগে মত ব্যক্ত করেননি সিপিএমের কোনও শীর্ষ নেতা। যা আগাগোড়াই বলে আসছে রাজ্য বিজেপি এবং জঙ্গিপুরে তার ফলও পেয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছে।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কুড়ি বছর পূর্তির দিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হলে বৃহস্পতিবার বামফ্রন্ট আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদে’র বিরুদ্ধে এক কনভেনশনে বুদ্ধবাবু বলেছেন, “এই সরকার সূক্ষ্ম ভাবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা করছে। বলছে, ধর্মীয় গুরুদের ভাতা দেব। কিন্তু হাজার হাজার মুসলিম ছেলে বেকার। তাদের শিক্ষা নেই। চাকরি নেই। তাদের কী হবে? তৃণমূলের এই মৃদু সাম্প্রদায়িক নীতির ফলে এক দিকে বিজেপি মাথা তুলছে, অন্য দিকে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাও উৎসাহ পাচ্ছে।” তৃণমূলের এই সংখ্যালঘু-নীতির ফলেই জঙ্গিপুর উপনির্বাচনে বিজেপি ১০% এবং মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তি ৭%, অর্থাৎ ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ মোট ১৭% ভোট পেয়েছে বলে বুদ্ধবাবুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “এটা বামপন্থীদের কাছে দুশ্চিন্তা বলতে পারেন! এই সরকারের নীতি সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্ম দিচ্ছে।” |
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বুদ্ধবাবুর এই হুঁশিয়ারির পাশাপাশিই এ দিন বিধানসভায় অভিনব কর্মসূচি নিয়ে ‘সম্প্রীতি দিবস’ পালন করেছেন বাম বিধায়কেরা। সিপিএমের আনিসুর রহমান, আরএসপি-র ঈদ মহম্মদ, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক, সিপিআইয়ের আনন্দময় মণ্ডল এবং সমাজবাদী পার্টির চাঁদ মহম্মদ দল বেঁধে দিয়ে রাখি পরিয়ে দিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে! রাখি বেঁধেছেন কংগ্রেসের মহম্মদ সোহরাব ও জ্ঞান সিংহ সোহনপালকেও। কংগ্রেস বিধায়কদের একসঙ্গে স্পিকারকে রাখিবন্ধনে যোগ দিতে বাম বিধায়কেরা অনুরোধ করলেও তাঁরা অবশ্য রাজি হননি। রাখি-পর্বের সময় একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক হিসাবে নির্মল ঘোষকেই পেয়েছিলেন আনিসুররা। শাসক দলের মধ্যে শুধু তাঁর হাতেই বাঁধা হয়েছে লাল ফিতের রাখি। তবে বিধানসভার সচিব, কর্মী বা পথচলতি মানুষ, সম্প্রীতির বাঁধনে কাউকেই বাদ দেননি বাম বিধায়কেরা। তার আগে আনিসুর ফোন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিধানসভায় প্রচারে এসে প্রণববাবু বলেছিলেন, দায়িত্ব পেলে তাঁর প্রধান কাজ হবে সংবিধানকে রক্ষা করা। সেই কথা স্মরণ করিয়েই প্রণবকে আনিসুর বলেন, ভবিষ্যতে ভারতবাসীর সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং সাম্প্রদায়িক দিক থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলেই তাঁরা আশাবাদী। রাষ্ট্রপতি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পরে আনিসুর বলেন, “বাবরি ধ্বংসের ২০ বছর পূর্তির দিনে সম্প্রীতি দিবস পালন করে সকলের কাছে আবেদন জানাতে চেয়েছি, রাজ্যের ইতিহাসে ওই রকম ঘটনা যেন না ফেরে।” আর স্পিকার বিমানবাবুর বক্তব্য, “ওঁরা সম্প্রীতির জন্য রাখি পরাতে চেয়েছিলেন। আমি রাজি হয়েছি।” |
বুদ্ধবাবু এ দিনের কনভেনশনে সংরক্ষণ নিয়েও সরব হয়েছেন। বলেছেন, “বাম আমলে দরিদ্র মুসলিম ছেলেদের চাকরির জন্য তফসিলি জাতির মতো সংরক্ষণ চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এই সরকারের আমলে কিছুই হচ্ছে না!” হিন্দু ও মুসলিম, দুই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেই বাম কর্মীদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন বুদ্ধবাবু। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, বামপন্থীরা কখনও কারও ধর্ম-বিশ্বাসে আঘাত করেনি। কারণ, তারা মনে করে ধর্ম বিশ্বাস মানুষের অধিকার। ফ্রন্টের কনভেনশনে ছিলেন হাসিম আব্দুল হালিম, অশোক ঘোষ, ক্ষিতি গোস্বামী, মঞ্জুকুমার মজুমদার প্রমুখ। |