নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি চালু করতে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিল আনবে রাজ্য সরকার। তবে সরকারি স্কুলের মতো বাধ্যতামূলক বদলি নয়। এখানে বদলি হবে
শিক্ষক-শিক্ষিকার আবেদনের ভিত্তিতে। বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষিকাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে ওই বিলে।
সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির ব্যবস্থা নেই। এক সময় স্কুলে বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই নিযুক্ত হতেন আশপাশের এলাকা থেকে। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন মারফত বাছাই শুরু হওয়ার পর থেকে ওই ব্যবস্থার ইতি ঘটে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই বহু দূর থেকে ট্রেনে-বাসে স্কুলে যান। এতে তাঁদের অনেকেরই কর্মদক্ষতার ষোলো আনা সদ্ব্যবহার হয় না। আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছাত্রছাত্রীরা।
রাজ্য সরকার কিছু কাল আগে আপস-বদলির (মিউচুয়াল ট্রান্সফার) নীতি গ্রহণ করলেও তার মাধ্যমে খুব কম শিক্ষক-শিক্ষিকাই উপকৃত হচ্ছেন বলে শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ আধিকারিকদের মত। তাই শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলিকে সাধারণ নীতি হিসাবেই গ্রহণ করছে। শিক্ষক সংগঠনগুলির বেশির ভাগই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, শিক্ষকদের এটি বহু দিনের দাবি। অনেক আগেই এই ব্যাপারে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, চাকরি অন্তত পাঁচ বছর হলে এবং চাকরির মেয়াদ অন্তত দু’বছর বাকি থাকলে তবেই বদলির আবেদন জানানো যাবে। কোনও স্কুলের কোনও পদে বদলি হওয়ার জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়লে কোন আবেদনকারী সুযোগ পাবেন, তা নির্ধারিত হবে নম্বরের ভিত্তিতে। কী ভাবে হিসাব হবে সেই নম্বর? ২০০৬-এর আগে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা প্রতি বছরের অভিজ্ঞতার জন্য দুই নম্বর, তার পরে চাকরি পেলে বছরে এক নম্বর করে পাবেন। এ সবের নিরিখে যাঁর মোট নম্বর বেশি হবে, বদলির সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে থাকবেন। তবে শিক্ষিকাদের কিছু বাড়তি সুযোগ থাকবে। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কোনও শিক্ষিকা আবেদন জানালে তাঁকে বাড়তি তিন নম্বর দেওয়া হবে। তাঁর দশ বছরের কমবয়সী ছেলে বা মেয়ে থাকলে দেওয়া হবে পাঁচ নম্বর। শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা পাবেন তিন নম্বর।
তবে যে স্কুল থেকে শিক্ষক বা শিক্ষিকা বদলি হতে চাইবেন এবং যেখানে তিনি যাবেন, দু’টি স্কুলেরই কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়া হবে। এক আধিকারিক বলেন, “যেখান থেকে তিনি আসবেন, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা কত, ওই শিক্ষক চলে গেলে কোনও অসুবিধা হবে
কি না, ইত্যাদি বিবেচনা করা হবে। আবার যে স্কুলে তিনি যেতে চান, সেখানে ওই বিষয়ের শিক্ষক দরকার আছে কি না, তা-ও দেখা হবে।” সংরক্ষিত পদের জন্য সংরক্ষিত প্রার্থীরাই আবেদন জানাতে পারবেন বলেও জানান ওই আধিকারিক। বদলির আবেদন জানাতে হবে স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে।
বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠনই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায় বলেন, “কেবল দেখতে হবে বিষয়টি যেন সুষ্ঠু ভাবে হয়। কোনও ভেদাভেদ না করা হয়।”
শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকে অবশ্য এ-ও মনে করছেন, এর পিছনে রাজ্য সরকারের অন্য উদ্দেশ্যও রয়েছে। তাঁদের মতে, এ রাজ্যের রাজনীতিতে শিক্ষককুলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত বাম আমলে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিধানসভা বা মহাকরণ পর্যন্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল নজরে পড়ার মতো। ক্ষমতা বদলের পরে অন্য অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি হলেও শিক্ষকসমাজে তেমন প্রভাব পড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনগুলির নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়েছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি স্কুল শিক্ষকদের পছন্দের স্কুলে বদলির সুযোগ করে দিয়ে তাঁদের মন কাড়ার চেষ্টা করছে সরকার। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তাঁদের পরিবার মিলে পঞ্চায়েতে ভোটারের সংখ্যাও কম হবে না। শুক্রবারই বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই অধিবেশনেই বিলটি আনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
|