জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে বিনিয়োগের জোয়ার বইয়ে দেবেন বলে ছ’টি পৃথক নীতি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠীও গড়ে দেন তৃণমূলনেত্রী, বেঁধে দেন নীতি প্রণয়নের সময়সীমা। তার পরে বেশ ক’মাস অতিক্রান্ত। কিন্তু একটি নীতিও দিনের আলো দেখেনি। বরং বাস্তব বিবেচনা করে এখন নীতির সংখ্যা কমিয়ে তিনে দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মহাকরণের খবর।
এবং এই পরিস্থিতিতে সেই অর্থমন্ত্রীকেই সামনে রেখে শিল্প বিষয়ক আরও একটি নীতি তৈরির জন্য মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
এ বারের নীতির বিষয় নির্মাণশিল্প। এ ব্যাপারে আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন মন্ত্রিগোষ্ঠীর রিপোর্ট চেয়েছেন মমতা। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার ছাড়ার পরে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে শিল্প দফতরের উপদেষ্টা পদে বসানোয় অনেকে মত দিয়েছিলেন, এতে শিল্পমন্ত্রীর ভূমিকা কমিয়ে দেওয়া হল। এখন শিল্প বিষয়ক দু’টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর মাথায় অর্থমন্ত্রীকে বসানোয় ফের শিল্পমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দেড় বছরের জমানায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য পৃথক জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন নীতি এখনও তৈরি করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমিমন্ত্রী মমতা। তবে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি পৃথক নীতি করেছিল শিল্প দফতর। আর তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্যে লগ্নি টানতে তাঁর সরকার ছ’টি পৃথক নীতি প্রণয়ন করতে চলেছে। যার দু’টো হল পূর্বঘোষিত তথ্য-প্রযুক্তি নীতি ভেঙে তৈরি করা হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার নীতি। সঙ্গে আছে একটি শিল্পনীতি, অনাবাসী লগ্নি সংক্রান্ত একটি নীতি, একটি রফতানি-নীতি, এবং স্বতন্ত্র একটি বিনিয়োগ-নীতি। |
বাস্তবে অবশ্য ছবিটা অন্য রকম। মহাকরণের খবর: তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ঘোষিত একটা নীতিই বজায় থাকবে। পরিস্থিতিসাপেক্ষে রফতানি-নীতি ও স্বতন্ত্র বিনিয়োগ-নীতির ভাবনাও শিকেয়। আপাতত পড়ে রয়েছে শিল্প ও অনাবাসী লগ্নি। তার কী হাল?
সরকারের এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, অনাবাসী বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি, তা নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকও হয়নি। বস্তুত এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে প্রশাসনের একাংশ বলছে, নতুন সরকারের আমলে রাজ্যে এখনও কোনও বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। শুধু অনাবাসী লগ্নির জন্য দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন আলাদা নীতি আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে এই মহল।
বাকি রইল যে শিল্পনীতি তৈরির প্রস্তাব, তা নিয়েও চরম বিভ্রান্তি।
কী রকম?
মহাকরণের খবর: এক দিকে শিল্প দফতরের উপদেষ্টা সৌগতবাবুকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন শিল্পনীতির একটা খসড়া বানাতে। সৌগতবাবু বানাচ্ছেন। অন্য দিকে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিষয়টিতে মতামত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শিল্পনীতি চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন বণিকসভার সুপারিশ জমা পড়তে শুরু করেছে। আবার সরকারের এক মহলের তরফে কয়েক জন শিল্পপতির কাছে মতামত জানতে চেয়ে বলা হয়েছে, রাজ্য যে হেতু এসইজেডের বিরোধী এবং জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণের পক্ষপাতী নয়, তাই ওঁরা এই দু’টি প্রসঙ্গ বাদ দিয়েই মতামত দিন। ফলে বণিকমহলের অধিকাংশ সুপারিশে বড় শিল্পের জন্য জমির প্রসঙ্গটিকে কার্যত এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। “সরকারের এ হেন দৃষ্টিভঙ্গি জেনে যাওয়ার পরে এ প্রসঙ্গে কিছু বলে লাভ কী?” মন্তব্য এক বিনিয়োগকারীর।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে রকম, তাতে নতুন সরকারের কোনও শিল্পনীতি তৈরি হলেও তা কী চেহারা নেবে, সে বিষয়ে শিল্পমহলের একাংশ যথেষ্ট চিন্তিত। নীতি-পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ কী?
মন্ত্রিগোষ্ঠীর দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। এ দিকে নির্মাণশিল্পের নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে তাঁকেই মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী যে নতুন মন্ত্রিগোষ্ঠী গড়েছেন, তা মূলত নগরোন্নয়ন-পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা ভেবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্মাণশিল্পে যুক্ত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রিগোষ্ঠী রিপোর্ট দেবে। প্রশাসনের একাংশের মতে, ইদানীং প্রকল্পকারীদের অন্যতম বড় অভিযোগ ইমারতি দ্রব্যের ‘সিন্ডিকেট-রাজ’ নিয়ে। বিশেষত, নিউ টাউনের মতো জায়গায় সিন্ডিকেটের বাধায় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায়নি বলে অভিযোগ। এর প্রেক্ষিতে মমতা এ বার ইমারতি পণ্য সরবরাহেও নির্দিষ্ট নিয়ম চাইছেন।
নতুন নীতিতে তার দিক নির্দেশ থাকতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসনের এই মহল। |