দিনে ব্যাবসা, আর রাতে পালা করে বাজার পাহারা দেবেন তাঁরা। দুষ্কৃতীদের হামলার হাত থেকে রেহাই পেতে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা বাজারের ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ওই এলাকায় চুরি-ডাকাতি ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে বাগজোলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় ছিলেন সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুর রেজ্জাক, সমিতির সম্পাদক শশাঙ্ক মণ্ডল, আব্দুল জলিল মণ্ডল ও বাদুড়িয়া থানার অফিসার নারায়ণচন্দ্র কর-সহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে একই সঙ্গে অবিলম্বে এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির জন্য দাবি জানানো হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও গ্রামের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় বাগজোলা এলাকায় ব্যাপক হারে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারের মধ্যে পুলিশ চৌকির ব্যবস্থা করা হয়। তার ফলে চুরি-ডাকাতি কিছুটা কমে। কিন্তু ৬ মাস আগে কোনও কারণ ছাড়াই ওই পুলিশ চৌকি তুলে নেওয়া হয়। তার পর থেকে এলাকায় ফের দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চুরি-ডাকাতি প্রায় রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর রাতে এক দল দুষ্কৃতী লুঠপাটের উদ্দেশ্যে বাজারে জড়ো হয়েছিল। তাদের জড়ো হতে দেখে বাজারে রাতপাহারায় থাকা সুবল দাস, ফিরোজ আলি, শুভঙ্কর হালদার ও কিন্ু মণ্ডল বাধা দেন। বাধা পেয়ে পালিয়ে না গিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। গুরুতর জখম হন সুবল ও শুভঙ্করবাবু। এর পরেই ফের এলাকায় পুলিশ চৌকির দাবি ওঠে।
বসিরহাট মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অন্যতম বড় বাজার হিসাবে পরিচিত বাগজোলা বাজার। এখানে সাড়ে সাতশোর উপর ব্যবসায়ী আছেন। সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, “চুরি-ডাকাতি, তোলাবাজি বন্ধের জন্যই এক সময় এখানে পুলিশ চৌকি করা হয়েছিল। মাস ছয়েক আগে তা সরিয়ে নেওয়ায় ফের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে একটি গুদামের সাটার ভেঙে বেশ কয়েক হাজার টাকার পাট লুঠ হয়েছে। একটি মোবাইল ফোনের দোকানের দরজা ভেঙে বেশ কিছু মোবাইল ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুরি হয়েছে। এমনকী একটি মিষ্টির দোকানেও ভাঙচুর চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই অবস্থায় আতঙ্কে কোনও নৈশপ্রহরী থাকতে চাইছেন না। তাই আমরা নিজেরাই পালা করে রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এখানে দ্রুত পুলিশ চৌকি তৈরির ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” সমিতির সম্পাদক শশাঙ্ক মণ্ডল বলেন, “দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে ব্যবসায়ী-সহ স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত। পুলিশ চৌকি না হলে এই আতঙ্ক কাটবে না।” বাদুড়িয়া থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমাতে এলাকায় রাতে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় মানুষ পুলিশ চৌকির যে দাবি জানিয়েছেন সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। |