|
|
|
|
সঙ্কটে জেলার বহু স্কুল |
তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের বরাদ্দ মেলেনি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের টাকা না আসায় সমস্যায় পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু স্কুল। হস্টেলে যে সব তফসিলি জাতি-উপজাতি ছাত্রছাত্রীরা থাকে, তাদের জন্য মাসে ৭৫০ টাকা করে বরাদ্দ করে সরকার। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই টাকা বরাদ্দ হয়। আগে বছরে দু’ভাগে টাকা বরাদ্দ করা হত। শুরুতে কয়েক মাসের টাকা বরাদ্দ হত। পরে বাকি কয়েক মাসের। এ বার বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলই সেই টাকা পায়নি। ফলে হস্টেল চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ধার করে জিনিস কিনতে হচ্ছে তাঁদের। অনেক ক্ষেত্রে ধারে জিনিস পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্য থেকে টাকা আসতে দেরি হয়েছে। তার ফলেই এই সমস্যা। তফসিলি জাতি-উপজাতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আধিকারিক রাহুল নাথ বলেন, “সম্প্রতি তিন মাসের টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তা স্কুলগুলোকে দেওয়া হচ্ছে।”
বাস্তবে অবশ্য অনেক স্কুলই রীতিমতো সঙ্কটে রয়েছে। ভীমপুর হাইস্কুলের হস্টেলে ৫৩ জন তফসিলি জাতি-উপজাতির ছাত্রছাত্রী থাকে। এদের সকলেরই মাসে ৭৫০ টাকা করে পাওয়ার কথা। ১০ মাসের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এদের কেউ এক মাসের টাকাও পায়নি। অথচ, শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলল। প্রধান শিক্ষক সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কতদিন আর ধার করে সব চালানো যায়?” একই বক্তব্য ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর। তাঁর কথায়, “আমার স্কুলের ক্ষেত্রে গত বছরও প্রায় একই সমস্যা হয়েছিল। গত শিক্ষাবর্ষের টাকা এসেছিল চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে। শুরুতে কয়েক মাসের টাকা দিয়ে দেওয়া হলে আর এই সমস্যা হয় না।” ভাদুতলা হাইস্কুলের হস্টেলে মোট ৭১ জন ছাত্রছাত্রী থাকে। এদের মধ্যে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬১, যারা তফসিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। মৌপাল হাইস্কুলে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫২। যারা হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, “চলতি শিক্ষাবর্ষে এই খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ফলে হস্টেল চালাতে সমস্যা হচ্ছে।” জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, জেলায় তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ভুক্ত এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১ হাজার ৮৭০। এরমধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ৭৭০। ছাত্রী ২ হাজার ১০০। চলতি শিক্ষাবর্ষে এদের জন্য প্রয়োজন সব মিলিয়ে ৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। তবে মিলেছে ২ কোটি ২২ লক্ষ (নভেম্বর পর্যন্ত)। অর্থাৎ, বাকি রয়েছে ৬ কোটি ৬৭ লক্ষ। অন্য দিকে, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, জেলায় তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪০। এরমধ্যে ছাত্র ১২ হাজার ৪০। ছাত্রী ২ হাজার ৭০০। চলতি শিক্ষাবর্ষে এদের জন্য প্রয়োজন ১১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। ওই সময়ের মধ্যে মিলেছে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ। অর্থাৎ, বাকি রয়েছে ৮ কোটি ৫০ লক্ষ। যদি নভেম্বরের পর আরও কিছু অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। জেলা অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতরের আধিকারিকের আশ্বাস, “বরাদ্দ অর্থ যত দ্রুত সম্ভব স্কুলগুলোকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” তবে এরপরও যে সঙ্কট কাটবে না, তা মানছেন দফতরের একাংশ আধিকারিক থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকলেই। কারণ, চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য যে পরিমান অর্থ প্রয়োজন, তা যে বরাদ্দই হয়নি। ফলে প্রাপ্য অর্থের পুরোটা পেতে শিক্ষাবর্ষ পেরিয়ে যাওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। |
|
|
|
|
|