দু’আঙুলে ধরা দু’টো সিগারেট। মুখ থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ক্লাবহাউসের বাইরে ভারতীয় সাংবাদিক চোখে পড়তেই ব্রিটিশ তরুণের জিজ্ঞাসা, “আচ্ছা, কলকাতায় ভাল নাইটক্লাব কোথায়?”
বিশাল বপু নিয়ে নড়াচড়ায় বড়ই অসুবিধে বিল-এর। কিন্তু ইডেন গ্যালারিতে ওই চেহারাতেই ঝড় ওঠে। উন্মুক্ত উর্ধ্বাঙ্গ, সর্বক্ষণ মুখে ভেঁপুউগ্র ইংরেজ সমর্থনের মানেটা কী, বোঝার জন্য ওই বিলই যথেষ্ট। কী ভাবে সামলান? “আরে ধুর, মাঠে ও সব ভাবনা আসে নাকি? আমাদের অফিশিয়াল সং-য়ের লাইনটা জানেন না? উই আর লয়্যালিস্ট ক্রিকেট সাপোর্টার্স দ্য ওয়ার্ল্ড হ্যাভ এভার হ্যাড। বোঝা গেল?”
বোতলের পর বোতল বিয়ার উড়ছে। উদ্দাম নাচ, সঙ্গে তেড়ে ধোনিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য। কেউ চব্বিশ, কেউ বা ষাট পেরিয়েছেন। সবাই ব্রিটিশ। প্রেক্ষাপট, সন্ধের ‘পাব’। ঠিকানাসদর স্ট্রিট। |
কারা এঁরা? কেউ বিল, কেউ সাইমন, কেউ জো। কিন্তু নিজেদের পোশাকি নাম ব্যবহার করতে পছন্দ করলে তো? নিজেদের এঁরা একটা নামেই বোঝেন, বোঝেন ক্রিকেটটা বিশ্বে একটা দলই খেলে। বাকি সব তৃতীয় বিশ্বের এলি-তেলি! নাম জিজ্ঞেস করলে অদ্ভুত অদ্ভুত সব উত্তর আসে...‘আমার নাম হোয়াইট স্প্যারো’...‘আমি? আমি কেভিন পিটারসেন!’
এক কথায়, এঁরাই বার্মি আর্মি। ইংরেজ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্তকুল। বিশ্বের সর্বত্র যাঁদের টিমের সঙ্গে ঘোরাফেরা। নিজেদেরই এঁরা পাগল বলেন, তুলনা করেন মানসিক রোগীর সঙ্গে! শুক্রবারের ইডেন যাঁদের দখলে চলে গেল। শাহরুখ খান যে ব্লক থেকে আইপিএলের সময় উনিশ-কুড়ির দিকে চুমু ছুড়ে দেন, তার ঠিক নীচেই ছোটখাটো ব্রিটিশ দুর্গ। গ্যালারির গায়ে ঝুলছে ইংল্যান্ডের পতাকা। বার্মি আর্মির ‘সৈন্য’ অন্তত হাজার তিনেক। মাঠে কুকের শাসন যত বাড়ল, মিনিটে-মিনিটে তত বাড়ল গ্যালারির এই অংশের সিংহ-গর্জন। “চার দিনে শেষ করে দেব।” “কাল থেকে আরও চেঁচাব। ভারতীয় সমর্থকদের গলাই শোনা যাবে না।” “কলকাতা শহরটা, ইডেন খুবই ভাল। কিন্তু টেস্টটা তো হচ্ছে ‘বাংলাদেশের’ সঙ্গে!”
অবাক করা একের পর এক মন্তব্য করে কেউ মিশে যান ইডেন থেকে ঘরে ফেরার ভিড়ে। কেউ সোজা ঢুকে পড়েন ‘পাব’-এ। কলকাতার আনাচে-কানাচে।
শুধু একটাই আক্ষেপ।
লর্ডসে যা হয়, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যা চলে, ইডেনে তা হয় না। মাঠে বসে শ্যাম্পেনের বোতল খোলা যায় না। চুমুক দেওয়া যায় না বিয়ারের ক্যানে। কামড় বসানো যায় না বিফ স্টেকে। এখানে শুধুই শুকনো চুইংগাম। পানীয় বলতে ‘সফট ড্রিঙ্কস’। নইলে আর উগ্র কোরাস থেকে ভেসে আসবে কেন, “যদি একবার অনুমতি দিতেন...কুকির সেঞ্চুরির পর শুধু বিয়ারের ক্যানই উড়ত!” |