|
|
|
|
হুল্লোড় |
আমার নতুন টিমমেটরা |
মাঠে নয় স্টুডিওতে। সতীর্থদের পছন্দ-অপছন্দ ফাঁস করলেন অরুণ লাল। লিখছেন সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় |
সিধু
উফ্! এই এক জন টিমমেট নিয়ে কী বলব? আমাদের মধ্যে পপুলার নম্বর ওয়ান। টিভি অডিয়েন্স ওর মন্তব্যগুলো শুধু শোনেই না, বলা যায় গেলে। আর তার পরে হাসিতে ফেটে পড়ে। ক্রিকেট কমেন্ট্রিতে এক ঝলক নির্মল বাতাস যেন সিধুর কমেন্ট্রি।
ম্যাচ-কমেন্ট্রির ক’টা দিন সিধুর ‘কোটেশন বুক’ বগলে নিয়ে ঘোরাফেরার দৃশ্যটা আমাদের কাছে সেরা বিনোদন। আজ পর্যন্ত যে কোটেশন বুক শুধু চোখেই দেখেছি। কোনও দিন হাতে ধরে দেখার সৌভাগ্য ঘটেনি। কী করে ঘটবে? সিধু ওই ‘কোটেশন বুক’ আজ পর্যন্ত আমি কেন, আমাদের কারও হাতেই দেয়নি।
আর ওর ওই ননস্টপ বকবক করার অভ্যেস! সেটা শুধু টিভি ক্যামেরার সামনেই নয়। ক্যামেরা ‘অফ’ থাকা অবস্থা্য় আমাদের আড্ডাতেও সিধু একবার শুরু করলে থামার কোনও লক্ষণ থাকে না।
প্রিয় খাবারদাবার? নিরামিষাশী সিধু বোধহয় এই একটা ব্যাপারে চুপ। অর্ধেক নিরামিষ খাবারের নামই জানে না।
কুসংস্কার? ওসবের ধার মাড়ায় না। বরং ঘনিষ্ঠ মহলে গর্ব করে বলে থাকে, আমি ছোটবেলা থেকে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করে এসেছি। আমাকে ক্রিজের মতোই কমেন্ট্রি বক্সেও একেবারে পেড়ে ফেলা মুশকিল।
রামিজ রাজা
রোম্যান্টিক গলা। উর্দু শায়েরিগুলো যখন আওড়ায়, সিধুর শায়েরিও যেন নিরামিষ লাগে।
শাস্ত্রী
সানি-সৌরভ টিভি কমেন্ট্রিতে হিন্দি সিনেমার সেটে আমির খানের মতো সব সময় খুঁতখুঁতে। অল্পস্বল্প টেনস্ড থাকা শাস্ত্রী যেন ধারাভাষ্যকারদের শাহরুখ খান! কিন্তু চোখেমুখে বিন্দুমাত্র টেনশনের ছাপ নেই, নিজের কাজের সময়। প্রচণ্ড রিল্যাক্সড। কমেন্ট্রিতে একটা গ্রেসফুল ব্যাপার আছে। অথচ দারুণ যে উঁচু মানের ইংরেজি উচ্চারণ বা ইংরেজি শব্দ বাছার ক্ষমতা, তা নয়। কিন্তু কী যেন একটা একস্ট্রা ব্যাপার আছে ওর কমেন্ট্রিতে।
মারাত্মক পেশাদার। নিজের পেশা ছাড়া দুনিয়ার কারও কাছে যেন দায়বদ্ধ নয়। যে কারণে কমেন্ট্রিতে কোনও ক্রিকেটারকে রেয়াত করে না। কেউ কেউ অবশ্য বলে, শাস্ত্রী সচিনকে একটু টেনে থাকে। সচিন খারাপ আউট হলেও বলবে, আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি। কিন্তু আমি এই অভিযোগের সঙ্গে একমত নই। শাস্ত্রীর মতো কঠিন সমালোচক কমেন্ট্রি-দুনিয়ায় এক-দু’জনের বেশি নেই।
কমেন্ট্রির সময় নাওয়াখাওয়া প্রায় ভুলে যায়। শাস্ত্রী তাই কী খেতে ভালবাসে আমার পক্ষে বলা খুব মুশকিল। তবে এটা বলতে পারি যে, টেস্ট কমেন্ট্রির পাঁচ দিন প্রায় অর্ধভুক্ত থাকে। বরং খাওয়ার সময়টাতেও গলাটা বাড়তি আর এক বার গরম জলে কুলকুচি করে নেয়। যাতে নিজের পরের টার্নে গম্ভীর গলাটা আরও ভরাট শোনায় টিভিতে।
ইয়ান চ্যাপেল
মাস্টার কমেন্টেটর। সবার সেরা বিশ্লেষণ।
সানি গাওস্কর
কমেন্ট্রি বক্সের ক্যাপ্টেন কুল। ঠান্ডা। শান্ত। সিম্পল। অথচ যেটাই বলে নিজের গভীর বিশ্বাস থেকে বলে। ভীষণই দৃঢ়, দৃপ্ত ভঙ্গিতে বলে। গলার স্বরটাও ভারী মিষ্টি। মা-মাসিরা যেমন পছন্দ করেন আর কী।
নিজের কমেন্ট্রি যখন থাকে না, টিমমেটদের পিছনে লাগতে এক নম্বর। যে আড্ডাটা টেলিকাস্ট হচ্ছে না, সেখানে এমন সব অ্যাডাল্ট জোকস বলে যে, আমাদের কান লজ্জায় লাল হয়ে ওঠার জোগাড় হয়। খাওয়াদাওয়ায় ওর কমেন্ট্রিতে শব্দ বাছাইয়ের মতোই ভীষণ খুঁতখুঁতে।
অথচ খেতে দারুণ ভালবাসে। মুডে থাকলে অনেকটা খেয়েও ফেলে। যে শহরে কমেন্ট্রি থাকে, সেখানকার স্পেশ্যাল ডিশ-এর খোঁজ করে।
সেটা আনিয়ে খায় এবং সত্যি বলতে কী আমাদেরও খাওয়ায়। যদিও সাংবাদিক মহলে সানির কিপটে বলে দুর্নাম আছে।
বয়কট
টিপিক্যাল ব্রিটিশ। তবে নাক উঁচু ভাবটা ইংরেজ বলে নয়, ইয়র্কশায়ারের ক্রিকেটার বলে।
কপিল
মাউথপিস হাতে ভীষণ সহজ সরল। ঠিক ওর খেলোয়াড় জীবনের বোলিং-ব্যাটিংয়ের মতোই। স্টার ক্রিকেটে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের হিন্দি কমেন্ট্রি আমরা দু’জন একসঙ্গে করছি। অত বড় মাপের এক জন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার কমেন্টেটর হিসেবে যে কতটা মাটির কাছাকাছি থাকতে পারে, সেটা কপিলকে দেখে বুঝতে পারছি।
মাটির কাছাকাছি বলে যে, কোনও ক্রিকেটার খারাপ পারফরম্যান্স করলে তার নিন্দে করে না সেটা কিন্তু নয়। খুব ঠান্ডা ভঙ্গিতে সেই ক্রিকেটারের ব্যাটিং, বোলিং এমনকী ফিল্ডিংয়ের গলদও ধরিয়ে দেয়।
শাস্ত্রীর মতো কপিলও কমেন্ট্রির ক’টা দিন প্রায় উপোসি থাকে।
শুধু সাদা জল আর ফলফলাদি।
খুব পরিচিত নম্বর না হলে কারও মোবাইল কল ধরে না।
হোল্ডিং
অননুকরণীয় উচ্চারণ।
মঞ্জরেকর
এখন ম্যাচিওরড্। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে নির্লিপ্ত মানসিকতা দেখাতে শিখেছে
কমেন্ট্রির সময়।
সৌরভ
ক্রিজে ওর অফ ড্রাইভের মতোই কমেন্ট্রি বক্সে মাউথপিস হাতেও ভীষণ স্পেশ্যাল। ধারাভাষ্যে দারুণ ব্যালান্সড। আসলে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ লেভেলে এত বেশি বার ক্যাপ্টেন্সি করেছে যে জানে, কোথায় কতটা বলতে হবে। আলোড়ন তোলার জন্যই আলোড়নমূলক মন্তব্য করাতে মোটেই বিশ্বাসী নয়। আবার স্পেড-কে স্পেড বলতেও পিছপা হয় না কমেন্ট্রি করার সময়।
সেন্স অব হিউমার দুর্দান্ত। যখন ওর কমেন্ট্রির ‘টার্ন’ থাকে না, আড্ডায় দারুণ সব চুটকি ছাড়ে। কোনও কুসংস্কারে ভোগে না।
আপাদমস্তক পেশাদার। কিন্তু নির্মম পেশাদার নয়। খেতে খুব ভালবাসে। কিন্তু কমেন্ট্রির ক’টা দিন ভীষণ মেপে খাওয়াদাওয়া করে। আমার হাতে ঠান্ডা জল দেখলেই পি...গি’দা বলে লাফিয়ে পিছিয়ে যায়।
পুনশ্চ— আমার দশ টিমমেটই হাবেভাবে, চালচলনে এক রকম সমানই। ক্যাজুয়াল কিংবা স্যুট, যে পোশাকই পরুক না কেন, সাধারণ স্টাইল পছন্দ করে। চালচলনে প্রত্যেকে মাটির কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। কুসংস্কারের ধারেকাছে কেউ নেই।
আর হ্যাঁ, পেটপুরে খাওয়াদাওয়া আর নেট সাফির্ং কিংবা মোবাইল থেকে টুইট মেসেজ করার ব্যাপারে আমার দশ টিমমেটই এক জনের কাছে হেরে যাবে। সেই এক জনের নাম?
অরুণ লাল! |
|
|
|
|
|