আন্তর্জাতিক সিনেমাও ছেড়ে দিয়েছেন শুনলাম?
হ্যাঁ। একটা সময় আমি রোলান্ড জফের ‘সিঙ্গুলারিটি’র প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কেননা ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ ছবিটার সঙ্গে ডেট ক্ল্যাশ করেছিল। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরিচালকেরা ‘মিস লাভলি’-তে আমার কাজ দেখেছেন, রোল অফার করেছেন। কিন্তু এখন আমি দু’তিনটে সিনে হাজিরা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সিনেমাতেও অভিনয় করব না। এই বেশ ভাল আছি। ভারতীয় ছবিতে ভাল অভিনয় করতে চাই। রোল ভাল না হলে হলিউডের ছবি করতে ছুটে কী লাভ? ছোট চরিত্রে যদি স্টিফেন স্পিলবার্গও অভিনয় করতে বলেন তা হলেও আমি না করতে পারি। এটা আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছি। অভিনেতা হিসাবে নিজেকে যদি শ্রদ্ধা করতে না পারি, তা হলে বাকিরা আমাকে শ্রদ্ধা করবেন কেন?
এ বছর যখন আপনি কান উৎসবে গেলেন তখন ডিজাইনাররা আপনাকে স্যুট ধার দিতে চাননি। সেই পরিস্থিতি এখন বদলেছে কি?
সব এখন বদলে গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বড় ম্যাগাজিনগুলো আমার সঙ্গে ফ্যাশন শ্যুট করতে চাইছে। কিন্তু সবটাই দেখতে গেলে উপর উপর। ভেতরে আমি যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। এখনও মুম্বইতে একটা ভাড়াবাড়িতে থাকি। এখনও নিজের পুরোনো ফোর্ড আইকন গাড়িটা চালাই। অতিরিক্ত কোনও আর্থিক চাপ আর নিতে চাই না। যে মুহূর্তে নিজেকে একটা উঁচু স্টেটাসে নিয়ে যাব, ইএমআই শোধ করার জন্য যে কোনও সিনেমায় সই করতে বাধ্য হব। আটত্রিশ বছর বয়সে এসে এত সংগ্রামের পর সে সব করতে চাই না।
কাল্পনিক চরিত্রের থেকে একটা বাস্তবধর্মী চরিত্রে অভিনয় করাটা কি বেশি কঠিন?
হ্যাঁ, ‘মাউন্টেন ম্যান’-এ একটা বাস্তবধর্মী চরিত্রে অভিনয় করছি। যে চরিত্রটা একা হাতে বাইশ বছর ধরে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে তিনশো মিটার লম্বা একটা রাস্তা বানান। এখানে আমার চরিত্রের বয়স কুড়ি থেকে বেড়ে হয় সত্তর। এই লোকটির স্ত্রী ভাল চিকিৎসার অভাবে মারা যান। কারণ ডাক্তার থাকতেন সত্তর কিলোমিটার দূরে। এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই উনি রাস্তাটা বানিয়েছিলেন। ওঁর এই কিংবদন্তি প্রেম কাহিনি লায়লা-মজনু আর হির-রাঞ্ঝার গল্পকেও হার মানায়। ‘এন্ড অফ ব্যান্ডিট কুইন’ পরিচালক হিসেবে ব্যারি জনের প্রথম ছবি। ব্যারি একজন নামকরা থিয়েটার পরিচালক। উনি শাহরুখ খানের মেন্টরও ছিলেন। উনি আমাকে শের সিংহ রানার চরিত্রটা অফার করেছেন যাঁর বিরুদ্ধে ফুলন দেবীকে খুন করার অভিযোগ আছে। মিমিক না হয়ে বাস্তবধর্মী চরিত্রের নির্যাস বজায় রাখাটাই একটা কঠিন কাজ। যেটা আমি ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ সিনেমায় করেছিলাম। ‘চিটাগং’-এও করেছি।
ফুলন দেবী যে ভাবে ঠাকুরদের মেরেছিলেন তা কি সমর্থনযোগ্য?
অপরাধ, তা যতই মারাত্মক হোক না কেন, একজন মানুষ কেন অস্ত্র হাতে তুলে নেবে সেটা আমি বুঝতে পারি না। গুলি করে ফুলন যে ঠাকুরদের মেরে ফেলেছিলেন সেটা আমি কিছুতেই মানতে পারি না।
আর শের সিং রানা?
ও এখন তিহার জেলে বন্দি। ফেব্রুয়ারিতে শ্যুটিং শুরু করার আগে আমি ওর সঙ্গে দেখা করব ঠিক করেছি। ওঁর গল্পটা শোনার পরেই আমি এ বিষয়ে মতামত দিতে পারব।
আপনি নাকি কেতনের ছবির শ্যুটিংয়ের মধ্যে বুধানায় আপনার নিজের গ্রামে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, দু’বছর পরে আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। ‘কহানি’ আর ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’-এর পরে ব্যস্ততা থাকায় আমি ওখানে যেতে পারিনি। যখন সিনেমায় এক জন সুপারস্টার থাকে, তখন তার পরিধি বহু দূর বিস্তৃতি লাভ করে। আমার জীবনে ‘তালাশ’-এর অবদান এটাই। আমার গ্রামের মানুষ আমাকে সারল্যের জন্য ভালবাসেন। আর ওঁরা খুব গর্বিত যে ওঁদেরই একজন এরকম সাফল্য পেয়েছে।
এখনও গ্রামে ফিরে গেলে আপনি কি সেই আগের নওয়াজউদ্দিন?
না, সব সময় পারি না। গলি মহোল্লে মে তো ঘুম ফির নহি সকতা। আগে যে কোনও জায়গায় গিয়ে বসতে পারতাম। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। চার পাঁচ দিন ছিলাম গ্রামে। তার মধ্যেই অন্তত পাঁচ হাজার লোকের সঙ্গে দেখা করেছি। সমস্ত জায়গা থেকে মানুষ এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এত ভালবাসা পেয়ে আমি অভিভূত।
আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী?
দারুণ খুশি সবাই। মা তো ভীষণ আনন্দিত। বাড়িতে সবাই জানেন, কী ভাবে আমি দিল্লিতে আমার কেরিয়ার শুরু করি ওয়াচম্যান হিসেবে।
দশটা থেকে ছ’টা কাজ করে সন্ধেবেলা থিয়েটার করতাম। বাবা-মা আমার সাফল্য থেকে বৈষয়িক সুযোগসুবিধে আশা করে না। ওঁরা গ্রামের জীবনেই সুখী। আমার একটাই উদ্বেগ। মায়ের পিঠের ব্যথাটা যেন সেরে যায়। |
কে কেমন |
কেতন মেহতা
নিজের ধারণা খুব পরিষ্কার। তবে অভিনেতাদের মতকেও গুরুত্ব দেন। |
সুজয় ঘোষ
সব সময় আমাকে অভিজাত চরিত্রের জন্য ভাবেন। আমি মাত্র পাঁচ ফুট ছ’ ইঞ্চি। সত্যিই আশ্চর্য যে সুজয় আমায় ‘কাহানি’র ওই চরিত্রে ভেবেছিলেন। |
অনুরাগ কাশ্যপ
উনি একেবারেই বাঁধা গতের বাইরে। কখন কী করবেন বোঝা যায় না। উনি অভিনেতাদের থেকেও পরামর্শ নেন। |
রিমা কাগতি
উনি জানেন অভিনেতাদের কাছে কী প্রয়োজন আর সেটা উনি ঠিক বের করে নেন। |
|
গ্রামে ফিরে প্রথম প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করেছিলেন?
গ্রামে ওর বাড়ির সামনেই একটা জায়গায় আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। সে এখন বিবাহিত। অন্য কারও স্ত্রী। পাঁচটা বাচ্চাও আছে। আমার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রচুর ভিড় হয়েছিল। অনেকে অটোগ্রাফ চাইছিল। চিত্র-গ্রাহকের ভিড়। কিন্তু আমি কেমন একটা ঘোরে ছিলাম। চোখ দু’টো খালি ওকেই খুঁজছিল।
যে দিন প্রথম মুখ ফুটে ওকে বলতে গিয়েছিলাম আমার মনের কথা, ও বলেছিল আমাকে পথ ছাড়তে। ওর সিরিয়াল দেখতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সিরিয়াল করতে শুরু করার পর ওকে খবর পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম। তত দিনে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আমি এখন কী করছি সেটা ও কি জানে? ওর সঙ্গে দেখা হলে আজও হয়তো আমি কথা খুঁজে পাব না।
আর একটি মেয়ে নাকি আপনার পেছনে চপ্পল হাতে দৌড়েছিল?
উফফ্, ওটা একটা ব্লান্ডার ছিল। একদিন আমি হাশিশ খেয়ে মুম্বইতে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। সব কিছুই রঙিন লাগছিল। আর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল যা মনে আছে বলে দিই। হঠাৎ আমি ওর কাছে গেলাম, আর বললাম ‘লেটস ডু ইট।’ মেয়েটি এত শক পেয়েছিল যে চপ্পল হাতে তাড়া করে।
তখন আমি বেশ নেশাগ্রস্ত। তবে ভয়ও পাচ্ছিলাম খুব। আমার মনে আছে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে নীচে নামার সুইচটাকে প্রেস করছিলাম। কিন্তু আঙুল যেন নড়ছিল না। খালি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি। সে দিন কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যাই! তিন বছর বাদে হঠাৎ ওর সঙ্গে আবার দেখা। সঙ্গে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল। ভাগ্য ভাল আশপাশে অনেক লোক ছিল যাদের পেছনে আমি লুকিয়ে পড়ি। নাহলে ওখানেই হয়তো আমাকে ও মারধর করত। আজ ওর সঙ্গে দেখা হলে সরি বলব। হতে পারে আজ ও বিবাহিত। আমিও। আমার মনে হয় ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। (হেসে)
নওয়াজউদ্দিনের সাফল্যে মেয়ে কী বলছে?
আগামী সোমবার ও দু’ বছরে পড়বে। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর পোস্টারে আমাকে দেখে ও তো খুব খুশি। বড় বড় হোর্ডিং-এ আমার ছবি দেখে খালি বলত, ‘পাপা পাপা’। ওর কাছে আমার সাফল্য মানে কেবল পোস্টারে আমার ছবি। |