মালদহ জেলার শতাধিক স্কুল সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ঘর তৈরির টাকা নিয়েও খরচের হিসেব জমা দেয়নি। প্রায় ৮ বছর ধরে ওই হিসেব মিলছে না। ফলে, ৪২ কোটি টাকার হিসেব এখনও মেলাতে পারছে না সর্ব শিক্ষা মিশন। স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মালদহের ১৯৫টি হাইস্কুল ও ৫০০টি প্রাথমিক স্কুল ওই সার্টিফিকেট জমা দেয়নি। বাধ্য হয়ে বহু বার চিঠি পাঠিয়েছে মিশন। অতিরিক্ত ক্যাম্প খুলে সার্টিফিকেট আদায়ের চেষ্টা করেছে। এমনকী, ১৯৫ টি হাই স্কুলকে অতিরিক্ত ক্লাশ তৈরির জন্য টাকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তবুও ইউটিলাইজেশন পাচ্ছে না সবর্শিক্ষা মিশন। পাশাপাশি চলতি আর্থিক বছরে ১৭০ কোটি টাকা বিলির কথা। সেই টাকার ইউসি মার্চ মাসের মধ্যে কী ভাবে আদায় হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলা সবর্শিক্ষা মিশনের আধিকারিকেরা।
সমস্যার কথা জানেন জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা। জেলাশাসক বলেন, “ব্লকে ব্লকে ক্যাম্প খুলে ও স্কুল কতৃপর্ক্ষকে চাপ দিয়ে প্রচুর টাকার ইউসি আদায় করা হয়েছে। এখন সেই পরিমাণ অনেক কমেছে। স্কুলগুলির কাছ থেকে ইউসি আদায় করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। যে কমিটি প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করে বিষয়টি তদারকি করছেন।”
মার্চ মাসের মধ্যে বকেয়া ও চলতি সহ মোট ২১০ কোটি টাকার ‘ইউসি’ জমা না-পড়লে আগামী আর্থিক বছরে সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ অনুমোদন থেকে মালদহ বঞ্চিত হবে। চিন্ময় সরকার বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহুবার চিঠি পাঠিয়ে সর্তক করেছি। অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। তবুও ইউসি আদায় করতে পারছি না। কয়েকটি স্কুল তো আমাদের চিঠির জবাবই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না।”
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, ১৮৮৭ টি প্রাথমিক স্কুল ও ৫০৬টি হাইস্কুলের জন্য (১৭৩টি নিউ সেট আপ স্কুল সহ) অতিরিক্ত ক্লাশ রুম তৈরির জন্য ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে জেলায় ৩৬৬৪টি অতিরিক্ত ক্লাশরুম তৈরি করার জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে মালদহ জেলাকে ১৭০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যে ১৪০০ অতিরিক্ত ক্লাশরুমের জন্য ৫৯ কোটি টাকা বিলি করা হয়েছে। বাকি ২২৬৪ টি অতিরিক্ত ক্লাশঘর যে সমস্ত স্কুলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৯৫ টি হাইস্কুল ও ৫০০টি প্রাথমিক স্কুল আগের টাকার ইউসি জমা দেয়নি। ফলে সেই সমস্ত স্কুলকে কী ভাবে টাকা দেওয়া হবে তা নিয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিক বিপাকে পড়েছেন।
হেডমাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি চঞ্চল ঝাঁ বলেন, “সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা নিয়ে ক্লাশ ঘর তৈরি নিয়ে কিছু স্কুলে প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে পরিচালন সমিতির বিরোধ চলছে। হেডমাস্টাররা চাইছেন কাজ করতে। পরিচালন সমিতি বাধা দিচ্ছে। বহু স্কুলে ক্লাশঘর তৈরি নিয়ে টালবাহানা চলছে। ইউসি জমা পড়ছে না।” জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মন্ডলও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “অনেক স্কুল সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা নিয়ে ক্লাশঘর তৈরি করেও ইউসি জমা দেয়নি। তাদের দ্রুত ইউসি জমা দিতে বলেছি।”
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক চিন্ময় সরকার এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ২০১১-১২ আর্থিক বছর পর্যন্ত ৪২ কোটি টাকার ইউ সি জমা পড়েনি। তার উপরে ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে জেলার প্রায় ১৭০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। যার মধ্যে ৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসঘরের জন্য স্কুলকে দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে বাকি ১০৯ কোটি টাকা বিলি করে সেই টাকা সদ্ব্যবহারের সার্টিফিকিটে (ইউসি) কী ভাবে মিলবে বুঝতে পারছি না।
|