বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া কিংবা বাতাসে ছড়িয়ে থাকা নানা ধরনের দূষণ ফুসফুসকে ঝাঁঝরা করে দেয়। এর জেরেই বহু মানুষ আক্রান্ত হন ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি)-এ। কিন্তু সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, এই দূষণ শুধু ফুসফুস নয়, দেহের অন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এমনকী, হার্টকেও মারাত্মক ভাবে জখম করছে। বহু ক্ষেত্রেই সিওপিডি-র শ্বাসকষ্টের আড়ালে নিঃশব্দে শিকড় গাড়ছে ইস্কিমিয়া। অনেক সময়েই যার পরিণতি হার্ট অ্যাটাক।
রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের সহায়তায় ‘ইনস্টিটিউট অফ পালমোকেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ’-এর উদ্যোগে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস্ হাসপাতাল এবং ইকো এক্স-রে ও ইমেজিং ইনস্টিটিউটের এক দল চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাতে জানা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই হার্টের ইস্কিমিয়া (রক্ত কম চলাচল) সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। ফলে ওই রোগীরা চিকিৎসার আওতাতেও আসেন না। যার ফল দাঁড়ায় মারাত্মক।
হার্টের অসুখের সঙ্গে সিওপিডি-র এই যোগসূত্রকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন হৃদরোগ চিকিৎসকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি সামনে না আসায় বহু সিওপিডি রোগীর ইস্কিমিক হার্টের কথা জানাই যেত না। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, “সিওপিডি মানে একটি সময় পর্যন্ত ধরে নেওয়া হত, শুধু ফুসফুসেরই ক্ষতি হচ্ছে। এখন সমীক্ষায় ধরা পড়ছে শুধু ফুসফুস নয়, হার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই জানাটা চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য খুব জরুরি ছিল। না হলে রোগীর জীবনযাত্রার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।”
কাকে বলে সিওপিডি? বিশেষেজ্ঞরা জানান, এটি ফুসফুসের জটিল অসুখ। এর জেরে ফুসফুসে বায়ু চলাচলে নানা বাধা তৈরি হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। ধূমপান, নানা ধরনের জ্বালানির ধোঁয়া ও বায়ুদূষণের জেরে সিওপিডি হতে পারে। যে কোনও সংক্রমণ, ঠান্ডা হাওয়া, দূষণ সিওপিডি-র ক্ষেত্রে মারাত্মক। এর ফলে শ্বাস বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়। |
কেন সিওপিডি রোগীর হার্টের সমস্যা বোঝা যায় না? চিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণ ভাবে কারও ইস্কিমিক হার্ট হলে বুকে ব্যথা বা ওই জাতীয় কোনও উপসর্গ থাকে। তার পরে ইসিজি কিংবা ইকো-কার্ডিওগ্রাফি করলে সমস্যাটা ধরা পড়ে। সিওপিডি-র ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গই থাকে না। এমনকী, ইসিজি, ইকো কিংবা ট্রেডমিল টেস্টেও কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে না। সমীক্ষক দলের অন্যতম সদস্য, পালমোনোলজিস্ট পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, “সাধারণত সিওপিডি রোগীরা চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব। এঁদের সিওপিডিজনিত শ্বাসকষ্টের দিকেই সকলের খেয়াল থাকে। ষাটের কোঠায় পৌঁছে হয়তো ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা আর সিঁড়ি ভাঙতে পারছেন না কিংবা জোরে কয়েক পা হাঁটলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে। আমরা ডাক্তারেরা ধরে নিই, একে সিওপিডি রোগী, তার উপরে বয়স বাড়ছে, এ রকম হওয়া স্বাভাবিক।” অর্থাৎ, হার্টের চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়ার কথাটা তখন চিকিৎসকদের অনেকেরই খেয়াল হয় না। না জেনে-বুঝে চিকিৎসার এই অবহেলাই ক্রমশ কোনও রোগীকে হার্ট ফেলিওর, এমনকী হার্ট অ্যাটাকের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, যে সিওপিডি রোগীদের ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি ছাড়াই ‘ডায়াস্টলিক ডিসফাংশন’ অর্থাৎ, হার্টে রক্ত পাম্প করার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৫০ জনেরও বেশি মানুষের হার্টে ইস্কিমিয়া রয়েছে যা ইসিজি, ইকো বা ট্রেডমিল টেস্টে ধরা পড়েনি। |