পুরসভা একবার অবৈধ বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ফের সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদের একাংশ মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই আবেদন মেয়র গ্রহণ করায় অবৈধ নির্মাণ বাঙার কাজ সাময়িক ভাবে পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে মেয়রের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে কংগ্রেস-তৃণমূলের অন্দরেই।
এই ঘটনায় বিরক্ত পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের পরিষদীয় দলনেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রী বলেন, “কমিশনার নির্দেশ দেওয়ার পরে এ ভাবে ফের আবেদন করা যায় কি না জানা নেই। এই টালবাহানায় আমি বিরক্ত। পুরসভা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যা বলার এ বার রাজ্য সরকারকেই জানাব।” তৃণমূল ও কংগ্রেসের একাংশের নালিশ, নির্মাতাদের একাংশ আগে আলোচনা করে আবেদন করেছেন। যদিও মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী বলেছেন, “ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। প্রোমোটারদের কাউকেই চিনি না। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। কেউ চাইলে আবেদন করতে পারেন, এ কথা বোর্ড মিটিং-এ বলেছি। সংবাদ মাধ্যমেনও বলেছিলাম।” |
পূরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, নকশা অনুমোদন ছাড়াই ১১টি অবৈধ নির্মাণ কাজের অভিযোগ ওঠে। গত মে মাসের বোর্ড মিটিংয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বামেরা এবং তৃণমূল, কংগ্রেসের কয়েক জন কাউন্সিলরও। তার পরেই ওই নির্মাণ কাজের নকশা আটকে দেওয়া হয়। নির্মাতারা চিঠি দিয়ে তাদের ভুল স্বীকার করে নকশা অনুমোদনের আবেদন করেন। ডেপুটি মেয়র-সহ ৩ জন মেয়র পারিষদকে নিয়ে তৈরি বিশেষ দল অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। অবৈধ নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে সব মহলেই। ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে পুরসভার আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হয়। তারাও অবৈধ নির্মাণগুলি ভাঙার পক্ষে মত দেন। যদিও ৪ টির ক্ষেত্রে সামান্য কাজ হয়েছে জানিয়ে বিবেচনার কথা জানান। পুর কমিশনার দিন দশেক আগে ১১টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেন। এর পরেই নির্মাতাদের একাংশ মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাদের আবেদনের পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। নির্মাতাদের এক জন সঞ্জীব গোয়েল বলেন, “পুর কমিশনার ভাঙার নির্দেশ দেওয়া পর মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছি। পুর কমিশনারের সঙ্গেও দেখা করেছি। তাঁরা সকলেই আবেদন করতে বলেছেন।” অপর অভিযুক্ত নির্মাতা মনীশ অগ্রবাল বলেন, “আমি যাইনি। তবে কয়েকজন পুরসভায় গিয়েছিলেন শুনেছি। বিষয়টি বিবেচনায় মেয়রের কাছে আবেদন করেছি।”
প্রসঙ্গত, ১১টি নির্মাণ ছাড়াও শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের আদর্শ মহাবিদ্যালয়, ল্যান্ডমার্ক, বর্ধমান রোডের একটি ৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন, চানাপট্টির একটি বাড়ি, সেবক রোডের একাধিক ক্ষেত্রে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ নির্মাণের পিছনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস, তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশ-সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। পুরসভার বিরোধী বামেরা সরাসরি আর্থিক লেনদেনের কথা না বললেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরাও। সম্প্রতি বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা দেবী ৬টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেন। অভিযানে নেমে ৪ টি ভাঙা হলেও এর পর অভিযান আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ ফের উস্কে দিয়েছে। |