চৌত্রিশের জমি-জট নিয়ে আজ ফের কথা মহাকরণে
প্রকল্প ছাড়পত্র পেয়েছিল ২০০৬ সালে। চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া করার জন্য জমি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয় দু’বছর পরে, ২০০৮-এ। মোট জমি লাগবে প্রায় ২৪০০ একর।
তার পরেও চার বছর গড়িয়ে গিয়েছে। ২০১২-র শেষে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) একশো একরও হাতে পাননি। রাজ্যকে বাকি জমি জোগাড় করে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা পর্যন্ত চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের ৪২২ কিলোমিটার হয়ে উঠবে চার লেনের।
এই তথ্য নিয়েই এনএইচএআইয়ের কলকাতা অফিসের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) অজয় অহলুওয়ালিয়া আজ, বুধবার আর এক দফা বৈঠকে বসছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে। উদ্দেশ্য, জমি-জট ছাড়িয়ে প্রকল্পকে গতি দেওয়া। জমি অধিগ্রহণজনিত সঙ্কটের ফাঁসে আটকে ওই সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাবুডুবু খাচ্ছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গোটা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ। কী ভাবে?
মহাকরণের খবর: পূর্বতন বাম আমলে গৃহীত সম্প্রসারণ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে যা জমি লাগবে, সরকার তা অধিগ্রহণ করে জাতীয় সড়ক-কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে বলে বাম জমানাতেই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই মতো কোথায় কত জমি নেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন জেলায় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অধিগৃহীত বহু জমিতে দখলদার বসে যায়। তাদের উচ্ছেদ করা তো যায়ইনি, উপরন্তু ‘ভূমিরক্ষা কমিটি’ গড়ে সড়ক সম্প্রসারণ রুখে দেয় তদানীন্তন বিরোধী দল তৃণমূল।
রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই তৃণমূলই এখন পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায়। তবু ৩৪ নম্বরের উন্নয়ন-ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। বরং বাম আমলে ভূমিরক্ষা কমিটির আন্দোলন সবচেয়ে তীব্র ছিল যে জেলায়, সেই উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল জমানাতেও আন্দোলনের ‘পরম্পরা’ অব্যাহত। মাসখানেক আগে ভূমি-কর্মীরা সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য আমডাঙায় জমি মাপজোক করতে গিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ‘ভূমি-ব্যবসারক্ষা কমিটি’র ব্যানারবাহী বিক্ষোভকারীদের দাবি: রাস্তা চওড়া করতে যাঁদের বাড়ি ও দোকান ভাঙা পড়বে, তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উল্লেখ্য, ওই সব বাড়ি-দোকানই গজিয়ে উঠেছে সরকারি জমির উপরে!
দখলদারির বাধার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বাকি জমি অধিগ্রহণেও সব ক্ষেত্রে রাজ্যের সহযোগিতা মিলছে না বলে এনএইচএআইয়ের অভিযোগ। এনএইচএআইয়ের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রক গোটা প্রকল্পটিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে দফায় দফায় অর্থ বরাদ্দ করেছে। ২০০৮-এ আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছিল ৪২২৭ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ২০১৪ সালে। এখন বলা যাচ্ছে না, প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে কবে।”
আর একটা বড় সমস্যা, টেন্ডার ডেকে একাধিক সংস্থাকে নিয়োগ করা হলেও তাদের পুরোপুরি কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। এনএইচএআইয়ের আশঙ্কা, এর ফলে ভবিষ্যতে মামলায় জড়িয়ে পড়তে হতে পারে, যার খেসারত গুনতে হবে সাধারণ মানুষকে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উত্তর দিনাজপুরে ডালখোলা বাইপাসের উল্লেখ করছেন এনএইচএআই-অফিসারেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় জমি না-মেলায় ডালখোলা শহরকে এড়িয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিমি বিকল্প রাস্তা তৈরি শুরু হয়েছিল। সেখানেও একই সমস্যায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবং দীর্ঘ দিন বসে থাকার পরে এক ঠিকাদার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা ঠুকেছেন। এক কর্তার সংশয়, “উত্তর দিনাজপুরে তিনটে বাইপাসের পরিকল্পনা। একটা বানাতেই যদি এই অবস্থা হয়, বাকিগুলো আদৌ হবে কি?”
বস্তুত নামে ‘জাতীয় সড়ক’ হলেও চৌত্রিশ নম্বরের দশা যে জায়গায়-জায়গায় গ্রামের মেঠো রাস্তার চেয়েও খারাপ, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তা টের পেয়েছেন। মাস দুয়েক আগে মমতা সড়কপথে নদিয়া-মালদহ সফরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে মহাকরণে দাঁড়িয়ে তিনি এনএইচএআই-কে তোপ দেগে বলেন, “গোটা রাস্তাটা খালবিলে পরিণত হয়েছে।”
এনএইচএআই পাল্টা রাজ্যের দিকে আঙুল তুলছে। এক কর্তার ব্যাখ্যা, “দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার গাড়ির চাপ সহ্যের উপযোগী করে রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। এখন রোজ গড়ে ২৬ হাজার গাড়ি চলে। নতুন লেন না-হলে মেরামতির খরচ বাড়তে থাকবে। এবং এমন একটা সময় আসবে, যখন আর সারানোও যাবে না!” কিন্তু জমি অমিল হওয়ায় নতুন লেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই ধোঁয়াশা। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বারাসত থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করেছে এনএইচএআই। বারাসত-ডালখোলা রাস্তা সম্প্রসারণেরও ওই হাল হলে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ মূল সড়ক যোগাযোগই মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এই অনিশ্চয়তা কাটানোর লক্ষ্যেই আজ আবার মহাকরণে প্রশাসনের হর্তা-কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন এনএইচএআইয়ের কর্তারা। যদিও প্রশাসনের এক সূত্রের মত, গত দেড় বছরে তো এমন দশ-বারোটা বৈঠক হল! কাজের কাজ কিছু হল না! মহাকরণে শত বৈঠক করলেও সমাধান-সূত্র মিলবে না। রাজনৈতিক স্তরেই সুরাহা করতে হবে।
সেই সদিচ্ছার উদয় কবে হয়, তার দিন গুনতে থাকুক চৌত্রিশ নম্বর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.