কাছাকাছি নেই রেশন দোকান। রেশন তুলতে গেলে হাঁটতে হবে বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তা। তবু সেই সমস্যা নিয়ে গত সাত মাস ধরে রেশন তুলতে যাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ ব্লকের কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ। যাতায়াতের পথে নদী পেরোতে হচ্ছে। বেহাল রাস্তায় পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষ রেশন দোকানটিকে কাছাকাছি কোনও এলাকায় স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন। সমস্যার কথা জানিয়েছেন ব্লক খাদ্য ও সরবরাহ পরিদর্শককে। যদিও এখনও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। এর মধ্যে রেশন কার্ড রয়েছে ৫ হাজার ৫৯৫ জনের। দীর্ঘদিন ধরে উত্তর মুদিপাড়া, দক্ষিণ মুদিপাড়া, ডাক্তারঘেরি, উত্তর মুণ্ডাপাড়া, দক্ষিণ মুণ্ডাপাড়া, শীতলমাটি-সহ বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা রেশন তুলছিলেন কঙ্কনদিঘি গ্রামের রায়দিঘি-কঙ্কনদিঘি সংযোগকারী সেতুর পাশে একটি দোকান থেকে। কিন্তু মাস সাতেক আগে ওই দোকান থেকে মালপত্র বণ্টনে কারচুপি ধরা পড়ে। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ওই দোকান থেকে রেশন বণ্টন বেআইনি ঘোষণা করেন। রেশন ডিলার দোকান সরিয়ে নিয়ে যান মণি নদীর কাছে আর একটি দোকানে। দোকানটি পঞ্চায়েতের একবারে শেষ প্রান্তে। তাই গ্রামবাসীদের দাবি, দোকানটিকে পঞ্চায়েত এলাকার মাঝামাঝি কোনও জায়গায় সরিয়ে আনা হোক। যাতে সকলের রেশন তুলতে সুবিধা হয়।
এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। অধিকাংশ পরিবারের পুরুষেরা সকাল হলেই চলে যান মাছ-কাঁকড়া ধরতে বা জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে। ফলে, রেশন তোলার দায়িত্ব নিতে হয় বাড়ির মহিলাদের।
লক্ষ্মী সর্দার, পদ্মরানি সর্দার, কামিনী সর্দারের অভিযোগ, রেশন দোকান সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চরম অসুবিধায় পড়ে গিয়েছি। অথচ রেশন না নিলে চলবে না। বাধ্য হয়ে সারা দিনের কাজ ফেলে ছুটতে হচ্ছে দোকানে। যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হয়। এতে অনেক সময় যায়। বর্ষায় সমস্যা আরও বাড়ে। রাস্তাঘাট কাদায় ভরে যায়। উত্তর মুদিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভরত বৈদ্যের অভিযোগ, “এলাকার দুঃস্থ পরিবারগুলি রেশন তোলার টাকা জোগাড় করতেই হিমসিম খায়। তার উপর প্রায় ৮ কিলোমিটার গিয়ে রেশন তুলতে হচ্ছে। সমস্যার বিষয়ে ব্লক খাদ্য ও সরবরাহ পরিদর্শককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”
রেশন তোলার সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েতের এসইউসি প্রধান অময় সর্দার। তিনি বলেন, “রেশন দোকান সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা সমস্যায় পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই খাদ্য ও সরবরাহ পরিদর্শকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
ব্লক খাদ্য ও সরবরাহ পরিদর্শক শিবনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |