নিত্যযাত্রীদের ‘মৌরসিপাট্টা’ ভাঙার উদ্যোগে খুশি
মুর্শিদাবাদবাসীর স্বার্থে ৮০-র দশকের শুরুতেই তৎকালীন রেলমন্ত্রী এ বি এ গণি খান চৌধুরী ‘সিরাজ এক্সপ্রেস’ চালু করেন, যা পরে ভাগীরথী এক্সপ্রেস নামে পরিচিত হয়েছে। শুরুতেই সিরাজ এক্সপ্রেসে প্যান্ট্রি-কার ছিল। কামরার জানালায় ঝুলত রঙিন পর্দা। পরে পর্দা খুলে নেওয়া হয়। প্যান্ট্রি-কারের কামরাও সরে যায়। সেই সঙ্গেই, এই ট্রেনের মুর্শিদাবাদের যাত্রীদের অভিযোগ, কৃষ্ণনগর পৌঁছলেই সেই ভাগীরথী এক্সপ্রেস ‘চলে যায়’ কিছু নিত্যযাত্রীর ‘হাতে’। তাঁদের অভিযোগ, ভাগীরথী এক্সপ্রেস বা লালগোলা প্যাসেঞ্জার কোনও কোনও স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ঢোকা মাত্র চলন্ত ট্রেনে হুড়মুড় করে অনেকে উঠে বসে চোখের পলকে সাধারণ কামরার প্রতিটি আসন দখল করে নেন। তারপরে আসনের উপরে তাস-খবরের কাগজ-কাগজের টুকরো-দেশলাই-সিগারেটের প্যাকেট-ব্যাগ ফেলে রেখে জায়গা ‘দখল’ করে নেওয়া হয়।
চোখ রাঙানি, কটূক্তি
তাই রেল দফতর সম্প্রতি আসন দখল করলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে ঘোষণা করায়, রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর শহর বহরমপুরের সাধারণ রেলযাত্রীরা খুশি। বহরমপুরের অনেক নিয়মিত ট্রেনযাত্রীর দাবি, কেউ আসন দখল করার বিরোধিতা করলে তাঁকে সকলের সামনে হেনস্থা হতে হয়। কল্যাণী-চাকদহ-রানাঘাট-কৃষ্ণনগরের নিত্যযাত্রীদের একাংশ দল বেঁধে থাকেন। তাই দলে ভারি ওই নিত্যযাত্রীদের ‘কথা’ই শুনতে হয় বাধ্য হয়ে। নিত্যযাত্রীদের ‘দখল’ করা আসনে সাধারণ কোনও যাত্রী বসতে গেলে তাঁকে নিত্যযাত্রীদের চোখ রাঙানির মুখে পড়তে হয়। অশালীন আচরণ থেকে কটূক্তি, এমনকী মারধরও করা হয় বলে সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ। বহরমপুরের বাসিন্দা রেলকর্মী অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, “রেল যে আসন দখল করা বন্ধ করে উদ্যোগী হয়েছে, তাতে সাধারণ যাত্রীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। রেলের এই উদ্যোগই জানিয়ে দিচ্ছে, আমাদের অভিযোগগুলি মিথ্যা নয়।” তাঁর কথায়, “চাকদহ-রানাঘাট-কৃষ্ণনগরের কিছু নিত্যযাত্রী কাউকে তোয়াক্কা করেন না। মহিলা ও শিশুদের সামনেই অশালীন আচরণ থেকে অসভ্য কথাবার্তা আলোচনা করে। হুল্লোড়ে মেতে ওঠা থেকে অশ্রাব্য গালিগালাজ চলে। দলবদ্ধ থাকে বলে কেউ-ই প্রতিবাদ করে না। এতে তাদের সাহস আরও বেড়ে গিয়েছে।” সংরক্ষিত কামরার মধ্যে উঠেও তিন জনের আসনে জোর করে পাঁচ জন বসেন। প্রতিবাদ করলে লাভ হয় না।

আড্ডায় কাটে যাত্রাপথ
তবে মুর্শিদাবাদের নিত্যযাত্রীদের কেউ কেউও কম যান না। অনেকে স্বীকারকরে নিয়েছেন, তাঁরা জায়গা ‘দখল’ করেন। বেথুয়াডহরি কৃষি দফতরের এক কর্মী মুর্শিদাবাদ স্টেশন থেকে ভাগীরথী এক্সপ্রেসে ওঠেন। তিনি স্বীকারও করেন, “ভাগীরথীর শেষের দিক থেকে তিন নম্বর কামরার মাঝের গেটের ডান পাশের ‘গলি’ অর্থাৎ মুখোমুখি আসনে বসি। প্রতি দিন ৬-১০টি আসন নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করি। কোনও কোনও দিন সিটই পাই না। তখন বিক্ষিপ্ত ভাবে বসতে হয়। সেটা আলাদা কথা। তবে এক সঙ্গে বসতে পারলে আড্ডা হয়। তাসও রয়েছে। এতে যাত্রাপথের সময় কেটে যায়।”

কাগজ পড়ল পিছনে
এই ‘অত্যাচারে অতিষ্ঠ’ কৃষ্ণনাথ কলেজ অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। নিত্যযাত্রীরা তাস ফেলে আসন দখল তো করেনই, অসভ্য গালিগালাজও করে।” কলকাতায় নিজের বাড়ি যাতায়াতের সুবাদে নিত্যযাত্রীদের সম্বন্ধে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বেসরকারি সংস্থার কর্মী ঈশিতা দে সরকারের। তিনি বলেন, “ভাগীরথীর একটি আসন ফাঁকা দেখে বসা মাত্রই কোথা থেকে এক নিত্যযাত্রী এসে হাজির হন। বলেন ‘এখান থেকে উঠুন, আমাদের জায়গা রয়েছে এখানে।’ তাঁর উদ্ধত ভঙ্গি দেখে আমি কোনও কথা না বলে উঠে মহিলাদের কামরায় চলে যাই।” সরকারি কর্মী অরিজিৎ রায়ের অভিজ্ঞতা আরও করুণ। তিনি বলেন, “এক দিন ফেরার সময়ে জানালার পাশে ফাঁকা আসনে ভাগীরথীতে বসে আছি। আচমকা পিছন দিক থেকে এসে এক নিত্যযাত্রী আমার পিঠের দিকে খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে বলেন, ‘অনেক আগে থেকে জায়গা রাখা আছে, উঠুন।’ তাঁর সঙ্গে বচসাও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি আসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হই।” মুর্শিদাবাদ চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক অজয় কুমার সিংহ বলেন, “অনেক সময়ে কারশেড থেকেই নিত্যযাত্রীরা ট্রেনে জায়গা দখল করে রাখেন। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে নিত্যযাত্রীরা এসে নির্লজ্জের মত দখল করে রাখা সিটে বসে পড়েন। আর মহিলা-শিশু-অসুস্থ রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনি বসার জায়গা পাবেন না।”

সহানুভূতির সঙ্গে দেখুন
বেঙ্গল রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পুণ্ডরীকাক্ষ কীর্তনীয়া অবশ্য দাবি করেছেন, ‘সহানুভূতি’র সঙ্গেই বিষয়টি দেখতে হবে। তাঁর কথায়, “বহরমপুরের নিত্যযাত্রীরা চার-চার আট ঘন্টা নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাঁরা অনেকেই কলকাতা ঘুরে কাজ করেন। এর পরেও তাঁদের দীর্ঘ সময় যদি ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতে হয়, তাহলে সেটা অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাই তাঁদের আসন দখল করে রাখতেই হয়। তবে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে তাঁরা যে আচরণ করে থাকেন, তা ঠিক নয়। সাধারণ যাত্রী ও নিত্যযাত্রীদের মধ্যে বিভেদের পর্দা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। উভয়কেই পরস্পরের সমস্যা সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে।”

অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। নিত্যযাত্রীরা তাস ফেলে
আসন দখল তো করেনই, অসভ্য গালিগালাজও করে।
সোমেশ ভট্টাচার্য,
বহরমপুরের নিত্যযাত্রীরা রোজ চার-চার আট ঘন্টা যাতায়াত করেন। অনেকেই কলকাতা
ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। এর পরেও তাঁদের যদি ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতে হয়, তাহলে সেটা
অসহনীয়। তাই তাঁদের আসন দখল করে রাখতেই হয়।
পুণ্ডরীকাক্ষ কীর্তনীয়া,

(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.