বিশ্বাসের খড়কুটো আঁকড়ে রাহুমুক্তির চেষ্টা নিঃসঙ্গ শিল্পীর
তাঁর আর কিছু পাওয়ার নেই। বরং হারানোর আছে অনেক কিছু।
রিকি পন্টিং অবসর নিলে প্রশ্ন ওঠে, এ বার তিনিও তো নিলে পারেন। অনেক হল, আর কেন?
প্রাক্তনদের খোঁচায় রোজ বিদ্ধ হতে হয় তাঁকে। সুনীল গাওস্কর অক্লেশে বলে দেন, “বয়স হয়েছে তো, ফুটওয়ার্ক মন্থর হয়ে গিয়েছে ওর।” সংবাদমাধ্যম ওত পেতে থাকে সেই মর্মান্তিক দৃশ্যের ‘রিপিট টেলিকাস্ট’-এর। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্প ছিটকে যাচ্ছে তাঁর।
আজ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতীয় নির্বাচক প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তেইশ বছরের কঠোর ক্রিকেটসাধনা, সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার পরেও এমন দিন দেখতে হয়।
এক কথায়, ক্রিকেট-জীবনের সবচেয়ে দুর্গম সন্ধিক্ষণে আজ দাঁড়িয়ে তিনি। সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। রেকর্ডের এভারেস্টে যেমন একা, ব্যর্থতার পাতালেও তিনি নিঃসঙ্গ। ক্রিকেটদেবতা আজ নিছকই রক্তমাংসের মানুষ, বন্দি হন কুসংস্কারে।
রান চাই রান! সচিনের যন্ত্রণা কি ঘুচবে ইডেনে? নিজস্ব চিত্র
নইলে তাঁর ‘পয়া’ ব্যাট সারাতে ইডেন ড্রেসিংরুমে ডাক পড়ে ছুতোরের? জরাজীর্ণ আর্মগার্ড মেরামত করতে পড়ে দর্জির খোঁজ?
ঘড়ি বলছে, সকাল ন’টা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মর্যাদাযুদ্ধ শুরুর আগে ইডেনে শেষ প্রস্তুতিতে নামছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। যে মহাযুদ্ধে সম্ভবত শেষ বার ভারতীয় জার্সিতে সচিন নামছেন ইডেনে। আর হয়তো ক্লাবহাউসের সামনের লন দিয়ে বেরিয়ে আসবে না ওই সাড়ে পাঁচ ফুটের শরীর। গ্যালারির পাগল চিৎকারে স্নান করে গার্ড নিতেও বোধহয় আর দেখা যাবে না। এই শেষ।
শেষের শুরুটাও কেমন অদ্ভুত। ড্রেসিংরুমে ঢুকেই দু’টো জিনিস চেয়ে বসলেন লিটল মাস্টার।
তাঁর পয়া ব্যাটের তলদেশে অতি সামান্য চিড় চোখে পড়েছে। অতএব ছুতোর চাই।
শতজীর্ণ আর্মগার্ডে সেলাই দরকার। দর্জি ডাকো।
সচিনের এই আবদার শুনে অবাক হয়ে যান ড্রেসিংরুমে উপস্থিত কেউ কেউ। কিন্তু তাঁর পৃথিবীটাই যে আলাদা। অসাধারণ। যতক্ষণ না ছুতোর এসেছে, ব্যাটটা আগলে রেখেছেন সচিন। দর্জি সরঞ্জাম ভুলে ফেলে এসেছেন, অধৈর্য হয়ে লিটল মাস্টারের ডাক, “আরে, আমার কাছেই তো সব আছে!” বলে নিজেই ব্যাগ খুলে বার করেছেন সেলাইয়ের যাবতীয় সরঞ্জাম। উপস্থিতের দল তখন বিস্ময়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট।
জয় হে: আজ শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ।
মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে তারই প্রস্তুতি। ছবি: উৎপল সরকার।
ভারতীয় ক্রিকেট-ইতিহাসে কুসংস্কারের উদাহরণ কম নয়। মোহিন্দর অমরনাথ পকেটে লাল রুমাল রাখতেন। বিশ্বজয়ের রাতেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মাথা মুড়িয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তা বলে তল্পিতল্পা শুদ্ধু ছুতোর-দর্জিকে ড্রেসিংরুমে ডাক? চরম আশ্চর্যের।
এমন দমবন্ধ টেনশন কাটাতেই যেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে, একই সঙ্গে নিজের ফর্মের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধের আগে অনুশীলন-সূচি সামান্য শিথিল করে দিলেন মিস্টার ইন্ডিয়ান ক্রিকেট। ড্রেসিংরুমের মিউজিক সিস্টেমে বাজতে থাকা ভজনের সঙ্গে মাঝে মাঝে তাঁর শিস। এলসিডি-তে চলা পুরনো ক্রিকেট ম্যাচের সামনেও ঠায় বসে তিনি। নির্যাসটা ধরতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। বাইশ গজের চাপ থেকে মনকে অন্তত চব্বিশটা ঘণ্টা দূরে রাখা। যতটা পারা যায়।
কিন্তু তাতে ক্রিকেট-দুনিয়ার চলবে কেন? মঙ্গলবার দুপুরের এক ক্রিকেট-আড্ডাকেই ধরা যাক। সৌরভ থেকে সিধু, কপিল থেকে রামিজ রাজা সবার কাছেই প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, সচিন কি অবসর না নিয়ে ঠিক করছেন? তিতিবিরক্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যা শুনে বলতে হল, “এক বার ওকে তিরিশ পেরোতে দিন। তার পর দেখুন।”
দেখতেই তো চায় ইডেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.