শুধু এ রাজ্যই নয়, ভিনরাজ্য এবং বিদেশ থেকেও শীতের মরসুমে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু রাজ্যের পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য হলেও পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যার কারণে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা পর্যটকদের বিশেষত বিদেশি পর্যটকদের স্বার্থে এই সব সমস্যার আশু সমাধান না হলে সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হবে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা দুই জেলা থেকেই সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বেড়ানোর জন্য পর্যটকেরা মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমা দিয়েই যাতায়াত করেন। সড়কপথ কিংবা ট্রেন, যে কোনও ভাবেই এখানে আসা যায়। আর এখান থেকেই সমস্যার শুরু। ক্যানিং, সোনাখালি, গদখালি ও ঝড়খালিএই চারটি জেটিঘাট থেকে লঞ্চে চেপে পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই জেটিঘাটগুলির অবস্থা ভাল নয়। বেশিরভাগ জায়গাই ভেঙে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। |
দেশি-বিদেশি পর্টকদের জন্য সুবিধার্থে জেটিঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। নেই পানীয় ও শৌচাগারের সুবিধা। গত বছর জেটিঘাটের শোচনীয় অবস্থার কারণে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন একজন পর্যটক। একই অবস্থা সুন্দরবনের দিকের জেটিঘাটগুলিরও। পর্যটনের স্বার্থে এবং দুর্ঘটনায় পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনার পরেও জেটিঘাটগুলির উন্নতির দিকে প্রশাসনের কোনও নজর নেই বলে অভিযোগ পর্যটন শিল্পে নিযুক্ত ব্যবসায়ীদের।
শিলিগুড়ি থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে এসেছিলেন দেবারতি রায় চৌধুরি, বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য রায়চৌধুরীরা। বেড়ানোর অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তাঁরা বলেন, “ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা সুন্দরী সুন্দরবনকে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। জেটিঘাট পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তার হাল শোচনীয়। তার উপর দীর্ঘক্ষণ অটো, ট্রেকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জেটিঘাটগুলির অবস্থাও ভাল নয়। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগার। আলোর অবস্থাও খারাপ। রাজ্যের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য। কিন্তু পর্যটকদের সুবিধার্থে পরিকাঠামোর উন্নতি না করা হলে পর্যটকেরা এখানে আসার আগ্রহ হারাবেন।” রাস্তা, জেটিঘাট ছাড়াও আর এক সমস্যা হল দূষণ। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ব্যবহৃত থালা, গ্লাস ইত্যাদি জিনিস কোথায় ফেলা হবে তার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের সভাপতি হরেন ঘড়ুই বলেন, ‘‘পর্যটকদের ব্যবহৃত থালা, গ্লাস-সহ অন্যান্য আবর্জনা নদীতে ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এই সব আবর্জনা ফেলার নিদিষ্ট জায়গা নেই।” |
ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, ‘‘রাস্তার সমস্যার কথা জানি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু করা হবে।’’ বনবিভাগের ডিএফও লিপিকা রায় বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সাধ্যমত জেটিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারি করে থাকি। আলো, পানীয় জল, শৌচাগারের বিষয়টি দেখে জেলা প্রশাসন।” এই বিষয়ে জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “ইতিমধ্যেই সোনাখালিতে জেটিঘাটে আলো ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য সমস্যাগুলিও সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পরিকাঠামোগত এই সব সমস্যার সমাধান না হলে তা কতদূর সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। |