মরুভূমি, দুর্গ, প্রাসাদ আর পাহাড়
ধ্যরাতে চেপে বসেছিলাম অজমের এক্সপ্রেসে। দিনটা ২৬ অক্টোবর। দলে মোট ৪০ জন। পরের দিন ভোর ৪টা নাগাদ নামলাম জয়পুর স্টেশনে। হোটেলে পৌঁছে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুরের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান দর্শনে।
প্রথমেই পৌঁছলাম মহারাজা সোয়াই প্রতাপ সিংহ নির্মিত হাওয়া মহলে। প্রাসাদের খিলানগুলি এমন ভাবে সাজানো যেন রাজ পরিবারের অন্তঃপুরিকারা গল্প করতে করতে রাজপথের শোভা দেখতে পারেন। কিন্তু বাইরে থেকে তা টের না পাওয়া যায়। গোলাপি রং ও পাথরে নির্মিত বাড়িগুলির জন্য ইংরেজরা জয়পুরকে ‘পিঙ্ক সিটি’ নাম দিয়েছিলেন। এর পরে পৌঁছলাম গেলাম সিটি প্যালেস। প্যালেসের প্রতিটি ঘর, বারান্দা কারুকাজে ভরা। জয়পুরী শিল্পকর্ম, বহুমূল্য জরির কাজ, রানিদের পোশাক, মানসিংহ, শাহজাহান ব্যবহৃত বিশাল তরবারি ও অন্য অস্ত্রশস্ত্র দেখার মতো। বিকেলে মহারাজা মানসিংহের মহল অমর দুর্গে পৌঁছলাম। প্রাসাদে ব্যবহৃত সমস্ত কাঠই চন্দন কাঠ। সেই যুগে কী ভাবে বৃষ্টির জল শোধন করে সারা বছরের পানীয় জল হিসেবে তা ব্যবহার করা হতো তার নমুনা দেখলাম। দুর্গের পাশেই যশোরেশ্বরী কালীমূর্তি। অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানসিংহ। মন্দিরের বিশালাকৃতি রুপোর দরজাটি খুবই সুন্দর।

মরুযান।
পরের দিন পুস্করের পবিত্র জল স্পর্শ করে ভারতের একমাত্র ব্রহ্মামন্দির দর্শন করলাম। মূল মন্দিরটি ঔরঙ্গজেবের হাতে ধ্বংস হওয়ার পরে গোকুল পারেখ নতুন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। পুস্করের গায়ে বিষ্ণুমন্দিরে ৫০ কেজি সোনার পাতে মোড়া তালগাছ আকর্ষণীয়। বিকেলে অজমেরের খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। দেশের বাইরেও বহু মানুষের কাছে এই দরগা আকর্ষণীয়। অজমের শহরে অবস্থিত পার্বত্য বনানি ঢাকা আনাসাগর হ্রদটি কৃত্রিম হলেও মনোরম।
পরের গন্তব্য উদয়পুর। পথে পড়ল চিতোরগড়। যেখানে রানা কুম্ভ নির্মিত ১২০ ফুট উঁচু বিজয় স্তম্ভ বীরত্বের প্রতীকরূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একে একে মীরাবাঈয়ের মন্দির, পদ্মিনীর প্রাসাদ, গোমখীকুণ্ড ইত্যাদি দর্শন করলাম। সন্ধ্যায় পৌঁছালাম উদয়পুর। সেখানেই রয়েছে গ্রানাইট ও শ্বেত পাথরের কারুকাজ শোভিত রাজস্থানের বৃহত্তম প্রাসাদ সিটি প্যালেস। যা দেখলেই মন ভরে যায়। রোপওয়ে চেপে নবনির্মিত করণীমাতা মন্দিরে যাওয়ার পথে উদয়পুর শহরকে মনে হয় কোনও পটে আঁকা ছবি।

উদয়পুরের সিটি প্যালেস।
এ বার যাত্রা শুরু হল রাজস্থানের একমাত্র শৈল শহর মাউন্ট আবুর উদ্দেশে। আরাবল্লি পর্বতের উপরে পাহাড় ও সবুজে ঘেরা মাউন্ট আবুর খ্যাতি ভারত জোড়া। রাজাদের গ্রীষ্মাবাস, শিব মন্দির, মাতাজি মন্দির, আবু লেক দর্শন করলাম। সবশেষে দিলওয়ারা জৈন মন্দির সকলের মন জয় করে নিল। মন্দিরে মার্বেল পাথরের গায়ে খোদাই করা কারুকাজ অপূর্ব।
মরুভূমির অভ্যন্তরে অবস্থিত জয়শলমীরের প্রকৃতি, প্রাসাদ, দেওয়াল প্রভৃতি যেন হলুদের বিচিত্র সমারোহ। শহরটি ‘গোল্ডেন সিটি’ নামে পরিচিত। এখানেই আসল মরুভূমির দেখা মেলে। দেখা হল সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লার সেই কেল্লার সঙ্গেও। বিকেলে শ্যাম স্যান্ড ডিউনস গেলাম।
উটের পিঠে চেপে বালিয়ারিতে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। রাতে স্থানীয় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখা ও মরূভূমির তাঁবুতে রাত কাটানোর আনন্দ ভোলার নয়।
পরের দিন বিকানিরের জুনাগড় কেল্লা দর্শন সেরে বাড়ির পথে যাত্রা করলাম। এক ঝাঁক স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম চেনা গণ্ডীতে।

পুস্কর।

(ছবিগুলি লেখকের পাঠানো)

লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত। লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে।
খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’ লিখে পাঠিয়ে দিন:
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি, সিটি সেন্টার,
দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।

অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)।
ছবি মেল করতে চাইলে:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.