চালকের দু’দিকে দু’জন করে ৪ জন যাত্রী। পিছনের আসনে ৪ জন। ওই আসনের মুখোমুখি চালকের ঠিক পেছনেও তক্তা পাতা। সেখানে গাদাগাদি করে বসে ৪ জন। একেবারে পিছনে একটি তক্তা পেতে ৪ জনের বসার ব্যবস্থা। এখানেই শেষ নয়। ঝুলতে দেখা যায় আরও কয়েজনকে। চার আসনের ছোট অটো এ ভাবেই অতিরিক্ত যাত্রী তুলে চাঁচলের বিভিন্ন রুটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গাড়ি উল্টে আকছার দুর্ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত দিন যন্ত্রচালিত ভ্যানের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কয়েক মাসে অটোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুধু নিয়মের তোয়াক্কা না করে দাপিয়ে বেড়ানো নয়, শহরে দূষণের সমস্যাও বেড়েছে। চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পিনাকীরঞ্জন দাস সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “কয়েক মাসে প্রচুর অটো রাস্তায় নেমেছে। ফলে শহরে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।” কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? ওই পুলিশ কর্তারা আশ্বাস, “অতিরিক্ত যাত্রী তোলার পাশাপাশি অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে দ্রুত অভিযান শুরু হবে।” প্রশ্ন উঠেছে প্রাণ হাতে নিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত নিয়েও। কেন তাঁরা বিপদ বুঝেও এ ভাবে যাতায়াত করছেন? যাত্রীদের সাফাই, হরিশ্চন্দ্রপুর, সামসি, স্বরূপগঞ্জ, আশাপুর রুটে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কম। সরকারি বাস নেই বললে চলে। সন্ধ্যার পরে বাসের দেখা মেলে না। তাই বিপদ বুঝেও ভরসা হয়েছে অটো। ফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। সম্প্রতি বিরস্থলী এলাকায় অটোর ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। আশাপুর থেকে অটোয় চেপে চাঁচলে ফেরার পথে অটো উল্টে গুরুতর জখম হন ১০ জন স্কুল শিক্ষক। এত দুর্ঘটনার পরেও এক দিকে যাত্রীদের যেমন অভ্যাসের পরিবর্তন হয়নি, অন্য দিকে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারাও রাস্তায় নামেননি। তাই দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাসে চাঁচলে অটো রিকশার সংখ্যা দেড়শোয় দাঁড়িয়েছে। চালকদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এত দিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বই বা কী করছেন! আরও অভিযোগ রয়েছে অটোচালকদের অধিকাংশ আইএনটিইউসি সংগঠনের সদস্য। সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি ওই সংগঠনের নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁরাও সমস্যা সমাধানের দায় পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে চাপিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে তৎপর হয়েছেন। যেমন, সংগঠনের চাঁচল-১ ব্লক সভাপতি দেবব্রত ভোজ বলেন, “নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। আমাদের এতে কী করার আছে!” |