আমন্ত্রণে আমরা-ওরা, অসৌজন্যের নয়া বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী
রাজনীতি এবং প্রশাসনে অসৌজন্যের নতুন নজির দেখল মুখ্যমন্ত্রীর পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জেলা সফর। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে প্রথমে আমন্ত্রণ জানিয়েও বৈঠকে না-যেতে অনুরোধ করা হল বামফ্রন্ট বিধায়কদের! একেবারেই আমন্ত্রণ জানানো হল না আর এক বিরোধী পক্ষ কংগ্রেসের বিধায়কদের!
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ব্রাত্য বিধায়কদের অনেকেই খাস জঙ্গলমহলের কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। দুই জেলারই বাম বিধায়কদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে প্রথমে ফোন করে আমন্ত্রণ জানালেও পরে আবার ফোন করে ‘না’ করা হয়েছে। আর কংগ্রেস বিধায়কদের অভিযোগ, তাঁরা ফোনই পাননি। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে সোমবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন শাসক দল তৃণমূলের বিধায়কেরা।
শুধু বিরোধী বিধায়কেরাই নন, বামফ্রন্টের দখলে থাকা দুই জেলা পরিষদের সভাধিপতিও ‘আমরা-ওরা’র রাজনীতির সৌজন্যে আমন্ত্রণ পাননি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে। অথচ জেলায় প্রশাসনিক স্তরে সভাধিপতির পদই সর্বোচ্চ। এই ঘটনার জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে শিষ্টাচার এবং শালীনতার সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরিই অভিযোগ করেছেন, “সরকারি খরচে জেলায় জেলায় গিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন মুখ্যমন্ত্রী!”
গত বছর নভেম্বরে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া সফরে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে ডাক পাননি কোনও দলেরই বিধায়ক। এ বার তা হলে অন্য ছবি কেন? মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, এই বৈঠক ছিল পুরোপুরি প্রশাসনিক। তাই ডাকা হয়নি কোনও বিধায়ককেই। তাঁর বক্তব্য, “তবে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসেছেন বলে আমাদের দলের বিধায়কেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র
সুব্রতবাবু এ কথা বললেও ঘটনা হল, পুরুলিয়ার তৃণমূল বিধায়কদের জেলা প্রশাসন রীতিমতো চিঠি দিয়ে বৈঠকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাঁকুড়ার দলীয় বিধায়কেরা আবার ফোন পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় ও জেলাশাসকের দফতর, দু’জায়গা থেকেই। তৃণমূল বিধায়কেরা এ দিন বৈঠকে থেকে নিজেদের এলাকার সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধী বিধায়কদের ক্ষোভ, জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে তাঁদেরই ব্রাত্য করে রাখা হল!
প্রশাসনের আচরণে ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর বক্তব্য, “আগে ওঁরা আমাদের ডাকতেন না। হুগলি থেকে শুরু হল ফোনে আমন্ত্রণ জানানো। তখন বলেছিলাম, বৈঠকের বিষয়বস্তু জানিয়ে চিঠি ছাড়া যাওয়া যায় না। এ বার ফোনে আমন্ত্রণ করে ফোনেই মানা করা হল!” বিধায়কদের প্রতি শালীনতা, শিষ্টাচারের সীমা ছাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “এর পরেও বলবেন, ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট এ সব করত?” বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানির মতে, “এই সরকার খামখেয়ালিপনার উপরে চলে! সংবিধান, রীতি-নীতি মানে না। তাদের কাছে অন্য কিছু প্রত্যাশা করাও কঠিন!”
প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একদলীয় শাসন বাংলায় কায়েম করছেন। এই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালাতে গিয়ে সিপিএম বাংলা ছাড়া হয়েছে। যে রাস্তা দিয়ে তৃণমূল যাত্রা শুরু করেছে, এদের অবস্থা কিছু দিনের মধ্যেই সিপিএমের মতো হবে!”
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরা, জয়পুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোর দাবি, ২৯ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তাঁদের ফোন করে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হলেও পর দিনই বলা হয়, যেতে হবে না। একই কথা জানিয়েছেন বাঁকুড়ার দুই সিপিএম বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন কিস্কু ও দেবলীনা হেমব্রম। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদারের কটাক্ষ, “সরকারি টাকায় দলীয় সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করলেন মুখ্যমন্ত্রী!” পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতোর মন্তব্য “বিধায়ক নিজের এলাকা চেনেন। এর পরেও যদি মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন এলাকার বিধায়কদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব, উনি করুন। আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোই রয়েছে!”
আমন্ত্রণে ‘আমরা-ওরা’র পাশাপাশিই এ দিন বিতর্ক বেধেছে সরকারি জনসভায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যকে ঘিরে। পুরুলিয়ার হুটমুড়া ময়দানে ভিড়ে ঠাসা ওই সভা দিয়ে মমতা আসলে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারই শুরু করে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত। ওই সভাতেই মমতা বলেছেন, “কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট। ৫০% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। মা-বোনেদের পঞ্চায়েত হবে। গুন্ডা, হার্মাদদের পঞ্চায়েত নয়!” সরকারি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী কী করে ‘হার্মাদ’ কথাটি বললেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.