জলাশয় ভরাটের অভিযোগে আরামবাগে গ্রেফতার ২ জন
দৃশ্যত এবং আকারগত ভাবে পুকুর। কিন্তু ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডে লিপিবদ্ধ ‘বাস্তুজমি’ হিসাবে। এ রকমই বিঘা খানেক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি জলাশয় প্রোমোটারির জন্য ভরাট করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন আরামবাগের এক ব্যবসায়ী। রবিবার রাতে শেখ জিয়াউর রহমান ওরফে হীরা নামে ওই ব্যক্তিকে পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁরই নিজস্ব হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাঁকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আরামবাগ মহকুমা আদালতের বিচারক।
আরামবাগ থানার অদূরে গৌরহাটি মোড়-সংলগ্ন জীবনবিমা নিগম বিল্ডিংয়ের ঠিক পিছনেই ওই জলাশয়টি নভেম্বর মাসের গোড়া নাগাদ কয়েক দিনের মধ্যে বালি ফেলে ভরাট করা হয়। স্থানীয় মানুষ বিষয়টি জানান পুরসভাকে। জায়গাটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডে ‘বাস্তু’ হিসাবে নথিবদ্ধ থাকায় পুরপ্রধান গোপাল কচ বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানান।
গত ৩০ নভেম্বর মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি থানায় এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, জলা ভরাট-সংক্রান্ত আইন না মেনে ওই জলাশয় প্রোমোটারির উদ্দেশে ভরাট করার জন্য গ্রেফতার করা হয় জিয়াউরকে। অভিযুক্ত বালি সরবরাহকারী সামসুদ্দিন আহমেদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ, মঙ্গরবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু জলাশয় ভরাট জামিন-অযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর জামিন পেলেন কী ভাবে?
এখানেই ছিল জলাশয়। —নিজস্ব চিত্র।
জিয়াউরের আইনজীবী তপন হাজরা জানান, যেহেতু ওই অংশটি ‘বাস্তু’ হিসাবে সরকারি নথিতে আছে, সে কারণেই জামিনে পেয়েছেন তাঁর মক্কেল।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত সত্তর বছর ধরে ওই এক বিঘা অংশে পুকুর দেখে আসছেন এলাকার মানুষ। স্নান সারেন অনেকে। বাসন মাজার কাজেও ব্যবহার হয় ওই পুকুরের জল। মাছ চাষও হয়েছে এর আগে। সর্বোপরি শহরের কোথাও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বহু ক্ষেত্রে এই পুকুরের জল ব্যবহার করেছে দমকল। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাতারাতি বালি ফেলে ওই জলাশয়টি জমিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এতে শহরের পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
জলাশয়টির মালিক স্থানীয় ভবাণী দত্তের পরিবারের দাবি, ‘বাস্তু’ বলে রেকর্ডে (দাগ নম্বর ৪৬৫) থাকলেও শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল থাকায় জল জমে থাকত। দেখতে পুকুরের মতোই। সরকারি নথিতে ‘বাস্তু’ হিসাবে উল্লেখ থাকায় বহু বার বিক্রির চেষ্টা করেও খদ্দের পাননি। জিয়াউর নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন। সমস্ত বিষয়টি জেনেই কিনেছিলেন। জিয়াউরও বলেন, “বাস্তু হিসাবে দলিল-পরচা দেখেই জায়গাটি কিনেছি। বেআইনি ভাবে কিছু করিনি। আমি যখন ওই জায়গা কিনি, পুকুরের কোনও চিহ্নও দেখতে পাইনি। নোংরা আবর্জনা ফেলে পুরো এলাকাটি দূষিত করে রাখা হয়েছিল। জমিটি সংস্কার করে শহরকেই সুন্দর করতে চেয়েছি।”
সরকারি নথিতে ‘বাস্তু’ অথচ দৃশ্যত জলাশয় এ রকম একটি বিভ্রান্তিকর বিষয় নিয়ে কী বলছে প্রশাসন?
হুগলি জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎ সাহা বলেন, “আমাদের দফতরের ১৭-এ ধারায় আছে, কোনও জমিতে বছরে ছ’মাসের বেশি জল জমে থাকলে বা মাছ চাষ হলে সেটা পুকুর হিসাবেই গণ্য হবে। এ ধরনের জায়গা নিয়ে কোনও তথ্য পেলে আমরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে জলাশয় হিসাবে সংশ্লিষ্ট জায়গাটি সংরক্ষণের সুপারিশ করি। এ ধরনের কোনও জায়গা ভরাট হলে বিডিও, পুরপ্রধান, মহকুমাশাসক প্রমুখ আধিকারিকদের এফআইআর করার অধিকার আছে।” কিন্তু এই বিভ্রান্তি তৈরি হল কেন? কেন ওই জলাশয় সরকারি নথিতে বাস্তুজমি হিসাবে লিপিবদ্ধ থাকবে? মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক লক্ষ্মণচন্দ্র ঘোষের বক্তব্য, “জায়গাটির চরিত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.