সংস্কারের অভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে পুরনো দিনের দিঘিগুলি মজে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে, অন্তত ৬টি দিঘি অবহেলায় নষ্ট হয়েছে। অথচ সামান্য উদ্যোগ নেওয়া হলে সেখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের তরফে ওই বিষয়ে একটি প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হলেও লাভ হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি স্থানীয় জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু। যদিও তিনি বলেন, “আর্থিক সমস্যার জন্য দিঘি সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই কাজ করার চেষ্টা চলছে।”
তবে জেলা প্রশাসনের কর্তারা মনে করেন, শুধু সংস্কারের কাজ করে বিশেষ লাভ হবে না। সেগুলি কাজে লাগাতে হবে। ওই ভাবনা থেকে রাজ্য সরকারের কাছে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “দিঘি এবং বানগড় সহ জেলার ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প তৈরি করে সম্প্রতি পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে গঙ্গারামপুরে বানগড়কে কেন্দ্র করে একটি ট্যুরিস্ট লজ তৈরির অনুমোদনের সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু দিঘিগুলির বেশিরভাগ মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়ায় সংস্কারে সমস্যা হচ্ছে।”
বাসিন্দারা জানান, জেলার মধ্যে পুরনো দিঘিগুলির অন্যতম তপন ব্লকের তপন দিঘি, গঙ্গারামপুরের কালদিঘি ও ধলদিঘি, বংশীহারির মালিয়ান দিঘি, আলতা দিঘি, জোড় দিঘি। অন্তত ৬টি সরকারি অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। তপন দিঘির আয়তন প্রায় ১১৪ একর। গঙ্গারামপুরের কালদিঘি ৯৪ একর আয়তনের। মালিয়ান দিঘি, ধলদিঘির আয়তন নেহাত কম নয়। প্রায় ৭০ একর। প্রাচীন দিঘিগুলির প্রত্যেকটি পুরনো দিনের। গবেষকরা জানান, পালযুগের আমলে সেগুলি খনন করা হয়। তপন দিঘির পুরোটা কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে। কালদিঘির একাংশ পাঁকে মজে গিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম না মেনে মাছ চাষের জন্য পঞ্চায়েত ও জেলাপরিষদ থেকে দিঘিগুলি লিজ দেওয়া হচ্ছে। জেলাপরিষদের বিরোধী তৃণমূল সদস্য অখিল বর্মন বলেন, “দিঘিগুলি জেলাপরিষদ সংস্কার করতে পারে। কিন্তু কোনও পরিকল্পনা নেই।” ইতিমধ্যে বালুরঘাটের একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থার তরফে দিঘি সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে। ওই সংস্থার সম্পাদক তিূহনশুভ্র মন্ডল বলেন, “ঐতিহাসিক দিঘি ও প্রত্ন নিদর্শনে ভরা দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো জেলায় একটি বারের জন্য পর্যটন মন্ত্রীকে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।” |