আগেও বস্তিবাসীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সিপিএমের সংগঠন ছিল। সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনে ওই সংগঠনের অনেক দাবিই পূরণ হয়নি। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে বস্তিবাসীদের একটি বড় অংশ যে বামেদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন সেটাও স্পষ্ট হয়েছে। এবার ফের বস্তি এলাকায় পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সংগঠনের নাম ও পতাকার রং খানিকটা পাল্টে ফেলল সিপিএম। শুধু তাই নয়, চিরাচরিত লাল রং ছেড়ে নীলকে বরণ করে নিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
সিপিএম সূত্রের খবর, নতুন ওই সংগঠনের নাম পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি। সংগঠনের পতাকার রং অর্ধেক লাল। বাকিটা নীল। আগামী ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় সমিতির প্রথম রাজ্য কনভেনশনও হবে। তার আগে রাজ্যের জেলাগুলিতে শুরু হয়েছে সংগঠনের সম্মেলন, কনভেনশন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। শনিবার শিলিগুড়িতে সংগঠনের জেলা সম্মেলন হয়। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার বলছেন, “এটি একটি গণ সংগঠন হিসাবে পরিচিতি পাবে। সেখানে লাল রঙের বাইরে অন্য রং ব্যবহারও করা যেতে পারে। তাই বস্তি উন্নয়ন সমিতির ক্ষেত্রে নীল ব্যবহার করা হয়েছে। বাম মতাদর্শের বাইরের মানুষকেও আমরা এই সংগঠনে আনতে চাইছি।” |
দলের নেতারা জানাচ্ছেন, আক্ষরিক অর্থে নীল পতাকা বলতে পানীয় জলের মান, সুরক্ষা, পরিবেশ, তথ্যকে বোঝানো হয়। অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চিলি, চেক প্রজাতন্ত, উত্তর কোরিয়া, নেপালের মত ২৮টি দেশে নানা পতাকায় নীল রঙের ব্যবহার রয়েছে। আর নীলের সঙ্গে যে বিষয়গুলি জড়িত তা বস্তিবাসীদের দাবিদাওয়ার মধ্যেই পড়ে তাই এই রঙের ব্যবহারের একটি যুক্তি রয়েছে। বস্তি উন্নয়ন সমিতির রাজ্যস্তরের নেতা সুখরঞ্জন দে বলেছেন, “রাজ্যের নতুন পরিস্থিতিতে তাই বস্তি সংগঠন এবার জোরদারভাবে গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জমির পাট্টা, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, ভাতা, উচ্ছেদ-সহ বস্তিবাসীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন হবে।”
দলীয় সূত্রের খবর, এর আগে বস্তিবাসীদের নিয়ে ৫০ দশকে সিপিএমের বস্তি ফেডারেশন বলে একটি সংগঠন ছিল। ওই সংগঠনের পতাকা তলে সিংহভাগ বস্তিবাসী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু, বস্তিবাসীরা অনেক জায়গাতেই বসবাসের জমির পাট্টা পাননি। ফলে, অনেক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বস্তিবাসীরা পান না। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “অধিকাংশ বস্তি সরকারি খাস জমি, নদীর চর এবং রেল বা কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ত বিভাগের জমিতে রয়েছে। তাঁদের স্বীকৃতি না থাকায় বেশির ভাগই সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হয়ে আসছেন। আমাদের জমি-সহ সরকারি সুযোগ সুবিধার আন্দোলনকে ঘিরেই হবে।”
|
প্রধান দাবিদাওয়া |
• জমির পাট্টা বা দীর্ঘমেয়াদি লিজ।
• ইন্দিরা, রাজীব আবাস যোজনায় বাড়ি।
• সকলকে বিপিএল এবং রেশন কার্ড।
• পুর এলাকা ভিত্তিক বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ।
• প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর।
• স্বাস্থ্যবিমা, শৌচালয় এবং বিনামূল্যে আলো, জল।
• বস্তিকে ঘিরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সাহায্য।
• উচ্ছেদ ঠেকাতে সরকারি স্বীকৃতি। |
|