বিকেল চারটে। বাগবাজার ঘাট।
সাড়ে চারটে। গিরিশচন্দ্র
ঘোষের বাড়ি।
পাঁচটা। বিনোদিনী দাসীর বাড়ি।
সাড়ে পাঁচটা। স্টার থিয়েটার।
সন্ধে ছ’টা। মিনার্ভা থিয়েটার।
না, কোনও কেউকেটার সফরসূচি নয়, একটি অভিনব নাটকের অভিনয়সূচি। একটিই নাটককে হল থেকে বার করে এনে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পর্ব অভিনয়ের এমন উদ্যোগ শহরে এই প্রথম। নটী বিনোদিনীর জন্মের দেড়শো বছরে তাঁরই জীবন নিয়ে ‘বিনোদিনী’ নাটকটি মঞ্চে, থুড়ি, পথে নামাচ্ছে ‘কসবা অর্ঘ্য’। প্রথম অভিনয় আগামী ৯ ডিসেম্বর, সরকারি নাট্যমেলায়। |
কসবা অর্ঘ্যের নতুন নাটক ‘নটী বিনোদিনী’র মহড়ায় চিত্রা সেন, মায়া ঘোষ ও সীমা ঘোষ। |
পথে নামলেও একে ঠিক পথনাটক বলা যাবে না, পরিভাষায় একে বলে স্পট থিয়েটার। মানে, নাটকের ঘটনাগুলো ইতিহাসে ঘটেছিল যেখানে সেই ‘স্পট’গুলোতেই অভিনয় করতে করতে যাওয়া। অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীদের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরাও অভিনয় দেখতে দেখতে যাবেন। আর ঘোড়ার গাড়িতে সেই যাওয়ার ব্যবস্থাটাও করবে নাট্যদল, জানালেন নির্দেশক
মণীশ মিত্র।
ইতিহাস বলছে, বাংলা নাটককে প্রোসেনিয়ামের ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনার চেষ্টা হয়েছিল এর আগেও। মূলত বাদল সরকার সেই ‘থার্ড থিয়েটার’-এর পথিকৃৎ। আবার বিনোদিনীকে কেন্দ্র করেই জন্ম নিয়েছিল বাংলা নাটকের সম্ভবত উজ্জ্বলতম প্রোসেনিয়াম স্টার থিয়েটার। বহু টাকার ‘অফার’ ত্যাগ করেও যে বিনোদিনী দাসী স্টার থিয়েটারের জন্য সর্বস্ব দিয়েছিলেন, সেই স্টার থিয়েটারের নামও হতে দেওয়া হয়নি তাঁর নামে।
গিরিশচন্দ্র ঘোষের দলের জন্য নাট্যশালা তৈরিতে সেই ১৮৮০-র দশকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন এক তরুণ মারওয়াড়ি ব্যবসায়ী গুর্মুখ রায়। শর্ত ছিল, বিনোদিনীকে তাঁর ‘রক্ষিতা’ হতে হবে। গিরিশচন্দ্রই হাতে করে অভিনেত্রী করেছেন বিনোদিনীকে, সেই কৃতজ্ঞতায় বিনোদিনী রাজি হয়েছিলেন। কথা হয়েছিল, এই আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে নতুন নাট্যশালাটির নাম হবে ‘বিনোদিনী থিয়েটার’, নিদেনপক্ষে ‘বি থিয়েটার’। কিন্তু দাশু নিয়োগী, অমৃতলাল বসু, অমৃত মিত্র এবং গিরিশচন্দ্র ঘোষ রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে নাট্যশালাটির নাম পাল্টে দিলেন ‘স্টার থিয়েটার’। কারণ? এক ‘পতিতা’র নামে নাট্যশালার নাম দিলে ব্যবসা মার খাবে, সংস্কৃতিরও নাকি ক্ষতি হবে! সে স্টার থিয়েটার অবশ্য আজকের স্টার থিয়েটার নয়। ঠিকানা ছিল ৬৮ বিডন স্ট্রিট। সেখানেই ‘চৈতন্যলীলা’য় বিনোদিনীর অভিনয় দেখেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘তোর চৈতন্য হোক’।
বাংলা তথা ভারতীয় নাট্যের ইতিহাসে ‘বি থিয়েটার’ না থাকলেও বিনোদিনী আছেন। বাংলা নাটকের ইতিহাসে পথে নামার এক অভিনব উদ্যোগও শুরু হতে চলেছে
তাঁকে ঘিরেই।
বাংলা রঙ্গমঞ্চ জানে, সেই ‘ক্যাপিটাল’ বি ফর বিনোদিনী, ‘বি’ ফর বিগিনিংও!
|
গণনাট্য সঙ্ঘের জেলা সম্মেলন |
শনি ও রবিবার দু’দিন ধরে ঝাড়গ্রামের বলাকা মঞ্চে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের পশ্চিম মেদিনীপুর দশম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। শনিবার প্রথমে সুসজ্জিত এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ঝাড়গ্রাম শহরে পরিক্রমা করে। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট চিত্রকর ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সম্মেলনে সংগঠনের নতুন জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক হন যথাক্রমে পঙ্কজ চক্রবর্তী ও জয়ন্ত চক্রবর্তী। |