কথা ছিল, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) সমস্ত রাজ্য সড়ক চওড়া করা হবে। একই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তা শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও করেছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিতর্ক এড়াতে শেষ পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি শিকেয় তুলে রাখছে রাজ্য। শনিবার মহাকরণে পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগমের সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পিপিপি-তে তৈরি রাস্তা থেকে টোল আদায়ের মেয়াদ কমানোরও সুপারিশ করা হয় এ দিনের বৈঠকে।
নিগমের এ দিনের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক মহলেই। রাজ্য প্রশাসনের একাধিক কর্তার বক্তব্য, ওই সিদ্ধান্তের অর্থই হল, রাজ্য সড়কগুলির সার্বিক উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, সেই পথে যাচ্ছে না সরকার। রাস্তার উন্নয়নে বেসরকারি লগ্নি চাওয়া হবে, অথচ রাস্তার সম্প্রসারণ করা হবে না, এটা কার্যত সোনার পাথরবাটির সামিল। কারণ, দিনে দিনে যে হারে রাজ্যের সড়কগুলিতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে, তাতে কেবল রাস্তা শক্তপোক্ত করলেই হবে না, সম্প্রসারণও আবশ্যিক।
রাজ্যের পূর্তসচিব তথা নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিতরঞ্জন বর্ধনের পাল্টা বক্তব্য, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা না-করে তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্য সড়কগুলির উন্নয়নের কাজ শুরু করে দিতে চান। রাজ্য সড়কগুলিকে প্রকৃত অর্থে যান চলাচলের জন্য দুই লেনের রাস্তা হিসেবে তৈরি করাটাই তাঁদের অগ্রাধিকার। এখন পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি রাজ্য সড়কের মোট ৪৪০০ কিলোমিটার রাস্তার ৬২ শতাংশই কার্যত এক লেনের চেহারা নিয়েছে। পূর্তসচিবের মতে, ভবিষ্যতে যখন রাস্তাগুলিকে চার লেন করার প্রয়োজন হবে, তখন জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন উঠবে। আপাতত, রাজ্য সড়কগুলিতে যান চলাচলের জন্য যতটা রাস্তা ধরা আছে, সেই রাস্তা বরাবরই সেগুলির উন্নয়ন করা হবে।
কিন্তু প্রাথমিক ভাবে কেবলই রাস্তা সারাইয়ের পরিকল্পনা ছিল না পূর্ত দফতরের। সমস্ত রাজ্য সড়কের দু’পাশে পূর্ত দফতরের বেশ কিছু জমি আছে। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনে ওই জমি ব্যবহার করা হবে। কিন্তু পরবর্তী কালে সমীক্ষা করে দেখা যায়, বহু রাস্তার দু’পাশের জমি জবরদখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও চাষ হচ্ছে, কোথাও বা দোকান-বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন জবরদখলকারীরা। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সরকার জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে। তাই প্রশাসন এমন কোনও কাজ করবে না, যা জনমানসে বিরূপ বার্তা দেয়।” কিন্তু সড়কের দু’পাশের জমি তো পূর্ত দফতরের। সরকারি সম্পত্তি ব্যবহারের অসুবিধা কোথায়? সদুত্তর মেলেনি।
পিপিপি মডেলে রাস্তা উন্নয়নের জন্য এ দিনের বৈঠকে কলকাতা-বাসন্তী রাজ্য সড়কটিকে প্রথম বেছেছে নিগম। নিগমের জমি সংক্রান্ত নীতির কথা মাথায় রেখে ওই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থা ‘রাইটস’-কে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই টোল আদায়ের মেয়াদ ও পরিমাণ চূড়ান্ত করবে নিগম। আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে ওই কাজে আগ্রহী বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হতে পারে বলে পূর্ত দফতর সূত্রের খবর। সরকারি মহলের দাবি, বাকি ১৪টি রাজ্য সড়কের উন্নয়নের লক্ষ্যে পরামর্শদাতা নিয়োগের কাজও এগোচ্ছে। ন’টি সংস্থা সেগুলির প্রাথমিক সমীক্ষার কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী সপ্তাহে তাদের আগ্রহপত্র খতিয়ে দেখা হবে। |