অভাবি বিক্রির কারণে কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠলে, পরিবারকেই তার সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শনিবার এই কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি আরও জানান, কেউ যদি চাষিকে অভাবি বিক্রিতে উৎসাহ দেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কৃষক পরিচয়ের সচিত্র প্রমাণপত্র না থাকলে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে সরকার-নিযুক্ত সংস্থা আর ধান কিনবে না। কোনও রাজনৈতিক দলের দেওয়া পরিচয়পত্র এ ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এই ব্যবস্থা ঠিকঠাক কার্যকর করতে পারলে ধান কেনাবেচায় ফড়েদের দাপট কমানো যাবে।
গত মরসুমে ধানের সহায়ক মূল্য না পাওয়ায় বেশ কয়েক জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সরকারের তরফে বারবারই এই অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রশ্ন তোলা হয় অভিযোগের রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে। এ দিনও খাদ্যমন্ত্রীকে গত মরসুমে কৃষকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলে তিনি দাবি করেন, সহায়ক মূল্য না পাওয়ার কারণে সে বার এক জনও আত্মহত্যা করেননি। রাজনৈতিক দলগুলি তাদের রাজনীতির স্বার্থে অভাবি বিক্রি ও আত্মহত্যার অভিযোগ তুলেছিল। সত্যিই অভাবি বিক্রি হয়েছে কি না বা মৃত্যু সে কারণে কি না সাধারণ ভাবে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও স্বাস্থা আধিকারিকের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তা বোঝা যায়। এখন সে দায়িত্ব পরিবারের ঘাড়ে চাপায় কী ভাবে তাঁরা তা প্রমাণ করবেন, সে প্রশ্ন উঠছে। খাদ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেননি। চলতি মরসুমে ধান কেনা নিয়ে শনিবার বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন রাজ্যের নতুন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, সব জেলার জেলাশাসক, সমবায় সংস্থা এবং মিল মালিকদের সংগঠন। ওই বৈঠকেই ধান কেনার সময় ফড়েদের রমরমা ঠেকাতে কৃষকদের পরিচয়পত্র দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে সরকার-ঘোষিত সহায়ক মূল্যের পুরোটাই হাতে পান কৃষক। বৈঠকের পরে পরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কৃষক প্রমাণের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, কৃষিবিমা, খাদ্য দফতরের উদ্যোগে করানো ব্যাঙ্কের পাশ বই, কৃষি অথবা ভূমি আধিকারিক বা পঞ্চায়েতের সচিবের দেওয়া নথির যে কোনও একটি দেখাতে হবে।” কিন্তু বর্গা রের্কড দেখিয়ে বর্গাদাররা ধান বিক্রি করতে পারবেন কি না, জ্যোতিপ্রিয়বাবু স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, পরিচয়পত্র দেখিয়ে ধান বিক্রি করার নিয়ম এ রাজ্যে নতুন নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এ বার অবশ্য সচিত্র পরিচয়পত্র দেখানোর কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এ বার কোনও চাষিকে ধানের বিনিময়ে আর কুপন দেওয়া হবে না। গত মরসুমে যাদের কুপন দেওয়া হয়েছিল তারা কয়েক মাস পরেও টাকা হাতে পাননি। এ বার তাই সরাসরি চেক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য খাদ্য দফতর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ওই টাকার জামিনদার হচ্ছে রাজ্য সরকার। ধান কেনার জন্য এ বার চার হাজার ক্যাম্প করা হবে। তার মধ্যে ১১০টি হবে স্থায়ী ক্যাম্প। যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কেনা হবে। গত মরসুমে ধান কেনার খাতে খাদ্য দফতরের কাছে ধানকল মালিকদের এখনও ৭৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সেই টাকাও মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও কৃষকের কাছ থেকে এক দিনে ২০ থেকে ৫০ বস্তার বেশি ধান কেনা হবে না। কার কাছ থেকে কত ধান কেনা হবে, তা জেলাশাসক ঠিক করে দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন একই কৃষককে বার বার ধান বিক্রি করতে যেতে হবে। এতে তাঁদের পরিবহণ খরচও বাড়বে। |