তৃণমূলে শোভনদেব-কাণ্ডে জটিলতা আরও বাড়ল।
সমস্যা মেটাতে শনিবার দুপুরে বিধানসভায় সরকারি দলের মুখ্যসচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন দলের দুই শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেও জট না কাটায় তাঁরা শোভনদেববাবুকে কালীঘাটে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে সব কিছু জানাতে বলেন। কিন্তু কালীঘাটে নেত্রীর দফতরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেও শোভনদেব তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। মমতা ব্যস্ত থাকায়, ফোনে দু-একটা কথা বলে তিনি শোভনদেববাবুকে বিদায় দেন। গোটা ঘটনায় শোভনদেববাবু প্রচণ্ড চটে যান। প্রকাশ্যে শোভনদেববাবু কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু তাঁর অনুগামীদের অনেকেরই অভিযোগ, তাঁদের নেতাকে অযথা হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁরা এই ব্যাপারে একটা হেস্তনেস্ত চান। সব মিলিয়ে তৃণমূল অন্দরে শোভনদেবকে নিয়ে জটিলতা আরও বেড়েছে।
শোভনদেববাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলেরই অপর এক গোষ্ঠীর কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হন। কিন্তু তার জন্য দলের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করা তো দূর, দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরেও শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ জন্য তিনি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েই আছেন। তাঁর ক্ষোভ প্রশমনের জন্য কয়েক দিন আগে সুব্রতবাবু তাঁর দফতরে শোভনদেববাবুকে চা খেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এমনকী, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও ফোন করে তাঁকে জানিয়েছিলেন, গোটা ঘটনায় মমতা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারপরেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় শোভনদেবের অনুগামীরা শুক্রবার কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করার কর্মসূচিও নিয়েছিলেন। কিন্তু মমতার নির্দেশ মেনে শোভনদেববাবু তাঁর অনুগামীদের সেই মিছিল না করার নির্দেশ দেন। মিছিল হয়নি।
ওই দিনই তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়ে শোভনদেববাবুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন পার্থবাবুরা। কিন্তু তিনি যখন তৃণমূল ভবনে প্রায় পৌঁছে গিয়েছেন, তখন হঠাৎই বৈঠক বাতিল করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ দিন বিধানসভায় পার্থবাবু-সুব্রতবাবুরা তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করেন। দলীয় এক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তিনি কেন সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলছেন, তা নিয়ে শোভনদেববাবুর জবাবদিহি চাওয়া হয়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রকাশ্যে নিগৃহীত করা হয়েছে এবং তার পর থেকে যা কিছু ঘটেছে তা সংবাদমাধ্যমের অজানা নয়।
এ দিন কালীঘাটে মমতার দেখা না পেয়ে তিনি যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন প্রশ্নের জবাবে শোভনদেববাবু বলেন, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমাকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে মাফ করবেন।” পার্থবাবু, সুব্রতবাবুও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু শোভনদেববাবুর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের নেতা দেবাশিস দে বলেন, “যে ঘটনা ঘটছে তাতে দলের ভাবমূর্তিই নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে এ জিনিস বন্ধ হওয়া দরকার। আমরা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাব।” দেবাশিসবাবুর মতো শোভনদেব-ঘনিষ্ঠরা কিন্তু এ দিন ফের জানিয়েছেন, তাঁদের নেতাকে যারা নিগৃহীত করেছে তাদের শাস্তি না হলে তাঁরা আন্দোলন করতেও পিছপা হবেন না। |