দু’ লাখ টাকা পেলে নিজেকে ‘বিক্রি’ করতে রাজি বন্দনা পাল!
শিলিগুড়ির মাটিগড়ায় খাতড়া মোড়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে এখন বনি পাল হয়ে যাওয়া বাংলার প্রাক্তন তারকা মেয়ে ফুটবলারের বাড়ির সামনে লাইন পড়ে গিয়েছে পরিচালকদের। পরিচালক শতরূপা সাঁতরা, পরাশন মিত্র, সৌরভ মিত্ররা ‘মেয়ে’ থেকে ‘ছেলে’ হয়ে যাওয়া বন্দনা ওরফে বনিকে নিয়ে ছবি করতে চান। পরাশন যেমন ইংল্যান্ডে এ ধরনের বিষয় নিয়ে অনেক তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। কিন্তু বন্দনার সাফ কথা, “আমার জীবনের কাহিনি আমি বিক্রি করব দু’লাখ টাকা পেলেই। আমি চূড়ান্ত অর্থকষ্টে আছি।”
বহু দিন আগে উত্তর ২৪ পরগনার বাড়ি ছেড়ে কৃষ্ণনগর হয়ে আপাতত শিলিগুড়িতে থাকা বন্দনা পালের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে রয়েছে নানা রং বেরংয়ের কাহিনি। জাতীয় ফুটবলে বাংলার মেয়ে দলকে সোনালি গোলে চ্যাম্পিয়ন করা থেকে ঠাকুর-মডেল তৈরি করে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ সংগ্রহ, শরীরে পুরুষালিভাব ফুটে ওঠার পর পরিবার থেকে নির্বাসন, কৃষ্ণনগরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও হয়রানি, লিঙ্গ পরিবর্তন করে স্বাতী সরকারের সঙ্গে ঘর বাঁধা—সেলুলয়েডের জন্য ঠাসা রসদ রয়েছে এই জীবন যুদ্ধে। |
বন্দনা পাল নিজেই সমাজের ভয়ে ‘বেপাত্তা’ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে ছয়-সাত বছর আগে তেমন হইচই হয়নি। এশিয়াডের সোনা জয়ী মেয়ে অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামানিকের ঘটনার পর বন্দনার নাম ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে। পিঙ্কি লিঙ্গ পরিবর্তন করেননি। নিজে এখনও মেনে নিতে চাইছেন না তিনি ছেলে। উল্টে পুলিশ তাঁর নামে চার্জশিট জমা দেওয়ায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করতে শুরু করেছেন। কিন্তু বন্দনা সে পথে হাঁটেননি। বরং বাংলার খেলাধুলার জগতে তিনিই প্রথম মেয়ে অ্যাথলিট যিনি ‘পুরুষ’ হয়ে বিয়ে করে বুক ফুলিয়ে সংসার করছেন। সে জন্যই সম্ভবত তাঁকে নিয়ে ফিল্ম করার জন্য ঝাঁপিয়েছেন অন্তত ছয় জন পরিচালক।
কিন্তু বন্দনা ওরফে বনি কী চাইছেন। শিলিগুড়ি থেকে ফোনে বললেন, “আমি চাই আমার দুঃখের জীবন নিয়ে ছবি হোক। তাতে আপত্তি নেই। কোনও দোষ না থাকা সত্ত্বেও সমাজে যে ভাবে আমাকে হেনস্তা হতে হয়েছে আমি চাই সেটা সবাই জানুক। ভবিষ্যতে যাতে এ ভাবে জন্ম নিয়ে সমাজের কাছে ব্রাত্য হতে না হয়, সেটা বোঝানোর জন্য সিনেমাই সেরা মাধ্যম। আমার কাছে অন্তত ছয় জন পরিচালক এসেছেন ছবি করার জন্য। কিন্তু.....” তা হলে রাজি হচ্ছেন না কেন? আটকাচ্ছে কোথায়? “এ বার দুর্গাপুজোয় ঠাকুর তৈরি করে প্রায় দু’লাখ টাকা ধার হয়ে গিয়েছে আমার। মূর্তি তৈরি, ফাইবার গ্লাসের কাজ, বিভিন্ন মেলার হাতের কাজ করে সংসার চালাই। এ বার তেমন কাজ নেই। ধার মেটাতে কিছু টাকা চাই। সে জন্য লাখ দু’য়েক টাকার কথা বলা। যে দেবে তাকেই আমি আমার নাম বিক্রি করতে দেব।”
বন্দনা যা ইঙ্গিত দিলেন, তাতে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতে পারেন অন্তত দু’জন পরিচালক। কী নাম হতে পারে সিনেমার? হয়তো ‘বন্দনা যখন বনি’। |