শিলং-এ ইস্টবেঙ্গল ড্র করেছে শুনেছেন? আপনাদের তো ডার্বি ম্যাচের আগে সুবিধাই হল।
ওডাফা ওকোলি ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান! “ডার্বি ডার্বি..স্পেশ্যাল...স্পেশ্যাল। আরে আগে আমরা কাল পুণে ম্যাচ জিতি। তার পর তো সুবিধা-অসুবিধা।” বলেই হাঁটতে শুরু করেন মোহনবাগান অধিনায়ক।
বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে শনিবার বিকেলে অনুশীলনের পর করিম বেঞ্চারিফা তাঁর সেরা অস্ত্র সম্পর্কে ফের দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, “ওডাফা যে কোনও দলের রক্ষণ ভেঙে গোল করার ক্ষমতা রাখে।” শুনেছেন, আপনার কোচ কী বলেছেন? শেষ দুটি ম্যাচে জিততে না পারলেও ফুর্তিতে থাকা ওডাফা হাসেন, “দেখা যাক, কী হয়। পুণে কিন্তু খারাপ দল নয়। এই ম্যাচটা জিতলে ডার্বিতে সুবিধা হবে।” |
কোচের দায়িত্ব নিয়েই তীব্র সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে গিয়েছেন করিম। নিজেই বলছেন, “আমার কোচিং জীবনের অন্যতম খারাপ সময় চলছে।” দলকে জেতাতে পারছেন না বলে ওডাফাকে নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফলে করিম-ওডাফা রসায়ন ভাল হতে বাধ্য। কিন্তু মোগা-ডুহুদের বিরুদ্ধে মোহনবাগান কি জিততে পারবে? গোয়ায় ম্যাচ জিতে এসে ডেরেক পেরিরার দলের মনোবল তুঙ্গে। তাদের দুই স্ট্রাইকার জেমস মোগা এবং সুভাষ সিংহ গোলের মধ্যে আছেন। জয়ের রাস্তায় ফিরতে মরিয়া করিমের কাজটা কিন্তু তাই সহজ হবে বলে মনে হয় না।
মরোক্কান কোচ তাই মধ্যপন্থা নিচ্ছেন ম্যাচ নিয়ে। যার নির্যাস হল, জিততে না পারো, হেরে এসো না। সেটা কেমন? রবিবারের ম্যাচের জন্য দু’রকম ফর্মেশন রপ্ত করাচ্ছেন তিনি। দল আক্রমণে গেলে ৪-৪-২ আর রক্ষণ করতে ৪-১-৪-১। শনিবার মূল স্টেডিয়ামে এটাই ঝালিয়ে নিলেন করিম। রহিম নবি খেলছেন না। তবে চোট সারিয়ে ইচে ফের সঙ্গী হচ্ছেন আইবরের। মাঝমাঠে ব্লকার হিসাবে বহুদিন পর নামবেন রাকেশ মাসি। লেফট ব্যাকে ফেনাই। বিশেষ দায়িত্ব থাকছে স্ট্যানলির উপর। ফর্মেশন ভাঙা গড়ার মুখ্য কাজটার জন্য তাঁর উপরই নির্ভর করছেন করিম। গত দু’ম্যাচে চূড়ান্ত ব্যর্থ স্ট্যানলি। হোটেলের ঘরে ওডাফার সঙ্গী হয়ে থাকলেও বিপক্ষ বক্সের সামনে ‘বন্ধু’- কে বল দিয়ে সাহায্য করতে পারছেন না এই নাইজিরিয়ান। কিন্তু কোনও উপায়ও তো নেই মোহন কোচের। ফলে যে অস্ত্র হাতে আছে, তা দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে নামতে হচ্ছে তাঁকে। “যে কোনও কোচের পক্ষে এই অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানো কঠিন। কিন্তু আমি আশাবাদী, এই ম্যাচে কিছু একটা হবে,” বলে দেন করিম।
তীব্র চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছায় করিম মরিয়া হবেন, স্বপ্ন দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর অস্ত্র ‘ভোঁতা’ করার জন্য পুণে কোচের হাতেও ‘ওষুধ’ কম নেই। মোগা, ডুহু, চিকা, সুভাষদের নিয়ে ডেরেকও তৈরি। ক্লাব ফুটবলে তাঁর সাফল্য করিমকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো। মহীন্দ্রাকে একই মরসুমে আই লিগ, ফেড কাপ, আই এফ এ শিল্ড জিতিয়েছিলেন। আর্মান্দো কোলাসো, ট্রেভর মর্গ্যানের মতোই পুণে টিমে ধারাবাহিক। চার বছর কোচিং করাচ্ছেন কর্পোরেট কোম্পানির এই টিমকে। ঠান্ডা, শান্ত, স্বভাবের পুণে কোচের কোচিং বুদ্ধিও ক্ষুরধার। |
টিম বাসে ওঠার আগে ডেরেকের সঙ্গে এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে গেলেন ওডাফা। মোহন-স্ট্রাইকারের চলে যাওয়ার দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকলেন পুণে কোচ। তার পর নেমে পড়লেন নিজের রক্ষণ সাজিয়ে ওডাফা-বধ চিত্রনাট্য তৈরি করতে। কিং কোবরার বিষ ঢালা আটকাতে বিদেশি চিকাওয়ালিকে দায়িত্ব দিচ্ছে পুণে । আর গোলের নীচে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন এক বঙ্গসন্তান—অভ্র মণ্ডলকে। সিনবোন দু’টুকরো হয়ে যাওয়ায় দশ মাস মাঠের বাইরে ছিলেন অভ্র। ফিরে এসে নেমেই গোয়ায় ম্যাচ জিতিয়েছেন পুণেকে। বলছিলেন, “ওডাফার সঙ্গে নয়, আমার চ্যালেঞ্জ আমার নিজের সঙ্গেই। ভাল খেলে ফিরে আসার লড়াই।” ডেরেক এই মনোভাবটা কাজে লাগাতে চাইছেন। বলছিলেন, “মোহনবাগান খুব ভাল টিম। ওদের রিজার্ভ বেঞ্চ ভাল। তার ওপর ওডাফার মতো গোল করার লোক আছে।” করিমের যেমন ওডাফা আছে, তেমনই ডেরেকের আছে মোগা। বিশাল চেহারার এই স্ট্রাইকার যে কোনও সময় গোল করে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। তাকে আটকানোর টোটকা শেখাতে সদ্য চোট সারিয়ে ফেরা বড় চেহারার ইচেকে নিয়ে অনুশীলনে দীর্ঘক্ষণ পড়ে রইলেন করিম।
আজ রবিবার সকালেই এখানে হবে পুণের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ম্যারাথন। আফ্রিকার প্রচুর অ্যাথলিট এসে গিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায়। আই লিগের চ্যাম্পিয়নের ট্র্যাকে থাকার জন্য নিজেদের বুদ্ধির সঙ্গে করিম এবং ডেরেক ভরসা রাখছেন কিন্তু দুই আফ্রিকানের উপরই।
এখন দেখার, রাতের আলোয় কে শেষ পর্যন্ত হাসেনওডাফা না মোগা। |