|
|
|
|
প্রত্যাশার চাপে বিজেপি বেগতিক |
জনসমর্থনের অহঙ্কারেই বারবার বিদ্রোহী নেতারা |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
পাঁচটি নাম। লক্ষণ কিন্তু এক।
উত্তর হোক বা পশ্চিম। মধ্য হোক বা দক্ষিণ। বিশেষ জনগোষ্ঠীর উপরে প্রভাব আছে এমন নেতারা ক্রমাগত বেগ দিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি-কে।
উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহ, শঙ্করসিন বাঘেলা, কেশুভাই পটেল। আর এ বারে ইয়েদুরাপ্পা। দেশের এক এক প্রান্তের তাবড় নাম। কিন্তু মিল অনেক। প্রত্যেকেই বিশেষ কোনও জাতিগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বড় নেতা। নিজের একটা জনভিত্তি রয়েছে। আর সকলেই কোনও না কোনও সময় বিদ্রোহ করে বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়েছেন। এ ধরনের নেতারা কেন বিজেপির সঙ্গে থাকতে পারছেন না? চিন্তায় নেতৃত্ব। অরুণ জেটলির ব্যাখ্যাটা এ রকম, “জনভিত্তি নিয়ে অহঙ্কার এসে গেলে নেতারা অনেক সময় মনে করেন, দলে তাঁরা খাপ খাচ্ছেন না। এই মনোভাবই দল ছাড়ার তাড়না দেয়।”
ইয়েদুরাপ্পাকে দলে রাখার চেষ্টা কম হয়নি! তবু তিনি দল ছাড়লেন। কর্নাটকের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ে দাপট রয়েছে ইয়েদুরাপ্পার। তাঁর জোরেই দক্ষিণে প্রথম রাজ্য দখল করেছে বিজেপি। পরিস্থিতি পাল্টে না গেলে পরের নির্বাচনে তিনি ভোট কাটবেন বিজেপি-রই। হতে চান কিং মেকার। তাই এখনও চেষ্টা হচ্ছে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার।
ঠিক যেমন উমা ভারতীকে দল থেকে বহিষ্কারের পরেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিজেপি-তে। এক সময় ছিলেন দলের অগ্নিকন্যা। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেত্রী হয়েও ছিলেন হিন্দুত্বের মুখ। অথচ বিজেপি-র সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারলেন না। বিদ্রোহ করলেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন। বেরিয়ে নিজের দলও গড়েছিলেন। এখন অবশ্য ফিরে এসেছেন। দলের শর্ত মেনে নিয়েই। |
|
|
|
|
|
উমা |
কল্যাণ |
বাঘেলা |
কেশুভাই |
ইয়েদুরাপ্পা |
|
বিজেপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া উত্তরপ্রদেশের আর এক পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেতা কল্যাণ সিংহকেও এখন দলে ফেরানোর তোড়জোড় চলছে। উমা যেমন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কল্যাণ ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। জনক্রান্তি পার্টি গড়ে এখন ভোট কাটছেন বিজেপি-র। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে এখনও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে কল্যাণের।
একই অবস্থা গুজরাতেও। সেখানে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শঙ্করসিন বাঘেলা ও কেশুভাই পটেল বিদ্রোহ করেই বিজেপি ছেড়েছেন। জনসঙ্ঘ আমল থেকে জড়িয়ে থাকা বাঘেলা বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি। কিন্তু পরে এই রাজপুত নেতা যোগ দেন কংগ্রেসে। বিজেপি-তে থাকতে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের কারিগর ছিলেন বাঘেলা। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে তিনিই এখন মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রচারের কাণ্ডারী। পটেলদের নেতা কেশুভাইও ‘গুজরাত পরিবর্তন পার্টি’ বানিয়ে এখন মোদীকে চ্যালেঞ্জ দিতে ভোটের ময়দানে।
কেন এই নেতাদের সঙ্গে রাখতে পারছে না বিজেপি? দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তর একটাই। অহঙ্কার ও প্রত্যাশা। বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর নেতারা যখন মনে করেন, তাঁরা দলের থেকে বড়, তখনই বিদ্রোহ করেন। অথচ তাঁরা ভুলে যান, দলের জন্যই তাঁদের উত্থান। সম্ভবত সেটা বুঝতে পেরেই উমা ফিরে এসেছেন। কল্যাণও ফিরতে চান। নতুন দল গড়ে তাঁরা সাফল্যের মুখ দেখেননি। শঙ্করসিন টিকে রয়েছেন কংগ্রেসের জোরে। আর এ বারের গুজরাত নির্বাচনে কেশুভাইয়ের পরীক্ষাও হয়ে যাবে।
তবে বিজেপি নেতৃত্ব কবুল করছেন, কারণ যা-ই হোক, ক্ষতি হচ্ছে বিজেপি-রই। যাঁরা দল ছাড়ছেন, তাঁদেরও কোনও লাভ হচ্ছে না। এই ধারা ঠেকানোর পথ হাতড়াচ্ছে দল। |
|
|
|
|
|