রাজ্যে শত্রু মমতা, কেন্দ্রে বিজেপি
ফের কি ধরা হবে কংগ্রেসের হাত, অঙ্ক কষছে সিপিএম
মতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ ছাড়ার পর আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে ফের গাঁটছড়া বাঁধার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের নেতারাও এই রাজনৈতিক লাইনের পক্ষে। তাই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন করা প্রয়োজন জানিয়ে দলকে চিঠি দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। তাঁর মত মেনে নিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।
ইউপিএ সরকারের প্রথম জমানায় কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল সিপিএম। কিন্তু পরমাণ চুক্তি নিয়ে বিবাদের জেরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন কারাট। ইউপিএ-র দ্বিতীয় জমানায় শরিক হয় তৃণমূল। এখন তারাও বিদায় নিয়েছে। পরবর্তী লোকসভা ভোট খাতায়কলমে দেড় বছর দূরে এবং তার ফলাফল ভবিষ্যতের গর্ভে হলেও সিপিএম-কে সঙ্গী করে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজধানীতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইয়েচুরির বৈঠক বা রাষ্ট্রপতির কাছে কারাটের দরবার দেখে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, তৃতীয় ইউপিএ-সরকার গঠনের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
২০০৪ সালে কেরল ও পশ্চিমবঙ্গ, দুই রাজ্যেই কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করেছিল সিপিএম। কিন্তু তার পর বিজেপি-কে আটকানোর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় সেই সিপিএমই প্রথম ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরমাণু চুক্তি নিয়ে সমর্থন প্রত্যাহারের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। কারাটের নেতৃত্বে সিপিএম মায়াবতীকে সামনে রেখে অ-কংগ্রেসি সরকার গঠনের চেষ্টায় ব্রতী হয়। কিন্তু ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম বিপর্যস্ত হয়। তার পর দীর্ঘদিন দলে বিতর্ক চলে, কেন এই হার?
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গের হারের জন্য সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ড, রাজ্যের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কারণকে দায়ী করেন। আর রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ দায়ী করেন কেন্দ্রে সমর্থন প্রত্যাহারকে। তাঁদের যুক্তি ছিল, এর ফলেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সম্ভব হয়। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে চাননি কারাটরা।
সেই বিতর্ক থিতিয়ে যাওয়ার পর পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে সিপিএম মনে করছে, মায়াবতী-জয়ললিতাদের নিয়ে কংগ্রেসকে হারানোর চেষ্টা করা ভুল ছিল। কারাট এই রাজনৈতিক লাইনে উৎসাহী থাকলেও গোড়া থেকেই জঙ্গি কংগ্রেস বিরোধিতার বিরোধী ছিলেন সিপিএম পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কারাটের এখন ‘সীতারামায়ণ’ হয়েছে!” তিনি বুঝতে পেরেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরায় দলের শক্তি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গই যখন দলের রুটি-রুজি। সেখানেই পার্টির শক্তি না-থাকলে সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের বিরোধিতা করে লাভ কী?
দলের এক নেতার ভাষায় প্রশ্নটা হল, “মুণ্ডু গেলে খাবটা কী?” সুতরাং কারাটও এখন মনে করছেন, কংগ্রেস-বিরোধিতার থেকে মমতা-বিরোধিতা এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মমতা সিপিএমের যে পরিসর দখল করেছেন, সেটা পুনর্দখল করা দরকার। জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন। তাই সিপিএমের লক্ষ্য জাতীয় স্তরে বিজেপি-কে একঘরে করা এবং রাজ্য স্তরে মমতার বিরোধিতা করা।
দিল্লি পার্টি কংগ্রেসে যখন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রকাশ কারাটের অভিষেক হয়, তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তৃতীয় বিকল্পের লক্ষ্য থাকবে। কিন্তু দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা করা দরকার। হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ তখনও বেঁচে। কিন্তু মনমোহন সিংহ যখন আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে গেলেন, তখন কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসে দল পুরো কংগ্রেস বিরোধিতার পথ নিল। চুক্তি রূপায়ণ হলে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকিও দিল। সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টি যে কংগ্রেসের সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধতে পারে, তা মাথায় না-রেখে তাদের সঙ্গে নিয়েই মনমোহন সরকার ফেলে দিয়ে নতুন সরকার গড়ার কথা ভেবেছিলেন কারাট।
এখন কারাট বুঝতে পারছেন, সুরজিৎ-জ্যোতি বসুর আমলে জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের যে প্রাসঙ্গিকতা ছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল তেভাগা, তেলেঙ্গানা ও ভূমি সংস্কার আন্দোলন। এর মাধ্যমেই দল বিকশিত হয়েছিল। শ্রমিকদের উপর প্রভাব তৈরি করেছিল। কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই বাম মনোভাবাপন্ন নেতারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সরকারিয়া কমিশন বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়েও বামেদের আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সব মিলিয়ে নেহরুর সমাজতান্ত্রিক দেশ তৈরির চেষ্টায় বামেরা সব সময়ই প্রভাব তৈরির সুযোগ পেয়েছে। দলের এক পলিটব্যুরো নেতা বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের লক্ষ্য তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলা। কিন্তু স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্য হওয়া উচিত কেন্দ্রে এমন সরকার গড়া, যার নীতি তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তাই প্রথম ইউপিএ-র আমলে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি-র সঙ্গে কখনই অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি সম্ভব নয়। কাজেই কংগ্রেসের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে।” এই পলিটব্যুরো সদস্যের মতে, গত লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেখা হয়েছিল। মাত্র ৬১ জন সাংসদ, অর্থাৎ সংসদের ১০% আসন নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, তাঁরাই রাজা।
‘শেষের কবিতা’-র অমিত রায়কে উদ্ধৃত করে সিপিএমের এক নেতা বলেন, “সম্ভবপরের জন্য প্রস্তুত থাকাটাই সভ্যতা। আমরা আপাতত সেই চেষ্টাতেই সক্রিয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.