বাড়ি থেকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব খুব বেশি হলে তিন কিমি। অথচ প্রায় ১৬০ কিমি রাস্তা ঘুরে অবশেষে সেই করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালেই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন অভয়পুরের রিমা মণ্ডল। সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রিমা। অভিযোগ, সারাদিন ভর্তি থাকার পরে রাতে এক চিকিৎসক জানান, ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় না। তাই নিয়ে যেতে হবে জেলা সদরে। সেই কথা শুনে করিমপুর থেকে প্রায় আশি কিমি উজিয়ে সেই রাতেই কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে গিয়ে ওই প্রসূতির স্বামীকে শুনতে হয়, এখানে এনেছেন কেন? |
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালেই তো স্বাভাবিক প্রসব হয়। বরং ওখানেই নিয়ে যান। সেখান থেকে ফের বাড়ি ফিরে আসেন ওই প্রসূতি রিমার স্বামী বিপুল মণ্ডল। পেশায় তিনি দিনমজুর। তিনি বলেন, “করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর। তারপরে আবার বাড়ি ফিরে ফের বুধবার রাতে স্ত্রীকে করিমপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ বারেও কর্তব্যরত এক চিকিসক সেই একই কথা বলেন যে এখানে হবে না জেলা সদরে নিয়ে যান।” বিপুলবাবু বলেন, “এ বার আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিই যে যা হওয়ার এখানেই হবে, আমার পক্ষে আর কৃষ্ণনগর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তার কিছুক্ষণ পরেই করিমপুরেই আমার স্ত্রীর স্বাভাবিক প্রসব হয়। কোনও অসুবিধা হয়নি।”
সন্তান প্রসবের পরে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মী রিমার কাছ থেকে জোর করে তিনশো টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিপুল। পরে লোক জানাজানি হতে সেই টাকাও আবার ফেরত দিয়েছেন ওই কর্মী। গোটা বিষয়টি জানিয়ে শুক্রবার হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, “করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সিজার বন্ধ হয়ে রয়েছে বহুদিন ধরে। ফলে কোনও প্রসূতির শারীরিক অবস্থা খারাপ বুঝলেই ঝুঁকি না নিয়ে আমরা রেফার করে দিই। তবে এক্ষেত্রে ঠিক কি হয়েছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর টাকা নেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হবে।”
কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দত্ত বলেন, “এখন ‘রেফার’ করার প্রবণতা বেড়েছে। জেলা সদরে মাত্রাতিরিক্ত চাপ বাড়ছে। তাই আমরা যখন বুঝতে পারি, কোনও রেফার করা রোগীর চিকিৎসা যে হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে, সেখানেই অনায়াসে করা যায়, তখন আমরা সেই রোগীকে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি।” |