রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পে টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরের কয়েকটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুক্রবার ঘাটাল শহরে এসেছিলেন প্রকল্পের (রাজ্য) উপ-অধিকর্তা পাপিয়া ঘোষ রায়। সঙ্গে ছিলেন ঘাটালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর অমিতাভ সরকার-সহ প্রকল্পের অন্য আধিকারিকরা। তাঁরা শহরের নার্সিংহোমগুলি ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। পাপিয়াদেবী বলেন, “তদন্ত শেষ না হলে কিছু মন্তব্য করব না।” |
দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষকে নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পটি চালু করা হয়। পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলির মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র মানুষেরা দশ টাকার বিনিময়ে একটি করে কার্ড পান। ওই কার্ডের মাধ্যমেই বছরে উপভোক্তার পরিবারের অন্তত ৫ জন সদস্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত যে কোনও চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল শহরে প্রায় ৮-১০টি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ওই প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছেন। অভিযোগ, গরিব মানুষদের চিকিৎসার জন্য প্রকল্পটি চালু হলেও কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী এবং এক শ্রেণির দালাল চক্র গরিব মানুষদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছেন। আবার কার্ড ব্যবহার করে নামমাত্র চিকিৎসা করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক আধিকারিক বলেন, “যদি কোনও পরিবারের এক বছরে চিকিৎসার প্রয়োজন না হয়, দালালেরা তাঁদের ভুল বুঝিয়ে কার্ডগুলি নিয়ে ব্যবসা করছেন। বিনিময়ে উপভোক্তাদের কিছু টাকাও দিচ্ছেন।” এমনকী কেন্দ্রীয় ওই বিমা প্রকল্পের নিয়মও অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মানেন না বলেও অভিযোগ। কোনও রোগীর ছুটি হয়ে যাওয়ার পর ওষুুধ দেওয়া এবং গাড়ি ভাড়াবাবদ ১০০ টাকা করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়মও না মানার অভিযোগ উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, তদন্তে দশ শয্যার এমন একাধিক নার্সিংহোমের কথা জানা গিয়েছে, যেখানে বছরে ওই প্রকল্পে ৭০-৮০ লক্ষ টাকার চিকিৎসা হয়েছে। আবার সেখানে সাধারণ রোগীরাও ভর্তি হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী, বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হলে রোগীদের ৮-১০ দিন এবং সিজার হলে সাধারণত ৬ দিন রাখার নিয়ম। দশ শয্যার নার্সিংহোমে এত টাকার চিকিৎসা কী ভাবে হল তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে টাকা তছরুপের বিষয়ে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “ঘাটালের একাধিক নার্সিংহোমে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। ঘাটালের মহকুমাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |