|
|
|
|
আজ বিশ্ব এড্স দিবস |
এড্স দেখলেই দরজা
বন্ধ শল্যচিকিৎসকের
রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান |
|
|
গোড়ালিতে ঘা আসানসোলের বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবকের। কিন্তু গত এক বছর ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হত্যে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি। বরং তাঁর পা সারার আশা আর নেই বলে হাত ধুয়ে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা অভিযোগ অন্তত এমনই।
যুবকটি এড্স আক্রান্ত।
গুসকরার ২৪ বছরের গৃহবধূর অর্শ। তিনিও এক বছর ধরে ঘুরছেন । অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে তাঁকে বলা হচ্ছে, বাইরে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিতে। কিন্তু নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিৎসার করানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি তাঁর নেই।
ওই তরুণীও এড্স আক্রান্ত।
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গিয়েছিল রসুলপুরের এক যুবকের। অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল আগেই। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা রাজি হননি বলে অভিযোগ।
বছর সাঁইত্রিশের ওই যুবকটিও এড্স আক্রান্ত।
যেমন আক্রান্ত ফিশচুলায় ভুগতে থাকা আউশগ্রামের এক ব্যক্তি। তিনি টানা দু’বছর ধরে ঘুরছেন। অস্ত্রোপচার করাতে পারেননি। আসানসোলের এক মহিলাও গলস্টোনের অস্ত্রোপচার করানোর চেষ্টায় ঘুরে মরছেন। এড্সই তাঁর হেনস্থার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন উদাহরণ বহু। শুধু বর্ধমান নয়, আশপাশের হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ থেকেও রোগীরা এই মেডিক্যাল কলেজে আসেন। সরকারি নীতি অনুসারে, হাসপাতালে এড্স আক্রান্তদের সমস্ত চিকিৎসা বিনামূল্যে মেলার কথা। কিন্তু যেখানে চিকিৎসাই মিলছে না, সেখানে টাকা খরচের প্রসঙ্গ তো পরের কথা।
বর্ধমানে এড্স আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক পরিমল রায়ের মতে, “এই মুহূর্তে অন্তত ১০ জন এইচআইভি সংক্রামিতের শল্যচিকিৎসা দরকার। কেউ-কেউ দু’বছর ধরে অস্ত্রোপচারের আশায় বর্ধমান মেডিক্যালে ঘুরছেন।” তাঁর অভিযোগ, “আক্রান্তদের সব পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসকের মদতে তাঁদের বেসরকারি চিকিৎসা বা পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। বারবর প্রতিবাদ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।”
সংস্থাটির হিসেবে, শুধু বর্ধমান জেলাতেই এড্স আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৩৭ জন তাঁদের সংস্থার সদস্য হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৬৮৫ জন। পুরুষ ৩৭৬, মহিলার ৩০৯। অপ্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা ঘটনাচক্রে সমান, ২৬ জন করে। থ্যালাসেমিয়ার কারণে রক্ত নিতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছে ৪টি শিশু। অপরিশোধিত সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক নিতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন ২ জন। মাতৃগর্ভ থেকে একটি শিশু সংক্রমিত হয়েছে।
পরিমলবাবুর অভিযোগ, “২০০৬ সাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে খুব জোর ৩-৪ জন এড্স আক্রান্তের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা-ও বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বা আন্দোলন করে।” তাঁর আক্ষেপ, “দীর্ঘদিন আগেই অস্ত্রোপচারে বঞ্চিতদের তালিকা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়েছি। ফল হয়নি।”
বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত মেনে নেন, “এক শ্রেণির চিকিৎসক অযথা আতঙ্ক বা কুসংস্কারে ভুগছেন। তাই আমরা বলে দিলেও অনেক এড্স আক্রান্তের শল্য চিকিৎসা হয়নি। এই আতঙ্ক-কুসংস্কার দূর করা দরকার।” শল্যচিকিৎসা বিভাগের প্রধান কৃষ্ণানন্দ মজুমদার অবশ্য দায় নিতে চাননি। তাঁর দাবি, “সরকারি নীতিতে অনেক কিছু বলা আছে। কিন্তু শুধু চিকিৎসকদের অনীহাই নয়, অন্য অনেক সমস্যার জন্যও অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না।”
সমস্যা রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি (এআরটি) কেন্দ্রেও। ওই কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করে এড্স রোগীদের শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করার কথা। কিন্তু যেখানে বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ থেকে প্রচুর এড্স আক্রান্ত আসেন, সেখানে আছেন মাত্র এক চিকিৎসক। অন্তত দু’জন চিকিৎসকের থাকার কথা। যে এক জন রয়েছেন, তিনিও অনিয়মিত বসেন বলে অভিযোগ। মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ অসিতবাবুর বক্তব্য, “ ওই জায়গায় একটি বড় যন্ত্র রয়েছে। সেটিকে না সরালে জায়গা হচ্ছে না। তবে আরও এক চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন।”
কর্তারা যখন সবই জানেন-বোঝেন, চিকিৎসা পেতে আর কত প্রতীক্ষা করবেন আক্রান্তেরা? |
|
|
|
|
|