|
|
|
|
আজ বিশ্ব এড্স দিবস |
আক্রান্তদের অচ্ছুত করছে হাসপাতাল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এইচ আই ভি এবং এড্স বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে আমজনতার। কমছে সংক্রমণের হার। কিন্তু সচেতনতা তৈরিতে যাঁদের বড় ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সেই চিকিৎসকদের বড় অংশ এখনও হাত বাড়াতে নারাজ। বিশ্ব এড্স দিবসে এমনই ছবি উঠে এল পশ্চিমবঙ্গে।
বিশ্ব এড্স দিবসের প্রাক্কালে রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (SACS) প্রকল্প অধিকর্তা রেশমি কমাল পরিসংখ্যান দিচ্ছেন, “২০০৮-০৯ সালে এ রাজ্যে নতুন সংক্রমণ হার ছিল ০.২১%। সেখানে ২০১০-১১ সালে সংক্রমণের হার কমে এখন ০.১২%!” ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এন্টারিক ডিজিজেস’-এর তরফে মিহিরকুমার সাহা জানান, তাঁদের সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় নতুন সংক্রমণের হার কমছে। |
|
এসএসকেএম-এ বসিরহাটের এড্স আক্রান্তের ‘পেশেন্ট কার্ড’। |
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্তপরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে আসছেন। সে কারণেই কমছে সংক্রমণ। কিন্তু সংক্রামিত মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে বা স্কুলে আজও অমানবিক ব্যবহার পাচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসার অধিকারকে তাচ্ছিল্য করার অভিযোগ উঠছে জেলায়-জেলায়।
হাতে-নাতে প্রমাণও মিলছে। অস্ত্রোপচারের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন বসিরহাটের এক বাসিন্দা। এইচ আই ভি-সংক্রামিত রোগীর পরিচয় গোপন রাখার কথা থাকলেও তাঁর ‘ওপিডি পেশেন্ট কার্ড’-এর উপরে বড় বড় হরফে লিখে দেওয়া হয়, ‘এইচআইভি পজিটিভ অন এআরটি।’ হাসপাতাল সুপার তমাল ঘোষ স্বীকার করছেন, “বর্হিবিভাগের টিকিটের উপরে এইচ আই ভি পজিটিভ লেখা অনুচিত। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে বসিরহাটের ওই রোগী আরও জানিয়েছেন, ইউরোলজি বিভাগ থেকে তাঁকে বলা হয়, ৩৫ হাজার টাকার একটি যন্ত্র কিনে দিলে তবেই তাঁর চিকিৎসা করা যাবে। কারণ ওই যন্ত্র দিয়ে আর কারও চিকিৎসা করা যাবে না। বিভাগের প্রধান অনুপ কুণ্ডু বলেন, “এ রকম কিছু শুনিনি।”
এমনই অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানেও। অর্শে কষ্ট পেতে থাকা গুসকরার এক চব্বিশ বছরের এইচ আই ভি-সংক্রামিত গৃহবধূর অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তাঁর অস্ত্রোপচারে করতে রাজি হয়নি। বাইরে কোথাও করিয়ে নিতে বলা হয়েছে। অথচ নার্সিংহোমে চিকিৎসার করানোর মতো সঙ্গতি তাঁর নেই। একই অভিযোগ এনেছেন দুর্ঘটনায় পা ভাঙা রসুলপুরের এক যুবক। আউশগ্রামের এক আক্রান্ত ফিশচুলা অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে টানা দু’বছর ঘুরছেন। আসানসোলের এক মহিলাও গলস্টোনের অস্ত্রোপচার করাতে পারেননি। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে বলেন, “আমাদের এক শ্রেণির চিকিৎসক অযথা আতঙ্ক বা কুসংস্কারে ভুগছেন। তাই আমরা বলে দিলেও অনেক এড্স আক্রান্তের শল্য চিকিৎসা হয়নি।” উত্তর ২৪ পরগনার এইচআইভি সংক্রামিতদের সংগঠন এনএনপি প্লাস-এর সভাপতি সমীর বিশ্বাসের মতে, “গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলিতে হেনস্থার অভিযোগ বাড়ছে।”
এর শেষ কোথায়, তার সদুত্তর অবশ্য কারও কাছেই মেলেনি। |
|
|
|
|
|