খেলাধুলা...
পূজারা টু
ডোম্বিভলি স্টেশনে যখন অফিস টাইমে লোকাল ট্রেন এসে দাঁড়ায়, কোনও মতে ট্রেনে উঠে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বছর দশেকের ছেলেটাকে ট্রেনে চড়তে হত কিটব্যাগ নিয়ে। ভিড়ের মধ্যেই ১০/১৫টা স্টেশন পেরিয়ে কখনও শিবাজি পার্ক, কখনও ওভাল ময়দানে সাব-জুনিয়র ক্রিকেট ম্যাচ। ট্রেনের ভিড়ে ঠিকমতো না দাঁড়াতে পারা ছোট ছেলেটা ব্যাটিং করতে নামলেই অবশ্য খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ওর প্রথম কোচ খাটু ‘স্যার’ ব্যাপারটা নজর করতেই মাত্র ১১ বছর বয়সেই ছেলেটিকে সুযোগ করে দিলেন সিনিয়রদের ম্যাচে। শিবাজি পার্কে খেলা। দ্বিগুণ উচ্চতার ফাস্ট বোলারদের সাবলীল খেলে শতরান করার কিছুক্ষণ পরেই আউট হয়ে যায় ছোট ছেলেটা। আউট হয়েই স্যারকে বলেছিল,“দুসরা শতক চুকল, জালিয়া আসলাতর চাঙলা আসতা।” শতরান করার পর আউট হলে এখনও মুম্বইয়ের এই ব্যাটসম্যান প্রায়ই এই কথাটাই বলেন,“ডাবল হান্ড্রেডটা মিস করলাম। হলে আরও ভাল হত।” শতরান হলেই দ্বিশতরান, ডাবল হলে ট্রিপলের দিকে নজর। ঘরোয়া ক্রিকেট গড় ৬৪। অজিঙ্কে রাহানে ভাল খেলার পরেও ভারতীয় দলের প্রথম এগারোয় সহবাগ, গম্ভীর থাকায় জায়গা হচ্ছে না দেখে যদি ওকে কখনও সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয় যে ব্যাড লাক অজিঙ্কে, তৎক্ষনাৎ আপনাকে জবাব দেবে,“ডোমেস্টিক মে ইসসে ভি জ্যায়াদা রান বনানা হ্যায় রে।”
শতরান করেও চেতেশ্বর পূজারার থেমে না যাওয়ার মানসিকতাকে ইতিমধ্যেই প্রশংসা করেছেন গাওস্কর, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, সৌরভের মতো আইকনরা। অনেকেই তুলনা টানছেন লক্ষ্মণের সঙ্গে। কেউ বলছেন নতুন দেওয়ালের গাঁথনি উঠতে শুরু করেছে। সৌরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দর্শন যদি প্রাক্তনদের মুগ্ধ করে থাকে, তাহলে সেই একই আদর্শে বড় হওয়া আরেক ব্যাটসম্যান এই মুহূর্তে বসে ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চে। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন অজিঙ্কে রাহানে।
মুম্বই শহরে বাস চালায় যে সংস্থা সেই বেস্ট কোম্পানিতে কাজ করেন অজিঙ্কের বাবা মধুকর রাহানে। মা সুজাতার হাত ধরে প্রথম যখন কোচিং ক্যাম্পে যাতায়াত সে সময়ই এক অটোচালক সুজাতাদেবীকে বলেছিল আপনার ছেলে একদিন ভারতের হয়ে খেলবে। এখনও মনে আছে গত বছর আইপিএলে সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যানের।
ক্রিকেটের ফরম্যাট যে রকমই হোক অজিঙ্ক রাহানে সব ফরম্যাটেই সফল। ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের হয়ে টি-২০ ম্যাচে অভিষেক যেদিন হয়, সেদিন সকালেই অধিনায়ক হঠাৎ করে বলেন ওপেন করতে হবে। দ্রুত ৩৯ বলে ৬১ রান করে প্রথম সুযোগেই নজর কেড়েছিলেন রাহানে। দ্রুত রান করলেও সবই ক্রিকেটীয় শট। আইপিএল-য়েও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে রাহানের করা শতরানের পর ক্রিস গেইলও বলেছিলেন একটাও ভুল শট না খেলে এমন দাপট দেখানো মুশকিল। রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে ওপেন করেছেন আইপিএল আর রঞ্জিতে। কখনও কখনও ব্যাট করেছেন সচিনের সঙ্গেও। “রাহুল ভাই আর সচিনকে আদর্শ মানি,” বলছেন রাহানে। মাঠে যে রকম মাথা নিচু করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করে থাকেন, মাঠের বাইরেও একই রকম শান্ত রাহানে। বাবা-মা-ভাই-বোনকে নিয়ে বছর আটেক আগে ডোম্বিভ্যালি থেকে চলে এসেছিলেন আর এক শহরতলি মুলুন্ডে। বছর তিনেক আগে ট্রেনের পাট চুকোতে হয়েছে মুম্বই ক্রিকেটে পরিচিত হবার পর। তবে এখনও মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে চড়ার সময় শেখা জীবনদর্শনটা ভোলেননি“ভিড়কে অন্দর হি আপনে জাগা বনা লেনে কা হ্যায়, মওকা আয়েগা।” ওয়ান ডে ক্রিকেটেও অল্প সুযোগেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এখন অপেক্ষায় নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার।
দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ বিদায় নেওয়ার পর শূন্যস্থান ভরাট করতে শুরু করেছেন চেতেশ্বর পূজারা। সচিনও শেষ বেলায়, বলে দিচ্ছে তাঁর ফর্ম। টিম ইন্ডিয়া খুঁজছে এমন একজনকে, যিনি ব্যাট হাতে আগামী দিনে দলের হাল ধরতে পারবেন। ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা অজিঙ্কে রাহানে কিন্তু পূজারার পাশাপাশি সেই চাহিদা মেটাতে পারেন।
ভাল লাগে: আমির খানের সিনেমা দেখতে
প্রিয় সিনেমা: দিল চাহতা হ্যায় ও থ্রি ইডিয়টস
প্রিয় গায়ক: সোনু নিগম
প্রথম গাড়ি: ওয়াগন-আর
এখন চালান: হন্ডা সিটি
প্রিয় ক্রিকেট শট: স্ট্রেট ড্রাইভ ও কভার ড্রাইভ
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই শতরান করা রাহানে ২০০৭ থেকে ২০১১ চার বছর ওপেনার হিসাবে খেলেছেন মুম্বইয়ের হয়ে। সহবাগ-গম্ভীর নিয়মিত ভারতীয় দলের হয়ে খেলায় যখন সুযোগ আসছিল না, তখন জাতীয় নির্বাচকদের কয়েকজন তাঁকে পরামর্শ দেন মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে। সেই থেকে তিন নম্বরে ব্যাট করছেন তিনি। শেষ খেলা রঞ্জি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রান করেছেন ১২৯, দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৪। ম্যাচের পরেই ভিডিও অ্যানালিস্টের কাছে জেনে নিয়েছেন কোথায় ভুল হল? কেন দু’টো ইনিংসেই শতরান হল না? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া রাহানে এরকমই। চেতেশ্বর পূজারার মতোই। যে বড় রানেও সন্তুষ্ট নয়। যে বোলারদের বারবার মনে করিয়ে দেবে শুধু পরিকল্পনা করে বল করলেই উইকেট পাবে না, খরচা আছে।
আইপিএলের দৌলতে ওয়াগন আর-এর বদলে কয়েক দিন আগেই অজিঙ্কের গ্যারাজে ঢুকেছে হন্ডা সিটি। তবে আর দামি গাড়ির দিকে এখনই হাত বাড়াতে চান না। ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করেছেন টেস্টে বড় সাফল্য না পেলে এসবের দিকে নজর দেবেন না ‘পূজারা টু’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.