ক্ষোভ প্রশমিত হল না শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলেরই অপর এক গোষ্ঠীর কর্মীদের হাতে তিনি নিগৃহীত হয়েছিলেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ বা দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে শোভনদেববাবু চটে আছেন। তবু দলের এক জন শৃঙ্খলাপরায়ণ নেতা হিসাবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ মেনে তাঁর অনুগামীদের শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করতে দেননি শোভনদেববাবু। কিন্তু তাঁর ক্ষোভ চরমে ওঠে এ দিন সন্ধ্যায়। শোভনদেববাবুকে আলোচনার জন্য তৃণমূল ভবনে বৈঠকে ডেকেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মাঝপথেই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বৈঠক হবে না। এরপরেই ঘনিষ্ঠদের কাছে ক্ষোভ গোপন না করে শোভনদেববাবু জানিয়ে দেন, এর শেষ দেখে তিনি ছাড়বেন। তবে প্রকাশ্যে তিনি বলেন, “আমি অপেক্ষা করব। দলের কাছে সুবিচার পাব নিশ্চিত।”
সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য কার্যত দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধে যখন রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে নিয়েছেন, তখন কলকাতায় শোভনদেববাবুকে মিছিল না করার জন্য দলনেত্রী ফোনে আগুন নেভার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল। শোভনদেববাবু নিগৃহীত হওয়ার প্রতিবাদে এ দিন তাঁর অনুগামী শ্রমিক কর্মীরা ধর্মতলায় সভা ও মিছিল করবেন বলে কর্মসূচি নিয়েছিলেন। শোভনদেববাবু বলেন, “নেত্রী আমাকে ফোন করে মিছিল না করার জন্য নির্দেশ দেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলেদের মিছিল করতে বারণ করে দিই।” মিছিল হয়নি। তবে তাঁর অনুগামী কর্মী সংগঠনগুলির সদস্যরা ধর্মতলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন। সেই কর্মীদের সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “শোভনদার গায়ে হাত দেওয়া মানে দলের গায়ে হাত পড়া। সুবিচার না হলে আন্দোলন আবারও শুরু হবে।” |
এর পরেই তৃণমূল ভবন থেকে শোভনদেববাবুর কাছে ফোন আসে বিকেল পাঁচটায় তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চান মুকুল-পার্থ। বৈঠক যাওয়ার জন্য তিনি বিধানসভা থেকে তৃণমূল ভবনে যাওয়ার জন্য রওনাও হন।
মাঝপথে তাঁকে জানানো হয়, মুকুলবাবুর সিঙ্গুর থেকে ফিরতে দেরি হবে, তাই বৈঠক বিকেল পাঁচটার বদলে সন্ধ্যা ৬টায় হবে। শোভনদেববাবু জানিয়েছেন, বৈঠক এক ঘন্টা পিছিয়ে যাওয়ায় একটি কাজ সেরে তিনি যখন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তৃণমূল ভবনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন, তখনই পার্থবাবু তাঁকে জানিয়ে দেন বৈঠক হবে না। ক্ষুব্ধ শোভনদেববাবু মাঝপথ থেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান।
কেন বৈঠক হল না তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে নানা জল্পনা শুরু হয়। নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, নিষেধ করার পরেও শোভনদেববাবুর অনুগামীরা মিছিল করেছেন বলে দলীয় নেতৃত্বের কাছে ভুল খবর পৌঁছানোতেই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। পার্থবাবু ও মুকুলবাবু অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ে ভবনেই ছিলেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের কোনও বৈঠক হওয়ার কথাই ছিল না। |