|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
আর কারও ভাগ্যেই শিকে ছেঁড়েনি |
উনিশ শতকের শেষ পর্ব থেকে বাংলার ইতিহাস চর্চায় যে বিপুল উদ্যোগ নজরে পড়ে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বাঙালির নিজস্ব সত্তা অনুসন্ধানের সঙ্গে তা ছিল ওতপ্রোত। এই ইতিহাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি বিদেশির লেখা ইতিহাসের ভুলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা, এমনকী সেই ইতিহাস অনুসরণে সৃষ্ট সাহিত্য বা শিল্প (তা সে লেখক বা শিল্পী যত বিখ্যাতই হোন না কেন) সম্পর্কেও নির্দ্বিধায় তীব্র সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। বাঙালির ‘আধুনিক’ ইতিহাসচর্চার এই অন্যতম পুরোধাপুরুষের জন্মের দেড়শো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর সামগ্রিক রচনা পাঠকের হাতে পৌঁছয়নি। সাম্প্রতিক কয়েকটি সংকলনে তাঁর কিছু লেখা এবং চিঠিপত্র অবশ্য সংকলিত হয়েছে। এ বার রাজনারায়ণ পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল রচনাসংগ্রহ/ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (পারুল, ৩০০.০০)। দুর্লভ পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা বিপুল সংখ্যক প্রবন্ধের মধ্যে ৪২টি বেছে নিয়েছেন সম্পাদক, সঙ্গে দিয়েছেন একটি অভিভাষণ ও রবীন্দ্রনাথ এবং অর্দ্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা কয়েকটি চিঠি। প্রবন্ধগুলিকে ভাগ করা হয়েছে বঙ্গভূমি ও বাঙালি, বৌদ্ধধর্ম, বঙ্গে তুর্কি আক্রমণ, উত্তরবঙ্গের পুরাকীর্তি, তাম্রশাসন, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা, অষ্টাদশ শতকের বাংলা, বস্ত্রশিল্প, জীবনকথা ও স্মৃতিচারণ শীর্ষকে। আর অভিভাষণের বিষয় ‘পাল সাম্রাজ্যের অধঃপতন’। অনেক লেখাই এখনও বাকি থেকে গেল, অন্যান্য সংকলনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় বেশ কিছু প্রবন্ধ, বিশেষত চিঠিগুলি পুনরাবৃত্ত হয়েছে। তবু এতগুলি মূল্যবান প্রবন্ধ একত্র হল, সেটাই বা কম কী? অক্ষয়কুমারের সমকালীন বা বিশ শতকের গোড়ার দিকের ইতিহাস-অনুসন্ধিৎসুদের মধ্যে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকার বাদে আর বিশেষ কারও ভাগ্যেই তো এমন শিকে ছেঁড়েনি। ভাবা যায়, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, রমাপ্রসাদ চন্দ, কি রমেশচন্দ্র মজুমদারের অজস্র বাংলা লেখার কোনও ছোটখাট সংকলন ছাপার কথাও আজ পর্যন্ত কোনও প্রকাশকের মনে হয়নি! অথচ বাঙালির ইতিহাসবোধ, ইতিহাস দর্শন তো একদিন এই সব লেখার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল, বাঙালি খুঁজে পেয়েছিল তার হারিয়ে যাওয়া অতীতকে। বাঙালি যে আত্মবিস্মৃত জাতি, তাতে আর সন্দেহ কি। |
|
|
|
|
|