|
|
|
|
হলদিয়ায় ঘেরাও উপপুরপ্রধান |
বোর্ড মিটিং ঘিরে হাতাহাতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
বোর্ড মিটিং ঘিরে সমস্যা চলছেই হলদিয়া পুরসভায়।
শুক্রবার বামফ্রন্ট পরিচালিত এই পুরসভার নবগঠিত বোর্ডের চতুর্থ উন্নয়নমূলক বৈঠক ছিল। কিন্তু বৈঠকের আগেই তৃতীয় বোর্ড মিটিংকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণার আর্জি জানান বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। সিপিএমের পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠ বিরোধীদের দাবি না মেনে নেওয়ায় বোর্ড মিটিংয়ের সমাপ্তি ঘটল কার্যত হাতাহাতিতে। ছিঁড়ে ফেলা হল বৈঠকের কার্যধারা বিবরণের নথি। দাবিতে অনড় থেকে উপপুরপ্রধানকেও ঘেরাও করল বিরোধীরা। তবে পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠ বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে নিয়ম মেনেই বোর্ড মিটিং হয়েছে। যে ভাবে কাগজপত্র ছিঁড়ে হাতাহাতি হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত। উন্নয়নে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারের মিটিংয়ের আগেই পুরপ্রধানের ঘরে ঢুকে বিগত বোর্ড মিটিংয়ের বিরোধিতা করেন বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ-সহ তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা। তাঁদের অভিযোগ, তৃতীয় অর্থাৎ ১৬ অক্টোবরের বোর্ড মিটিংয়ে তাঁরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি। অথচ তাঁদের মতামত লিপিবদ্ধ হয়েছে বৈঠকের সিদ্ধান্তপত্রে। ফলে ওই বৈঠককে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার দাবি জানান তাঁরা। পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠ অবশ্য সাফ জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে বৈঠক হওয়ায় এমন করা সম্ভব নয়। নির্ধারিত সময়ে বোর্ড মিটিংয়ে চলেও যান তিনি। মিনিট পাঁচেক বৈঠক চলার পর সভাগৃহে হাজির হন তৃণমূলের ১১ জনের মধ্যে ১০ কাউন্সিলর। বৈঠকে পেশ হওয়া মতামতে সকলের সম্মতি রয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়। সিপিএমের ১৫ জন কাউন্সিলরের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় চতুর্থ বোর্ড মিটিংও শেষ করেন তমালিকাদেবী। কিন্তু এরপরেও দাবিতে অনড় থেকে চতুর্থ বোর্ড মিটিংও অবৈধ বলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। পুরপ্রধান, এক্সিকিউটিভ অফিসার অশোককুমার মিত্র, উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিকের হাতে থাকা কার্যধারা বিবরণীর নথি তাঁরা ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের হাতাহাতিও বাধে। পুরপ্রধান-সহ সিপিএম কাউন্সিলরেরা সভাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী ১০ কাউন্সিলর। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখা হয় উপপুরপ্রধানকে।
তবে বৈঠক যে সুষ্ঠু ভাবে হবে না তা আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। ২৬ জুন শপথ গ্রহণের দিনের প্রথম বোর্ড মিটিংয়েই বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছিল তৃণমূল। গত ২৩ জুলাই প্রথম উন্নয়নমূলক মিটিংয়ের ডাক দেওয়া হলেও বিরোধী কাউন্সিলরদের বিক্ষোভে ‘ভেস্তে’ যায় ওই বৈঠক। ৫ সেপ্টেম্বর ফের না হওয়া ওই বোর্ড মিটিং করার ডাক দেন পুরকর্তৃপক্ষ। পুরবিধি অনুযায়ী এটা ছিল উন্নয়নমূলক দ্বিতীয় বোর্ড মিটিং। সে দিনও পুরবোর্ডের ওপর চাপ বাড়াতে পুরসভার গেটের বাইরে ‘বেহাল’ নিকাশির সমস্যা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থিত পুর-নাগরিকদের একাংশ। প্রথমে পিছু হঠলেও শেষ মুহূর্তে অবশ্য বিরোধী কাউন্সিলর ছাড়াই বাম কাউন্সিলররা বোর্ড মিটিং করেন। ১৬ অক্টোবর তৃতীয় উন্নয়নমূলক বোর্ড মিটিংয়ের ডাক দেওয়া হয়। শুক্রবার সেটাই অবৈধ ঘোষণার দাবি করেন বিরোধীরা। তবে এ দিনের বৈঠকে উল্লেখযোগ্য কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তৃতীয় উন্নয়নী বৈঠকে যে ওয়ার্ড পিছু ১০-২০ লক্ষ টাকা পথঘাটের উন্নয়নে ব্যায়ের ‘স্কিম’ তৈরী হয় তার বিল পাশের জন্য খসড়া চাওয়া হয় কাউন্সিলরদের কাছে। উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিক বলেন, “আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের ১৫ ও ১৬ নম্বরের ২ কাউন্সিলরও খসড়া জমা দিয়েছেন। তবে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া যায়নি। বোর্ড মিটিং ফলপ্রসূ হয়েছে।” যদিও পুরসভার বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডলের দাবি, “আমরা উন্নয়ন বিরোধী নই। গা-জোয়ারি করে প্রত্যেক বার বোর্ড মিটিং হচ্ছে। আমাদের কাউন্সিলরদের মারধর করা হয়েছে। আমরা দাবি থেকে সরছি না। আমাদের দু’জন কাউন্সিলর ভুলবশত ওই খসড়া জমা দিয়েছেন।” |
|
|
|
|
|