দক্ষিণ কলকাতা
শুধুই পরিকল্পনা
বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি
খন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তখন পুরসভার নথিভুক্ত জলাশয়ই হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়। জমছে জঞ্জালের স্তূপ। কারণ, দীর্ঘ দিন জলাশয়টির সংস্কারে কোনও ব্যবস্থা করেননি পুরকর্তৃপক্ষ। এমনই অভিযোগ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং ইএম বাইপাস সংযোগকারী রাস্তার পাশে সুইটল্যান্ড এলাকার বাসিন্দাদের। চাঁদা তুলে বাসিন্দারাই সংস্কারের কিছু কাজ করেছেন। তাঁদের দাবি, জলাশয়টির দ্রুত সংস্কার করা হোক।
সুইটল্যান্ড এলাকা সংলগ্ন এই জলাশয়টির আয়তন প্রায় সাড়ে চার বিঘা। দক্ষিণ ও পূর্ব ব্যাঙ্ক প্লট এবং উত্তর শহিদ নগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। অনেকেই এই জলাশয়টির জল শোধন করে পান করতেন। মরসুমি পাখির ভিড় লেগে থাকত। অভিযোগ, পুরকতৃর্পক্ষের উদাসীনতায় এখন এই হাল। পুরসভার ১০ এবং ১১ নম্বর বরোর মাঝে রয়েছে এই জলাশয়। এর এক দিকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড, অন্য দিকে ১০৪ নম্বর ওয়ার্ড।
বাসিন্দারা জানান, জলাশয়টি আগাছা আর কচুরিপানায় ভরা। চার দিকে আবর্জনা পড়ে আছে। জলও দূষিত হয়ে গিয়েছে। এই জলাশয়টি মশার আঁতুড়। মশার উপদ্রবে টেকা দায়। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে জলাশয়টির সংস্কার করা হোক।
পাঁচ তলা একটি ফাঁকা বাড়ি। আর সেই বাড়িকে কেন্দ্র করে বছরের পর বছর পরিকল্পনার মিছিল। অথচ, আজ পর্যন্ত একটি পরিকল্পনাও বাস্তবের মুখ দেখল না!
ঠিক এমনটাই ঘটেছে কালীঘাটে। হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নব্বুইয়ের দশকের মাঝামাঝি কালীঘাট মন্দিরের কাছে কলকাতা পুরসভা একটি পাঁচ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছিল। হকারেরা সে বাড়িতে যেতে না চাওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তী কালে এই খালি বাড়িতে ম্যালেরিয়া হাসপাতাল করার প্রকল্প নেয় পুরসভা। কিন্তু আদালতের নির্দেশে সেই প্রকল্পও অধরা থেকে যায়। তিন বছর আগে পুরকর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, এই বাড়িরই একটি অংশে শহরের খাবারের নমুনা পরীক্ষা করার আধুনিক ল্যাবরেটরি তৈরি করা হবে। সেই প্রকল্প ঘিরেও সংশয় তৈরি হওয়ায় তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়।
নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখানে কয়েকটি শয্যাবিশিষ্ট একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্র তৈরি করা হবে। সেটিও এখনও হয়নি। এই অবস্থায় বাড়ির ঠিক সামনে এখন আস্তানা গেড়েছে ভবঘুরেরা। বাড়িটির আশপাশেও রয়েছে আবর্জনার স্তূপ।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “এই ফাঁকা বাড়িটিতে রোগনির্ণয় কেন্দ্র ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের সাময়িক ভাবে স্থানান্তরিত করার জন্য বাড়িটির একাংশ ব্যবহার করা হবে। এই ব্যাপারে পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
তবে এখনও তা গড়ে উঠল না কেন?
অতীনবাবু জানান, ক্ষমতায় আসার পরেই স্বাস্থ্য দফতর এই বাড়িটিতে উন্নতমানের রোগনির্ণয় কেন্দ্র (ডায়াগনস্টিক) কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য কোনও রকম বাজেট বরাদ্দ না থাকায় তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। এই মুহূর্তে এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। পুরকর্তৃপক্ষকেও এই প্রকল্পের নকশা জমা দেওয়া হয়েছে বলে মেয়র পারিষদ জানান। দোতলা এবং তিন তলা মিলিয়ে এখানে শয্যা ছাড়াও পুরসভা থেকে এক্সরে বা এমআরআই মেশিন বসানো হবে।
ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রেই বা অসুবিধা কোথায় ছিল?
পুরসভার মেয়র পারিষদ (খাদ্য ও ভেজাল) পার্থপ্রতিম হাজারি বলেন, “এই বাড়িতে জায়গার অভাব নেই ঠিকই। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় পুরভবনের পাশেই এই ল্যাবরেটরি রয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে এখানে পরীক্ষা করা সহজসাধ্য। এখানে ল্যাবরেটরির কাজকর্ম পুরসভার নজরদারিতে থাকে। এখান থেকে তা সরানো হলে অসুবিধা হতে পারে। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়।”
বাড়িটিতে ঢোকার মুখেই বসে রয়েছে ভবঘুরের দল। আশপাশে ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা। এক তলার মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জঞ্জাল। বাড়ির বেসমেন্টে মাঝেমধ্যে জল জমে যায়। অভিযোগ, ভেতরের এই জমা জল মশার আঁতুড়। পাম্প করে সেই জমা জল বার করতে হয়। জানলা এবং গ্রিলে লাগানো ফাইবার গ্লাসও চুরি হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাড়িটিও ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে। গত বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের সময়ে এই বাড়িটি রং করানোও হয়। পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতর এই বাড়িটি নির্মাণ করে। বাড়ি তৈরিতে খরচ হয় এক কোটি টাকার বেশি।
স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের মঞ্জুশ্রী মজুমদার বলেন, “এই বাড়িটি অনেক দিন ধরেই এখানে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। প্রথম দিকে এই বাড়ির এক তলাতেই ভবঘুরেরা বসে থাকত। পরে, পুরসভা থেকে এই বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুরক্ষাকর্মী রাখারও ব্যবস্থা করতে বলা হয়। সেখানে এখন রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে। বাড়িটিতে পুরসভা স্বাস্থ্যকেন্দ্র করলে এলাকার সুবিধা হয়। বাড়িটিও কাজে আসে। বাড়িটির সঠিক ব্যবহারের জন্য বরোতে আলোচনাও করা হয়েছে।”
পুর-স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই প্রকল্প করতে গেলে কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন। পুরসভার ৮ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়িটি যাতে কোনও পরিষেবামূলক কাজে ব্যবহার হয় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলব।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাড়িটি স্রেফ নষ্ট হচ্ছে। এখানে পুরসভার রোগনির্ণয় কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে প্রস্তাব ইতিমধ্যেই এসেছে। সেটিকেই দ্রুত বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি।”
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.