|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
সঙ্কটে বেলেঘাটা |
তৃষ্ণা প্রবল |
কাজল গুপ্ত |
মেহের আলির বড় তাড়া। সময় নির্দিষ্ট। তার মধ্যেই কয়েক বালতি জল ভরে ছ’জনের সংসারের সারা দিনের তৃষ্ণা মেটাতে হবে। জিজ্ঞাসা করলে শান্ত স্বরেই বলেন, ‘‘কী করব? কাকে বলব? সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছি পুরসভার জলের গাড়ি ভরসা।’’
শুধু মেহের আলি নন, এ সমস্যায় ভোগেন বেলেঘাটা-সহ ৩ নম্বর বরোর বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন এই অঞ্চলে পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব। নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলই পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, তার পরে যে-কে-সেই। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা সজাগ রয়েছেন। সমস্যা রয়েছে শুধু বস্তি অঞ্চলেই। ওই অঞ্চলে দু’বেলা পুরসভার জলের গাড়ি যায়। |
|
অভিযোগ, শুধু বেলেঘাটা মেন রোড, খালপাড় এলাকায় নানা বস্তিই নয়, ৩ নম্বর বরোর ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গাতেই পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের লেবুগোলা বস্তি, চাউলপট্টি, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালীতারা বোস লেন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬৫ নবাববাগান বস্তি, ১৬৬ ভাটিখানা, ১৬৮ পচাবাগান-সহ একাধিক এলাকায় পানীয় জলের অভাব রয়েছে।
৩ নম্বর বরো সূত্রে খবর, বরো এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। প্রায় এক লক্ষের এই সমস্যা। লেবুগোলা বস্তিতে সকাল ৮টায় পুরসভার জলের গাড়ি আসে। কিন্তু ভোর ৬টা থেকেই শ’চারেক বালতির লাইন পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ভোলা মণ্ডলের কথায়: ‘‘দু’বেলা জলের গাড়ি আসে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটে না।’’ বস্তিবাসী শান্তি দাসের অভিযোগ, ‘‘বস্তিতে থাকি বলে কি আমাদের পরিস্রুত জল পাওয়ার অধিকার নেই? আমরা কী করব?’’ |
|
৩ নম্বর বরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দারের দাবি, ‘‘একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হলেই জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়।’’ এ কথা মানছেন বর্তমান বরো চেয়ারম্যান সিপিএমের রাজীব বিশ্বাসও। অভিযোগ উঠেছে, স্রেফ জমি চিহ্নিতকরণের অভাবেই সে পরিকল্পনা আটকে রয়েছে।
রাজীববাবুর অভিযোগ, “টালা-পলতা থেকে বাগমারি জলাধার হয়ে বরোর ৯টি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক এলাকায় জলের চাপ কম থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সময় বেলেঘাটা এলাকায় আরও একটি জলাধার তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। বর্তমান বোর্ডের কাছে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য বার বার দ্বারস্থ হলেও পুরকর্তারা উদাসীন বলেই তাঁর অভিযোগ। |
|
যদিও প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান তৃণমূলের স্বপনবাবু বলেন, ‘‘সমস্যা গুরুতর নয়। কয়েকটি এলাকায় জলসমস্যা রয়েছে। বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরিতে আমিই উদ্যোগী হয়েছিলাম।’’ পাল্টা অভিযোগে করে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জমি রয়েছে। স্রেফ বর্তমান বোর্ডের উদাসীনতায় তা কার্যকরী হচ্ছে না। দু’বেলা জলের গাড়ি পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।’’
কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এর আগে পুরকর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, টালা-পলতার কাজ শেষ হলে সমস্যার সুরাহা হবে। জল প্রকল্পের কাজ শেষ। তা হলেও কেন গড়িমসি করা হচ্ছে?’’
অভিযোগ অস্বীকার করে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেলেঘাটা এলাকায় তিনটি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। দু’বেলা জলের গাড়ি পাঠিয়ে আপাতত সমাধান করার হচ্ছে। একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছে।’’ |
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|