|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
সংস্কারের দাবি |
অবহেলার জলাশয় |
দেবাশিস দাস |
যখন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তখন পুরসভার নথিভুক্ত জলাশয়ই হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়। জমছে জঞ্জালের স্তূপ। কারণ, দীর্ঘ দিন জলাশয়টির সংস্কারে কোনও ব্যবস্থা করেননি পুরকর্তৃপক্ষ। এমনই অভিযোগ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং ইএম বাইপাস সংযোগকারী রাস্তার পাশে সুইটল্যান্ড এলাকার বাসিন্দাদের। চাঁদা তুলে বাসিন্দারাই সংস্কারের কিছু কাজ করেছেন। তাঁদের দাবি, জলাশয়টির দ্রুত সংস্কার করা হোক।
সুইটল্যান্ড এলাকা সংলগ্ন এই জলাশয়টির আয়তন প্রায় সাড়ে চার বিঘা। দক্ষিণ ও পূর্ব ব্যাঙ্ক প্লট এবং উত্তর শহিদ নগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। অনেকেই এই জলাশয়টির জল শোধন করে পান করতেন। মরসুমি পাখির ভিড় লেগে থাকত। অভিযোগ, পুরকতৃর্পক্ষের উদাসীনতায় এখন এই হাল। পুরসভার ১০ এবং ১১ নম্বর বরোর মাঝে রয়েছে এই জলাশয়। এর এক দিকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড, অন্য দিকে ১০৪ নম্বর ওয়ার্ড।
বাসিন্দারা জানান, জলাশয়টি আগাছা আর কচুরিপানায় ভরা। চার দিকে আবর্জনা পড়ে আছে। জলও দূষিত হয়ে গিয়েছে। এই জলাশয়টি মশার আঁতুড়। মশার উপদ্রবে টেকা দায়। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে জলাশয়টির সংস্কার করা হোক। |
|
জলাশয় সংস্কারের জন্য এলাকার মানুষ ‘জনস্বাস্থ্য, জলাশয় সংরক্ষণ ও সংস্কার মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনও করেছেন।
এই সংগঠনের সভাপতি অমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জলাশয়ের চার পাশ জঙ্গল এবং আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে যাতায়াত করা যায় না। সংস্কার হলে এলাকার পরিবেশ বদলে যাবে।” স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মিত্রের কথায়: ‘‘জলাশয়টির জন্য কয়েক বার বড় অগ্নিকাণ্ড থেকে এলাকা রক্ষা পেয়েছে। চার পাশে বহুতল। এই জলাশয়টি খুব জরুরি। আমরা চাঁদা তুলে সামান্য কাজ করেছি। পুরসভা অবিলম্বে জলাশয়টির আমূল
সংস্কার করুক।”
কেন দীর্ঘ দিন জলাশয়টির সংস্কার হল না? |
|
৯২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব বলেন, “জলাশয়টি আমার ওয়ার্ডে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এই জলাশয়টি পুরসভার নথিভুক্ত জলাশয়। আইনি কোনও বাধাও নেই। সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদকে জলাশয়টি দেখাব। এটি সংস্কারের চেষ্টা করব।” ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তপন দাশগুপ্ত বলেন, “জলাশয়টির বিষয়ে সবিস্তার খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। এ ক্ষেত্রে বিক্রমগড় ঝিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
পাশাপাশি, ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান এবং ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, “ওই জলাশয় ঝিল হিসেবে পুর এলাকার মানচিত্রে নথিভুক্ত। কোনও আইনি বাধা নেই। ঝিলটির অবস্থা দেখেও এসেছি। আমরা ঝিলটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এত বড় জলাশয় সংস্কার করার ক্ষেত্রে কিছু আর্থিক সমস্যা রয়েছে। ” |
|
কিন্তু, আইনি বাধা যেখানে নেই, সেখানে এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
বাসিন্দাদের দাবি, ঝিলের পাড় শালবল্লার খুঁটি দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হোক। সংস্কারের সময় যেন পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত না হয়। পরিবেশকর্মী মোহিত রায় বলেন, “আগে ওখানে একটি বড় জলাশয় ছিল। তার কিছুটা অংশ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। চার পাশে বসতি স্থাপনের জন্য ঝিল থেকে মাটি তুলে এলাকা উঁচু করা হয়। কলকাতার মানচিত্রে এই জলাশয়টি ঝিল হিসেবে রয়েছে। জলাশয়টির আশু সংস্কার জরুরি।’’ কলকাতা পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘এই বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ নিয়ে জলাশয়টি বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেব।” |
ছবি: সুব্রত রায় |
|
|
|
|
|